ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পাগলাকানাই-গান্না আঞ্চলিক সড়কের বালিয়াখাল এলাকার রাস্তার পাশের ঝুপড়ি ঘরে থাকেন বৃদ্ধ পাঁচু মিয়া। নিজের কষ্টের টাকা দিয়ে সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসে। আশা ছিল বৃদ্ধ বয়সে যে কটা দিন বাঁচবেন অন্তত সে কটা দিন শান্তিতে কাটাবেন। তবে সেই কপাল হয়নি পাঁচু মিয়ার। ছেলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে থাকলেও ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ বাবার ঠিকানা হয়েছে এখন রাস্তার পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে। পলিথিন আর ভাঙাচোরা টিনের ছাউনি দিয়ে মোড়ানো ছোট্ট ঝুপড়ি ঘরে থাকেন বৃদ্ধ পাঁচু মিয়া। তৈরি করেন তাল পাতা দিয়ে হাতপাখা। একটু ভালো থাকবার আশায় যেখানে সহায় সম্বল এর অনেকটুকুই বিক্রি করে সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন বিদেশ অথচ সেই বাবারই ভাগ্যে এখন সড়কের পাশের একটি ঝুপড়ি ঘর। প্রায় ৩০ বছর ধরে রাস্তার পাসেই বসবাস করছে ৭৫ বছর বয়সী পাঁচু মিয়া। ঝিনাইদহের সদর উপজেলার পাগলাকানাই-গান্না আঞ্চলিক সড়কের বালিয়াখাল এলাকার রাস্তার পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরেই থাকেন তিনি। সেখানে তালের পাতা দিয়ে তৈরি করা হাত পাখা বিক্রি করে এবং নরসুন্দরের কাজ করে নিজের ভরণপোষণ চালান পাঁচু মিয়া। তার ঘরে রয়েছে চুলাসহ খাবার রান্না করার বিভিন্ন সামগ্রী। এমন কি বাজারের টিউবওয়েল থেকে পানি এনে নিজের প্রয়োজন মেটান তিনি।
স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রামে বাড়ি পাঁচু মিয়ার। নব্বইয়ের দশকে বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বালিয়াখাল বাজারে সেলুনের দোকান দিয়েছিলেন তিনি। সেই দোকান থেকে যা আয় হতো তা দিয়েই চলাতেন সংসার। ১০ বছর আগে পাঁচু মিয়ার মেয়ে নিমবিয়া মারা যান। পাঁচ বছর আগে মারা যান স্ত্রী সরভানু বেগম। এরই মধ্যে কষ্টের টাকায় ছেলে মিন্টু মিয়াকে মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। সেখানে ৭/৮ বছর থাকার পর দেশে চলে আসেন মিন্টু মিয়া। পরে মিন্টু মিয়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে চলে যান। এরপর থেকে মিন্টু মিয়ার সঙ্গে তার বাবা পাঁচু মিয়ার কোনো যোগাযোগ নেই।
পাঁচু মিয়ার প্রতিবেশী দুর্গাপুর গ্রামের মিলন হোসেন বলেন,‘শারীরিকভাবে অসুস্থ পাঁচু মিয়া। তিনি শত কষ্টেও কারো কাছে হাত পাতেন না। এই বয়সেও দিব্যি হাত পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। নিজেই রান্না করে খাবার খান। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর এই ঝুপড়ি ঘরেই রাত কাটে তার। গ্রামের বাড়িতেও তেমন একটা যান না তিনি।’
শহিদুল ইসলাম নামে অপর প্রতিবেশী বলেন,‘পাঁচু মিয়ার এক ছেলে দুবাই থাকে। তার মেয়েটা মারা গেছে। মাঝে মধ্যে স্ত্রীর কবর জিয়ারত করতে আসলে আমার সঙ্গে তার কথা হয়। পাঁচু মিয়া বলে, তার কোনো সুখ-শান্তি নেই। ছেলে ও বৌমা তার খোঁজ খবর নেয় না।’
বৃদ্ধ পাঁচু মিয়া বলেন, আমি দির্ঘ ৩০ বছর আগে থেকে বালিয়াখাল বাজারে হাত পাখা বিক্রি করি ও নরসুন্দরের কাজ করি। এই কাজ করে যা আয় করেছিলাম সেই টাকা থেকে গুছিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠাই। নিজের কাজ এখনো নিজেই করি।
তিনি আরো বলেন, ছেলে ও ছেলের বৌ এখন আর আমার কোন খোঁজ খবর নেয় না। তাইতো মনের কষ্টে বাড়িতেই যাই না। নিজে যা আয় করি তা দিয়েই চলি। ছেলে খোঁজ না নিলেও বিন্দুমাত্র আফসোস বা অভিযোগ কিছুই নেই। সবকিছু থেকেও যেনো কিছুই নেই আমার। এখন আমি এই বৃদ্ধ বয়সে নিজের সুখ শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) সোহাগ রানা বলেন, পাঁচু মিয়া একজন ভালো মানুষ। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর লোকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। ছেলে দুবাই থাকে। ছেলে ও বৌমা খোঁজ নেয় না পাঁচু মিয়ার। বালিয়াখাল বাজারের একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকেন তিনি। বৃদ্ধ এই বয়সে লোকটার কষ্ট দেখে খুবই খারাপ লাগে। বাজারে যে যা পারে তাই দিয়ে পাঁচু মিয়াকে সহযোগিতা করে।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজিয়া আক্তার চৌধুরী জানান, বিষয়টি তিনি অবগত নন। খোঁজ খবর নিয়ে ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়াবেন বলেও জানান তিনি।
বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ