ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে এক রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ৪৬ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে ১৬ জনকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও ২৬ জনকে হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যান।
রোববার (১২ ডিসেম্বর) সকালে উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের শ্রীফলতলা গ্রামের লস্কার পাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।
নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মাষ্টার ও রেজাউলের সমর্থকদের মধ্যে আহতরা হলেন- শ্রীফলতলা গ্রামের আইরণ নেছা, ফাহিমা খাতুন, খোদেজা বেগম, আইয়ূব হোসন, তাজুল ইসলাম, তারেক, মিল্টন, জালাল হোসেন, তক্কেল হোসেন, মনিরুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল, জামাল মুন্তাজ, মেহেদী হাসান, দাদুল মিয়া, বিশারত আলী, আলামিন ও আব্দুল আজিজ।
সাইদুল মেম্বর ও বশির গ্রুপের আহতরা হলেন- নজরুল ইসলাম, শিপুল, আব্দুল লতিফ, খায়রুল ইসলাম, আবু সাইদ, সেলিম (১), মসলেম উদ্দীন, দিদার হোসেন, সাগর, কামরুল, সেলিম, বেগম খাতুন, শাহিনুল ইসলাম, হাসেম আলীম, জমির উদ্দীন ও নরুল ইসলাম।
পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, আগামী ৫ জানুয়ারী ৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে রঘুনাথপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীফলতলা গ্রামে সাইদুল ইসলাম মেম্বর ও রেজাউল ইসলাম মেম্বর পদে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। দুই মেম্বর নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মাষ্টার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী বশির উদ্দীনের সমর্থক। রোববার সকালে শ্রীফলতলা গ্রামের একটি চায়ের দোকানে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে সাইদুলের সমর্থক জমির লস্করকে মারধর করে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক রেজাউল ও আজিজ লস্কার। এ ঘটনার জের ধরে উভয় পক্ষের লোকজন রামদা, ঢাল, ভেলা, লাঠি সোটা ও ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে গোটা গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৪৬ জন আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ও হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
সাইদুল ইসলাম মেম্বর অভিযোগ করে বলেন, শনিবার সন্ধ্যার দিকে বর্তমান চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান রাসেল ও তার চাচাতো ভাই রওশন আলী নির্বাচনী এক সমাবেশে স্বতন্ত্র প্রার্থী বশিরের লোকজনকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গনধোলায় দেবার উস্কানী দিয়ে যান। এরপরই তাদের সমর্থক আজিজ লস্কার চায়ের দোকানে জামিরকে মারধর করেন।
এদিকে উস্কানীর বিষয়টি অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মাষ্টারের ছেলে বর্তমান চেয়ারম্যান রাকিবুল হাসান রাসেল অভিযোগ করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী বশিরের লোকজন তার সমর্থকদের মারধর করেন। এ ঘটনার জন্য সাইদুল মেম্বর ও বশির দায়ী বলেও রাসেল জানান।
এদিকে অভিযোগ প্রত্যাখান করে বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বশির উদ্দীন জানান, ২০১৬ সালে ৭ মে নৌকার প্রার্থী মুনছুর আলীর বিরুদ্ধে রাকিবুল হাসান রাসেল ভোট করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে মাদক ব্যবসাসহ এহেন কোন কাজ নেই যা ইউনিয়নে করেননি। টিআর, কাবিটা, এলজিএসপি, এডিবি ও কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা লুটপাট করেছে। বিধবা, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধি ভাতার কার্ড টাকা ছাড়া করেনি। নিজের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বরাদ্দকৃত একাধিক ঘর নিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। যার অভিযোগ হরিণাকুন্ডুর ইউএনও তদন্ত করেছেন। গোটা ইউনিয়নে তিনি ত্রাসের রাজত্ব করে রেখেছেন। ২০১৬ সালে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করা রাকিবুল হাসান রাসেল মনোনয়ন পাবেন না বলে গ্রুপিং লবিং করে তার বৃদ্ধ পিতাকে নৌকার মনোনয়ন এনে দিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়া ওই পরিবারের হাতেই আবার নৌকা প্রতিক তুলে দিয়ে তৃণমূলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে বলে বশির অভিযোগ করেন।
হরিণাকুন্ডু থানার ওসি আব্দুর রহিম মোল্লা জানান, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের মাষ্টার ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি বশির উদ্দীন সমর্থিত দুই মেম্বর প্রার্থীর মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে ও এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার করে।
ওসি জানান, এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনায় থানায় মামলার প্রক্রিয়া চলছে।