ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ডেমরায় চুরি-ডাকাতির ঘটনায় অতিষ্ঠ এলাকাবাসি

শওকত লিংকন, ডেমরা | প্রকাশের সময় : সোমবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:০৩:০০ পূর্বাহ্ন | জাতীয়
 
রাজধানীর ডেমরায় ক্রমেই বাড়ছে বাসা বাড়িতে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। এলাকার মসজিদ, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি থেকে নগদ বিভিন্ন মালামাল, লক্ষ লক্ষ টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, দামি দামি মোবাইল সেট, ল্যাপটপ ও মোটর সাইকেলসহ অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনা ঘটছেই। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এলাকায় অপরাধের বিষয়ে চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন পুলিশ। শুধু তাই নয়,কিছু কিছু চুরির ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ-মামলা করার পরও আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না। এতে চরম নিরাপত্তাহীণতায় রয়েছেন এলাকাবাসি।
সূত্রে জানা যায়, আকিজ গ্রুপে কর্মরত মো: বেলাল হোসেন বসবাস করেন ডেমরার সালামবাগ বায়তুল সালাম জামে মসজিদ সংলগ্ম একটি বাসায়। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দরজা ভেঙ্গে তার বাসার ৩লক্ষ টাকা ও একটি ল্যাপটপ, ২টা চোইন,২টা কানের দোল ও ২টা আংটি চুরি হয়। এবিষয়ে ডেমরা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন তিনি। একইদিন (২৩ সেপ্টেম্বর) ডগাইর কালু ভূইঁয়া রোডে খলিল সাহেবের বাসার ৩তলার ভাড়াটিয়া মো: আলমগীরের বাসার দরজা ভেঙ্গে আলমারিতে থাকা প্রায় লক্ষাধিক টাকাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর ডেমরার ডগাইর এলাকায় ভূইয়া মসজিদের গ্রীল কেটে চোরেরা দানবাক্সে ও আলমারিতে রাখা নগদ ১১ হাজার টাকাসহ গুরুত্বপূর্ন মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে থানায় অবহিত করা হলেও কোন সুরাহা হয়নি। গত ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ডেমরা থানায় একটি চুরির মামলা দায়ের করেন মধ্য হাজীনগর এলাকার ভুক্তভোগী মো. হুমায়ুন কবির (৫১)। ওই ঘটনায় জানা যায় গত ১৫ সেপ্টেম্বর পরিবারসহ কক্সবাজার বেড়াতে যান হুমায়ুন কবির। গত ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধায় তারা বাসায় ফিরে দেখেন ড্র্রয়িং রুমের জানালার গ্রীল কাটা ও ঘর এলোমেলো। আলমারিতে থাকা ২৪ ভরি আট আনা স্বর্ণালঙ্কার যার অনুমান মূল্য ১৯ লক্ষ ৮৩ হাজার টাকা, ১২ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড ও নগদ ১৫ হাজার টাকা নেই। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের কেউ গ্রেফতার হয়নি। এর আগে ১০ সেপ্টেম্বর বাঁশেরপুল এলাকায় নুরু মিয়া সরকার নামে এক ব্যবসায়ীর ভবনের তৃতীয় তলা থেকে একইভাবে ৪৬ ভরি স্বর্ণ যার অনুমান মূল্য ৩৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ও নগদ দেড় লক্ষ টাকা চুরি হয়। এ ঘটনাতেও মামলার পরে কোন আসামি গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। গত ৩ সেপ্টেম্বর সারুলিয়া এলাকার আমিন টাওয়ারের গ্যারেজ থেকে একটি মোটর সাইকেল চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলার পরে মোটর সাইকেল উদ্ধারসহ কোন গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। গত ২৫ আগস্ট মেন্দিপুর এলাকার মিয়াবাড়ী ভবনের গ্যারেজ থেকে দু’টি মোটর সাইকেল (সুজুকি জিক্সার ও ইয়ামাহা আর ওয়ান ফাইব যার মূল্য ৮ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা) চুরি হয়। এ ঘটনায় মামলার পরও মোটর সাইকেল উদ্ধারসহ কোন চোরকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া যায়নি। গত ২৫ জুলাই ডেমরার আমুলিয়া এলাকায় একটি টায়ারের দোকান থেকে প্রায় ৬ লক্ষ টাকার টায়ার চুরি হয়েছে। গত ২০ জুলাই মুসলিম নগর এলাকার বেলায়েত হোসেনের ভবনের গ্যারেজ থেকে দু’টি মোটর সাইকেল চুরি হয়েছে যার মূল্য ৪ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। গত ১৬ মার্চ বামৈল পশ্চিম পাড়া ব্যাংক কলোনী এলাকার মনি আক্তার রিপা নামে এক নারীর বাসাবাড়ীতে নগদ ২ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা ও ৯ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কারসহ দলিল ও জরুরী কাগজপত্র চুরি হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারী কোনাপাড়া একটি মার্কেটে খুশি জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণের দোকান থেকে ৮৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণ ও নগদ ৪ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা চুরি হয়। এছাড়া এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত আটোরিকশা ওইজিবাইক চুরি ও ছিনতাইসহ কয়েকটি ছোট বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে এসব ঘটনায় মামলা হলেও বেশির ভাগ মামলার কোন সুরাহা হয়না।  
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক ভুক্তভোগী জানান, চুরির ঘটনায় আমরা মামলা করার পর তদন্তকারী কর্মকর্তাদের আসামি গ্রেফতার বা মালামাল উদ্ধারের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা শুধু বলেন তদন্ত ও গ্রেফতার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে আমরা মামলার কোন সুরাহা পাইনা। দিনের পর দিন থানার বারান্দায় ঘুরতে থাকি।
এ বিষয়ে ডেমরা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান বলেন, ডেমরা থানা এলাকায় অনাকাঙ্খিত চুরির ঘটনা ঘটলে আমরা দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। এক্ষেত্রে এলাকাবাসীদেরও পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিউনিটি পুলিশিং জোরদারসহ নৈশ প্রহরীর ব্যবস্থা করে এলাকাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু এসব বিষয়ে এলাকাবাসিকে বারবার সচেতন করলেও তারা এসব বিষয়ে চরম উদাসিন। তাছাড়া ২৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ১০ লক্ষাধিক জনবসতিপূর্ন এ থানা এলাকায় প্রশাসনের জনবল অনেক কম থাকায় জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ঐক্যবদ্ধ নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। এ লক্ষে আমরা মোবাইল টিম ও টহল পুলিশের দায়িত্ব জোরদারের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করেছি এলাকায়।