বিবাহ ইসলাম শরীয়ত মোতাবেক অনুযায়ী ফরজ। কিন্তুু আগের মতো সুন্দর সার্বিক পরিস্থিতি নেই বলে জানিয়েছেন ময় মুরুব্বিরা। আগের ছেলে মেয়েরা বিয়ের কথা শুনলেই লজ্জা পেত দূরে দূরে থাকার চেষ্টা করতো মা বাবার ইচ্ছে পূরণের আশায় বিয়েতে রাজি হতো, সুন্দর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় নিয়মকানুন মেনে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করতো। কিন্তুু এখনকার জমানায় পুরোই ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে, যেমন যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে রাস্তায় চলাফেরার ক্ষেত্রফলেও পছন্দের শেষ নেই, ইচ্ছে হলেই কয়েকদিন যাবত মোবাইলে কথা বলে অল্প সময়ের ভিতরে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন দুজনেই, দুজনে হাত ধরে চলে যাচ্ছে কাজী অফিসে না হয় কোর্টে সাক্ষী প্রমাণ ছাড়াও টাকার বিনিময়ে হয়ে যাচ্ছে বিয়ে। পছন্দের ভিতরেও দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে মেয়ের বয়সের তুলনায় ছেলের বয়স অনেকটা কম থাকে তারপরও থেমে নেই প্রেম ভালোবাসা বিয়ে, এই বিয়ে কতটুকু পরিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য ইসলাম শরীয়ত অনুযায়ী তা নিয়ে ভাবছেন বিশ্লেষকরা। আজকাল বিয়ে করতে তেমন সময়ের প্রয়োজন হয় না ঠিক তেমনই বিয়ে বিচ্ছেদ হতেও তেমন সময়ের প্রয়োজন হয় না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অল্প বয়সে পছন্দ করে মা, বাবা, ভাই, বোন পরিবারের কাউকে না জানিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে কিছুদিন বা কয়েক মাসের ব্যবধানে শুরু হয় দুজনের ভিতরে তর্ক বিতর্ক ঝগড়াঝাটি মারামারি সহ বিভিন্ন আঘাতপ্রাপ্ত কাজ, দুজন মিলে চাকরি করেও শান্তিতে সংসার করতে পারেন না পছন্দের বিয়ে করেও। কারণ বিয়ে করার কিছুদিন পর যেকোনো কারণবশত দুজনের মুখ থেকে প্রকাশ হয়ে যায় অতীতের কিছু ঘটে যাওয়া কথা, যেমন ছেলে মেয়ে দুজনেরই আগে দুই একটা করে বিয়ে হয়েছে আগের ঘরের সংসারে সন্তান আছে বলেও উন্মোচন হয়ে যায়। এবার শুরু হয় তাদের ভিতর হট্টগোল, আজকাল দেখা যায় ছেলেরা বউয়ের প্রতি অনেক আকৃষ্ট নিজের মা বাবার থেকেও বেশি প্রাধান্য দেয় শ্বশুর শাশুড়িকে। বিশ্লেষকদের ধারণা এখনকার বিয়ের ৯০% পছন্দের লাভ ম্যারেজ হয়ে থাকে। এই বিয়ের বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫% বিয়ের কাবিনের টাকা আবেগবশত দুজনের ভিতর একজন নির্ধারণ করে। একটা ছেলের বেতন যদি ১০/১২ হাজার টাকা হয়, সেখানে আবেগবশত কাবিনের টাকা ধরা হয় ২ থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত। বিয়ের পরপরই কাবিনের টাকা মাফ করে দিলেও বিবাহ বিচ্ছেদের সময় এই কাবিনের টাকা মেয়ের পক্ষ হয়ে অনেক শক্তিশালী রূপ ধারণ করে। বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে নারী পুরুষ যে কারণগুলোকে দায়ী করে (নারী) যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, স্বামীর সন্দেহ মনোভাব, অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক, মাদকাসক্তি (পুরুষ) বদমেজাজ, সংসারের প্রতি উদাসীনতা, সন্তান না হওয়া, অবাধ্য হওয়া। নারীদের সমস্যাগুলো যৌতুক দাবিতে নির্যাতন: যৌতুক এখন আমাদের সমাজের একটা সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। শতকরা ৯০% মানুষ যৌতুকে বিশ্বাসী। এদের ধারণা যৌতুক ছাড়া বিয়ে যেনো হবেই না। এখন আবার কিছু কিছু মানুষ একটু মর্ডান হয়েছে। তারা যৌতুক চায় না ঠিকই কিন্তুু মেয়েকে ভালো রাখার দায়ভার কৌশলে মেয়ের বাবার ওপরেই চাপিয়ে দেয়। যৌতুক লেনদেন একটি ঘৃণ্য কাজ। স্বামীর সন্দেহ মনোভাব: সন্দেহ একটি মারাত্বক জিনিস। এই সন্দেহের কারণেই অনেক সুখী দাম্পত্য জীবন নষ্ট হয়ে যায়। এ থেকে প্রমাণিত স্ত্রীকে শুধু শুধু সন্দেহ করা যাবে না। আর এই সন্দেহ মুক্ত হলেই দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা, বিশ্বাস বিরাজ করবে। অন্য নারীর সাথে সম্পর্ক: পরকীয়া খুব খারাপ কাজ। পরকীয়ার কারণে হাজার হাজার মানুষ অশান্তিতে ভুগছে। পরকীয়ার কারণে শুধু একটা পরিবারে ধ্বংস তা নয় এর সাথে আরো কয়েকটা পরিবার ঢুকে যায়। পরকীয়ার বিচার সাধারণত আমাদের দেশের আইন আদালতে হয় না। তাই এটা চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়ছে। যার ফলে কেউ এটা সহ্যও করতে পারে না আবার পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে বলতেও পারে না। ফলে পরিবারে একটা অস্বস্থিকর অবস্থা বিরাজ করে। কিন্তুু ইসলাম পরকীয়াকে ঘৃণ্য চোখে দেখে। ইসলামে এর শাস্তিও ভয়ঙ্কর। এখান থেকে স্পষ্ট যে বিবাহীত নারী পুরুষকে পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়া যাবে না। তাই মুসলিম নারী পুরুষের উচিত পরকীয়া থেকে দূরে থাকা। মাদকাসক্ত মানুষ নিজের জন্য, পরীবারের জন্য, সমাজের জন্য একটা বড় অপরাধ যোগ্য। বদমেজাজ মেয়েদের একটা স্বভাবগত সমস্যা অনেক সময় পারিবারিক সামান্য কারণে কিংবা সংসারে অভাব অনটনে কিংবা পুরুষের যেকোনো অক্ষমতার জন্য মেয়েরা বদমেজাজি হয়ে ওঠে। একটা সময় তার ভেতরে ধৈর্যের ছিটেফোঁটাও থাকে না। যার ফলাফল বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। নারী হোক কিংবা পুরুষ হোক অল্পতেই বদমেজাজী হওয়া যাবে না। ধৈর্যধারণ করতে হবে দুজনকেই। তবেই একটি সুখী দাম্পত্য জীবন প্রতিষ্ঠা পাবে। সংসারের প্রতি উদাসীনতা নারীরা সাধারণ সংসারের প্রতি যত্নবান হয়। হাজার বাধা বিপত্তিতেও নিজের সংসার টিকিয়ে রাখতে চায়। এর মধ্যে কিছু ব্যতিক্রমি নারী রয়েছে। যারা সংসারের প্রতি উদাসীন। এই নারীগুলোর বেশিরভাগই দেখা যায় পরকীয়ায় লিপ্ত। পরকীয়ার শাস্তি কতটা ভয়ঙ্কর তা তো আমরা জানিই। তাই প্রতিটি নারীর উচিত পরকীয়া থেকে দূরে থাকা এবং নিজের সংসারের প্রতি যত্নবান হওয়া। তাহলে দাম্পত্য জীবন সুন্দর ও মজবুত হবে। সন্তান না হওয়া বর্তমানে নিঃসন্তান দম্পতীর সংখ্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। এ বিষয়ে পুরোটা একটা কুসংস্কার। তা হলো সন্তান না হলে শুধু মেয়েকেই দোষ দেই। মেয়েদের চিকিৎসা করাই। আর তবুও না হলে তালাক কিন্তুু এ ক্ষেত্রে পুরুষদেরও যেকোনো সমস্যা থাকতে পারে তা অনেকেই মানে না। যার কারণে অনেক সময় এই ব্যাপার না বুঝেই দাম্পত্য জীবনে কলহ বেড়েই চলছে। মেডিকেল সাইন্সে দেখা যায় নারীরা অতিরিক্ত মেন্টাল স্ট্রেস নিলে বান্ধ্যাত্ব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আজকাল দেখা যায় অনেক চাকরিজীবি মহিলা হয়ে থাকে। মেয়েরা চাকরি করবে সমস্যা নেই কারণ ইসলামও মেয়েদের চাকরি, ব্যবসা করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে অতিরিক্ত মেন্টাল স্ট্রেসের কারণে আপনার জীবন যেনো নষ্ট না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে আপনার। প্রতিটা বাবা মায়ের কাছে সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত স্বরূপ। হতে পারে আপনার সন্তানই আপনার জান্নাতে যাওয়া উসিলা। কোনো স্বামীই চায় না তার স্ত্রী তার কথা না শুনে নিজের মতো চলুক। এতে করে প্রত্যেক স্বামীরই রাগ হয়। আর এই রাগ লিমিট ক্রস করলেই ঘটে যায় বিবাহ বিচ্ছেদ। দেখা যাচ্ছে পুরুষেরা বিচ্ছেদের জন্য নারীদের যে কারণগুলোকে দায়ী করছে ইসলাম সেই কাজগুলোকে সমর্থন করে না। তাই কোনো নারী যদি শরীয়ত মোতাবেক অনুযায়ী চলে তাহলে বিবাহ বিচ্ছেদের চান্স খুব একটা থাকে না। তালাক/বিবাহ বিচ্ছেদ খুব ঘৃণিত একটি কাজ। তাই প্রতিটি নারী পুরুষের উচিত শরীয়ত মোতাবেক অনুযায়ী চলা। তবেই দাম্পত্য জীবন সুখী হবে। ফলে এই বিবাহ বিচ্ছেদ আর চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে না।