ঢাকা, সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৩রা অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দোয়ারাবাজারে মারুফের শিকলবন্দী জীবন

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ১০:৫৭:০০ পূর্বাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন



চুরির অভিযোগে গাছে বেঁধে মাদ্রাসা ছাত্রকে নির্মম নির্যাতনের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে শিকলবন্দী জীবন কাটছে সুমনাগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের চাইরগ্রাঁও গ্রামের শিশু মারুফের।

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি নির্যাতনের ঘটনার পর শিশুটির অস্বাভাবিক আচরণের কারণে সারাদিন শিকল পড়ে থাকতে হয় তাকে। সন্তানের এমন অবস্থায় নির্যাতনকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি শিশু মারুফকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছেন অসহায় পরিবারটি।
 
ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে এভাবেই মানবেতর দিন কাটছে শিশুটির। চুরির অভিযোগে প্রতিবেশীর দ্বারা পাশবিক নির্যাতনের পর থেকে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় নিরুপায় হয়ে শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে তাকে। ঘুমানোর সময় স্টীলের খাটে এক পাশে লোহার শিকল দিয়ে হাত পায়ে বেড়ি পড়ানো হয়। বাহিরে বের করলে লোহার শিকল ধরে রাখতে হয়। ২৪ ঘন্টা থাকতে হচ্ছে শিকলবন্ধী অবস্থায়।

মারুফ সুমনাগঞ্জ জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের চাইরগাঁও গ্রামের দিনমজুর সফিক মিয়ার বড় ছেলে। বাবা পেশায় একজন দিনমজুর। মারুফ ওই গ্রামের দিনেরটুক দাখিল মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র।

জানা যায়, গত ৭ ডিসেম্বর গাছের সাথে বেঁধে পাশবিক নির্যাতন করা হয় মাদ্রাসা ছাত্র মারুফকে। মিষ্টি আলুর ডাঁটা চুরির অপবাদে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে গ্রামের প্রভাবশালী আব্দুল্লাহ ও তাঁর আত্মীয়রা। নির্মম নির্যাতনের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনায় আসে ঘটনাটি। নির্যাতিত মারুফের পরিবারের দাবি ঐদিন সকালের ঘটে যাওয়া তুচ্ছ ঘটনার জেরে আধিপত্য দেখাতে তাদের সন্তানকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতনের পর থেকে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে তাদের সন্তান। চেনাজানা সবার সাথেই অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো সে। অনেক চিকিৎসা করে সুস্থ্য হচ্ছে না শিশুটি। এই অবস্থায় মারুফের ভবিষৎ নিয়ে শঙ্কিত তারা। নির্যাতনকারীর বিচারের পাশাপাশি ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সংশ্লিষ্টতের সহযোগিতা চেয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।

নির্যাতনের স্বীকার মারুফের মা রাবেয়া বেগম বলেন, আমরা ছেলে আব্দুল্লার স্ত্রী আলুর ডাঁটা বিক্রি করেছিল। তাই সে ক্ষেত থেকে ডাঁটা তুলে এনেছিল। এই ঘটনায় আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে খুব মারধোর করে আব্দুল্লা ও তার আত্মীয়রা। নির্যাতনের পর থেকে আমরা ছেলের মাথায় সমস্যা এসেছে। সে কাউকে ঠিক মতো চিনতে পারে না। আমি গরীব মানুষ। নিজেরাই চলতে পারি না। ছেলের চিকিৎসা নিয়ে বড় দুঃচিন্তায় আছি। ছেলেকে ভালো না করলে তার ভবিষ্যতের কি হবে।

মারুফের পিতা সফিক মিয়া বলেন, নির্যাতনের কারনে আমার ছেলে পাগল হয়ে গেছে। অনেক চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ্য করে তুলতে পারছি না। নির্যাতনের পর গ্রামের মানুষের কাছে বিচারের জন্য গিয়েছি। কেউ আমার বিচার করে দেয়নি। আমি নিরুপায় হয়ে আদালতে গিয়েছি। প্রতিপক্ষ ক্ষমতাধর, টাকাওয়াল। নির্যাতনের ন্যায় বিচারের পাশাপাশি ছেলের সুচিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চান তিনি।

নির্যাতনের ঘটনায় একটি মামলা আদালতে চলমান রয়েছে। মামলা প্রধান আসামি আব্দুল্লাহসহ অন্যান্য আসামি জামিনে রয়েছেন। তবে নির্যাতনের ভিডিও ক্লিপ দেখে জড়িতদের সনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হচ্ছে বলে জানান দোয়ারাবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত একর্মকর্তা নন্দলাল ধর।