ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ধানমন্ডির টুইন পিক ভবনের রুফটপ রেস্তোরাঁ ভেঙে দিচ্ছে রাজউক

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : সোমবার ৪ মার্চ ২০২৪ ০২:৪৩:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

রাজধানীর ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের আলোচিত গাউসিয়া টুইন পিক ভবনের রুফটপ রেস্তোরাঁ ভেঙে দিচ্ছে রাজউক। রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী ভবনটির ছাদ ফাঁকা থাকার কথা ছিল। কিন্তু কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়া সেখানে রেস্তোরাঁটি গড়ে উঠেছে। তাই এটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।

 

 

সোমবার (৪ মার্চ) দুপুর থেকে রেস্তোরাঁটি ভাঙার কাজ শুরু করেছে রাজউক।

 

অভিযানে (রাজউক) জোন-৩-এর পরিচালক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজিনা সারোয়ার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অফিসের জন্য অনুমোদিত এই ভবনে অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে রেস্টুরেন্ট ও ফুডকোর্ট।

 

তিনি আরও বলেন, এই ভবনটি এফ ক্যাটাগরির। অফিসের জন্য রাজউক থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখানে অবৈধভাবে প্রায় ৮-১০টির মতো রেস্টুরেন্ট করা হয়েছে। বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি। অভিযান শেষে বিস্তারিত জানাতে পারবো।

 

এর আগে রোববার সন্ধ্যা থেকে রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। অভিযানে রেস্তোরাঁগুলোর অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অনুমতি রয়েছে কিনা সেগুলা খতিয়ে দেখা হয়। অভিযানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে অনিয়ম থাকার কারণে ৩৫ জনকে আটক করা হয়।

 

উল্লেখ্য, এই ভবন নিয়ে শুক্রবার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন ভবনের স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় নানা আলোচনা-সমালোচনা। শুক্রবার ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে সকলের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘PLEASE DON’T USE THIS BUILDING FOR YOUR OWN SAFETY’

 

স্থপতি মুস্তাফা খালিদ লিখেছেন, প্রতিনিয়ত এই ভবনটি নিয়ে সত্যি উৎকণ্ঠায় থাকি। নকশা ও অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে একে সমূহ অগ্নিঝুকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রূপান্তর করা হয়েছে। স্থপতি হিসেবে শেষ যে ক্ষমতাটুকু রাজউক দিয়েছে অকুপেন্সি সার্টিফিকেটের জন্য- সেই রিপোর্ট স্বাক্ষর করার তোয়াক্কাও এখানে করা হয়নি। অকুপেন্সি সার্টিফিকেট না নিয়েই চলছে দেদার ব্যবসা। যেহেতু ভবনটি নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় করে ব্যবহার শুরু হয়েছে তাই স্থপতি হিসেবে রিপোর্ট ও এজবিল্ট ড্রইং প্রদান থেকে বিরত থেকে জমির মালিক ও ডেভেলপারকে বারবার লিখিত বার্তায় এ বিষয়ে সতর্ক করা হলেও কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হয়নি। অর্থের কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিস্ফল হচ্ছে। ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কি করে সম্ভব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর- ভাড়া হয় না তাই আর কি করা! তাদের এও জানানো হয় যে, সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে।

 

তিনি আরও লিখেছেন, উদ্ভট সব যুক্তির বেড়াজালে একজন স্থপতি হিসেবে নিজেকে অসহায় না ভেবে গত মাসে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস বিভাগের স্টেশন মাস্টারকে এক বার্তায় এ বিষয়ে অবগত করলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে জানান। আমার ঘনিষ্ট ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ডিজিকেও তার ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনি সাধ্যমতো তা করবেন বলে জানান। আজ আবার স্টেশন মাস্টারকে বিস্তারিত তথ্য লিখলাম। দেখা যাক কি হয়। যতদূর জানি- এ ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহভাবে অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়েছে, ফায়ার স্টেয়ার স্টোররুম হয়েছে, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে। একজন সচেতন স্থপতি তো বটেই একজন শহরবাসী হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই দ্বায়ীত্ব দৃশ্যমান অশনিসংকেতের মোকাবেলা করা।