জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের কৈডোলা-জাফরশাহী উচ্চ বিদ্যালয়ের নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা নিয়ে অভিভাবক সদস্য ও সভাপতির মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে সভাপতি রাশেদ মোশারফ রিপন অভিভাবক সদস্য সেলিম মিয়ার উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। স্থানীয়রা এগিয়ে গিয়ে রিপনকে সামাল দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের নিমিত্তে অভিভাবক সদস্য (মহিলা) নির্বাচনে অনিয়ম করা হয়েছে মর্মে রেবেকা সুলতানা নামক এক প্রার্থী বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগসহ আদালতে মামলা দায়ের করেন। এর পরেও নতুন কমিটি গঠনের জন্য কতিপয় লোক অনিয়মতান্ত্রিকভাবে বর্তমান কমিটির অনুমোদন আনে। পরে ওই কমিটি ৬টি পদে লোক নিয়োগের জন্য জোর চেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ হয়। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কমিটির একাধিক সদস্যের মতানৈক্যের কারণে সে তারিখ রদ করা হয়। শেষমেশ প্রত্যেক সদস্য ও অন্যদেরকেও আর্থিক সুবিধার মাধ্যমে ম্যানেজ করে ৩০ সেপ্টেম্বর পুনঃ তারিখ নির্ধারিত হয়। এরপর সে তারিখও পিছিয়ে দিয়ে সর্বশেষ ২ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নতুন করে মামলা জটিলতার কারণে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। এর কারণ হিসেবে স্থানীয়রা জানায়, ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্য ৬টি পদে নিয়োগের বিপরীতে আনুমানিক ১৬/১৭ জন প্রার্থীর নিকট থেকে চাকরির আশ্বাস দিয়ে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা আদায় করে। এ ক্ষেত্রে টাকা দেয়া চাকরি প্রার্থীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। ফলে নাঈম বাপ্পী নামের এক চাকরী প্রার্থী ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিসহ বাদীর প্রার্থীত পদের অপর দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে ১ অক্টোবর আদালতে মামলা দায়ের করে। এ কারণে নিয়োগ পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। এ বিষয়টি ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক ছাইদুর রহমান (বিএসসি) এ প্রতিনিধিকে নিশ্চিত করেছেন। অপরদিকে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হওয়ার কারণে বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সমাপ্তের নির্দিষ্ট সময়ও শেষ হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রার্থীদের চাকরির আশ্বাস দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করায় সভাপতি ভীষণ বেকায়দায় পড়েন। তাই তিনি সেলিম মিয়া নামক এক অভিভাবক সদস্যকে (নিয়োগ বাণিজ্যের হিস্যা হিসেবে দেয়া) দেড় লাখ টাকা ফেরতের জন্য উপর্যুপরি চাপ দিতে থাকেন। এতে সেলিম মিয়া অপারগতা প্রকাশ করায় সভাপতি ঘটনার দিন দুপুরে রামদা বানিয়ে আনেন। সেই সাথে সেলিম মিয়াকে শায়েস্তা করবে বলে হুমকি দিতে থাকেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি জানান, এ ব্যাপারে পরে কথা বলবেন। তবে মিস্টার ডাক্তার (সভাপতির কাছের লোক) জানান, সেলিম মিয়াকে দেয়া টাকা ফেরত চাইলে সে সদস্যপদ থেকে পদত্যাগ করার কথা জানায়। তাই সভাপতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারতে যায়। স্থানীয়রা জানায়, রিপন সভাপতি হওয়ার জন্য স্কুলের নামে ১১ শতাংশ জমি লিখে দেয়। কিন্তু ওই জমি কাগজে-কলমে আর মুখে-মুখেই। এখন পর্যন্ত দখল বুঝিয়ে দেয় নি। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ছাগল চুরি ও মাদক সেবনসহ নানা সামাজিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তার মতন লোক পবিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হওয়াটাই অত্যন্ত দুঃখজনক। সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক ছাইদুর রহমান (বিএসসি) জানান, অনেকের মত তিনিও লোকমুখে ঘটনা শুনেছেন। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বার আশরাফুল আলম জানান, তাকে কেউ বিষয়টি জানায় নি। শাহবাজপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক স্বপন তালুকদার জানান, ঘটনাটি শুধু তিনিই নন, অনেকেই জানেন। শাহবাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আয়ূব আলী খান জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে ওই সভাপতিকে অবশ্যই চাকরিপ্রার্থীদের নিকট থেকে নেয়া সম্পূর্ণ টাকা ফেরত দিতে হবে। এখন পর্যন্তও কেউ তাকে জানায় নি। তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।