বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার কিছু রিপোর্ট পাওয়া গেছে এবং সেই অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে। এছাড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটানোর ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়েছে। শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) এসব তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
বুধবার যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের দ্য লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। ইতিমধ্যে রক্ত ও ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করা হয়েছে। অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির অধীন লিভার, কিডনি ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বৃহস্পতিবার বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রাথমিক কিছু পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করেছেন।
ডা. জাহিদ বলেন, প্রাথমিক চিকিৎসা চলছে। দ্য লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বেশ কিছু পরীক্ষা করা হচ্ছে। পরীক্ষার ফলের ওপর নির্ভর করবে, কী ধরনের চিকিৎসা তাঁকে দেওয়া হবে। লন্ডনের এই ক্লিনিকে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডের জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে লন্ডনে যাওয়ার সুবাদে সেখানে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ হয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার। দীর্ঘ সময় পর পরিবারের সব সদস্যকে কাছে পেয়ে খুবই উজ্জীবিত তিনি। হাসপাতালে সবার সঙ্গে খুনসুটি করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। মানসিকভাবে তিনি এখন যথেষ্ট চাঙা।
এ বিষয়ে অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়াকে অনেকদিন পরিবারের কাছের সদস্যদের থেকে দূরে রাখা হয়েছে। বর্তমানে তিনি পরিবারের সদস্যদের কাছে পেয়ে অনেক হাসি-খুশি আছেন। সবার সঙ্গে খুনসুটি করছেন। পরিবারের সবাই রুটিনমাফিক আসা-যাওয়া করছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেছেন গত বুধবার। কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে বুধবার যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় সকাল সোয়া নয়টায় লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে বরণ করেন। বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়াকে সরাসরি সেন্ট্রাল লন্ডনে দ্য ক্লিনিকে নিয়ে সেখানে ভর্তি করা হয়।
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দুই বছরের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর করোনা পরিস্থিতিতে সরকার তাকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেয়। সে সময় তার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি বলে মত দেন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২০ সাল থেকেই তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে কয়েক দফা আবেদন করা হয়; কিন্তু সেই সরকার তাতে সাড়া দেয়নি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতির এক আদেশে খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এরপর দুর্নীতির যে দুটি মামলায় তিনি কারাবন্দী হয়েছিলেন, সেগুলোর রায় বাতিল করেন আদালত। এরপর তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলেন।
বায়ান্ন/এসবি