রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাল, গম, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুরসহ ১১টি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রে মার্জিন কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে। তবে আমদানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আসছে না।
বিশ্ববাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ডলার সংকট, ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা এবং শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারকদের অংশগ্রহণ কম থাকার কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।
চলতি অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম পাঁচ মাসে আমদানির পরিমাণ গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে।
* চিনি: এ সময় পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৯৯৪ টন, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কম।
* ভোজ্যতেল: ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮১৪ টন আমদানি হয়েছে, আগের বছর একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৩ হাজার ৯০ টন।
* পেঁয়াজ: গত বছরের তুলনায় পেঁয়াজের আমদানিও উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এ বছর পেঁয়াজ এসেছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৯৬ টন, যা আগের বছর ছিল প্রায় ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৩ টন।
* খেজুর: রমজানে অত্যাবশ্যকীয় এ পণ্যের আমদানিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। গত বছরের তুলনায় প্রায় ৬৬ শতাংশ কম খেজুর আমদানি হয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা ও ডলার সংকট আমদানিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এলসির মার্জিন শিথিল করলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংক থেকে চাহিদামতো ডলার পাচ্ছেন না। এলসি খোলার পর ডলারের দাম বাড়ার কারণে আমদানিকারকদের বাড়তি ব্যয় বহন করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজানের তিন-চার মাস আগে থেকেই চাহিদামতো পণ্যের এলসি খোলা হয়। কিন্তু এবার সেই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে। বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর আমদানি কমায় বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমলেও দেশের চিত্র ভিন্ন
ট্রেডিং ইকোনমিকসের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববাজারে সয়াবিন, চিনি, গম ও চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।
* সয়াবিন: ২০২৪ সালে সয়াবিনের দাম কমেছে প্রায় ২৪.৫ শতাংশ।
* চাল ও গম: গমের দাম কমেছে ১২.৮৬ শতাংশ এবং চালের দাম কমেছে ২১.৩৭ শতাংশ।
* চিনি: বিশ্ববাজারে চিনির দামও নিম্নমুখী।
তবে দেশের বাজারে এসব পণ্যের দাম কমেনি। আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য কমলেও ডলার সংকট এবং ব্যাংকিং সমস্যার কারণে এ সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১০০ শতাংশ এলসি মার্জিন শিথিল করে ১১টি পণ্যে ন্যূনতম মার্জিন নির্ধারণ করেছে। এনবিআর চিনির শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করেছে। ভোজ্যতেলে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যাংকের জটিলতার কারণে এ উদ্যোগের সুফল পাচ্ছেন না তারা। ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “ব্যবসায়ীরা কী দামে পণ্য এনে কত দামে বিক্রি করছেন, সে বিষয়ে তদারকির অভাব রয়েছে। ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমেও পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ নেই।”
রমজানকে ঘিরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে ডলার সংকট ও ব্যাংকিং খাতের অস্থিরতা কাটিয়ে ওঠা জরুরি। পাশাপাশি বাজার তদারকি জোরদার করা প্রয়োজন। সরবরাহ পর্যাপ্ত না হলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
বায়ান্ন/এএস/একে