ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৪ ০৭:০৮:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

টানা চতুর্থবার ও সব মিলিয়ে পঞ্চমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।  

 

বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টা ৩ মিনিটে বঙ্গভবনে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

 

শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে চার মেয়াদে ২০ বছর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ শাসন করেছেন শেখ হাসিনা।

 

২০২৯ সালে পঞ্চম মেয়াদ পূর্ণ হলে তিনি স্বাধীন দেশে ২৫ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। বাংলাদেশের মোট বয়সের প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে শেখ হাসিনার শাসনকাল।

 

পঞ্চম মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনায় এবার শেখ হাসিনার সঙ্গী হচ্ছেন ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী।

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর তরুণ-প্রবীণদের সমন্বয়ে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করেছেন শেখ হাসিনা।

 

প্রধানমন্ত্রীর পর একে একে মন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীদেরও শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি।

 

এর আগে বুধবার অষ্টমবারের মতো জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে নির্বাচিত হন।

 

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রথম ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

 

গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করছে আওয়ামী লীগ। ২৯৯টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের বেসরকারি ফলাফল পাওয়া গেছে। এর মধ্যে নৌকা প্রতীকে ২২৩টি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ।

 

বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জন করা এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পর সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। ৬২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। যাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ নেতা।

 

এদিকে গত দুই মেয়াদে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে বসা জাতীয় পার্টি ২৬ আসনে সমঝোতা করলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র ১১ আসনে জয় পেয়েছে।

 

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে জাসদ একটি, ওয়ার্কার্স পার্টি একটি এবং বিএনপির জোট থেকে বেরিয়ে আসা কল্যাণ পার্টি একটি আসনে জয় পেয়েছে।

 

শেখ হাসিনার বর্ণাঢ্য জীবন 

 

শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসার পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় তিনি।

 

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ও রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

 

১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে যখন সপরিবারে হত্যা করা হয়, ওই সময় বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা হাসিনা ও রেহানা। পরের ৬ বছর লন্ডন ও দিল্লিতে তাদের নির্বাসিত জীবন কাটে।

 

১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। পাঁচ বছরের মাথায় সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের সময়ে সংসদ সদস্য (এমপি) নির্বাচিত হন।  

 

তার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ একনায়ক এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। পরে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ; আর শেখ হাসিনা হন বিরোধী দলের নেতা।  

 

১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।  

 

২০০১ সালের নির্বাচনে সরকার গঠন করে বিএনপি-জামায়াত জোট। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে তৎকালীন বিরোধী দলনেতা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।  

 

২০০৭ সালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নিলে অনেক রাজনীতিকের মতো শেখ হাসিনাও গ্রেপ্তার হন। দুই বছরের মাথায় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ জোট। দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা।

 

বিএনপি ও তাদের শরিকদের বর্জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনেও জয় পায় আওয়ামী লীগ জোট। ২০১৮ সালের গত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার করে আওয়ামী লীগ জোট। এর মধ্য দিয়ে চতুর্থবার ও টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। সবশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনেও জয় নিজেদের ঘরে তোলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ।