ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু বেড়েছে ৫৫ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ২৭ জানুয়ারী ২০২৪ ০১:৩৬:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

দেশে প্রতিনিয়তই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ছে বলে বেসরকারি সংস্থা- রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে। সংস্থাটির দাবি, গত পাঁচ বছরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার বেড়েছে ১৬ শতাংশ।

 

আর এসব দুর্ঘটনায় মৃত্যু হার বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।  

২০২৩ সালে মোট ছয় হাজার ৯১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ৫২৪ জন। এ সময় আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৪০৭ জন।

 

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ে ‘২০২৩ সালের সড়ক দুর্ঘটনার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৩২টি, নিহত হয়েছেন দুই হাজার ৪৮৭ জন এবং আহত হয়েছেন এক হাজার ৯৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে এক হাজার ৯০৯ জন (৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ) ১৪ থেকে ৪৫ বছর বয়সী।

 

২০১৯ সালে এক হাজার ১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন ৯৪৫ জন। ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল এক হাজার ৩৮১ দুর্ঘটনায় এক হাজার ৪৬৩ জন। ২০২১ সালে দুই হাজার ৭৮টি দুর্ঘটনায় দুই হাজার ২১৪ জন। ২০২২ সালে দুই হাজার ৯৭৩টি দুর্ঘটনায় তিন হাজার ৯১ জন। যদিও ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ও মৃত্যু কমেছে।

 

তবে ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়লেও মৃত্যুর সংখ্যা কমেছে। ২০২২ সালে ছয় হাজার ৮২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা ছিল সাত হাজার ৭১৩ জন।

 

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার বিশ্লেষণ:

অন্য যানবাহনের সঙ্গে মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটেছে (৫৭২টি) ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ, মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে (৯০৪টি) ৩৫ দশমিক ৭০ শতাংশ, মোটরসাইকেলে ভারি যানবাহনের চাপা ও ধাক্কা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে (এক হাজার ২৫টি) ৪০ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে (৩১টি) এক দশমিক ২২ শতাংশ। ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ (৯১৭টি) দুর্ঘটনার জন্য মোটরসাইকেল চালক এককভাবে দায়ী ছিল। দুর্ঘটনার জন্য বাসের চালক দায়ী

১০ দশমিক ৩০ শতাংশ, (২৬১টি), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি চালক দায়ী ৪০ দশমিক ৯১ শতাংশ (এক হাজার ৩৬টি), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস চালক দায়ী দুই দশমিক ৭২ শতাংশ (৬৯টি), থ্রি-হুইলার চার দশমিক ২৬ শতাংশ (১০৮টি), বাইসাইকেল, প্যাডেল রিকশা, রিকশাভ্যান চালক দায়ী শূন্য দশমিক ৫১ শতাংশ (১৩টি), পথচারী দায়ী তিন দশমিক ৮৩ শতাংশ (৯৭টি) এবং অন্যান্য কারণ দায়ী এক দশমিক ২২ শতাংশ (৩১টি)।

 

২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ (৭৪৪টি) মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে জাতীয় মহাসড়কে, ৪১ দশমিক ৫৮ শতাংশ (এক হাজার ৫৩টি) ঘটেছে আঞ্চলিক সড়কে, ১৭ দশমিক ১৪ শতাংশ (৪৩৪টি) ঘটেছে গ্রামীণ সড়কে এবং ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ (৩০১টি) দুর্ঘটনা ঘটেছে শহরের সড়কে।

 

আর ২০২৩ সালে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ছয় হাজার ৯১১টি। নিহত হয়েছেন ছয় হাজার ৫২৪ জন এবং আহত হয়েছেন ১১ হাজার ৪০৭ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৭৪ জন (১৪ দশমিক ৯২ শতাংশ), শিশু এক হাজার ১২৮ জন (১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ)। দুই হাজার ৫৩২টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত দুই হাজার ৪৮৭ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় এক হাজার ৪৫২ জন পথচারী নিহত হয়েছেন, যা মোট নিহতের ২২ দশমিক ২৫ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৯৪২ জন, অর্থাৎ ১৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এই সময়ে ১০৭টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৪৮ জন নিহত, ৭২ জন আহত এবং ৪৬ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ট্রলার ডুবে ৩৩টি গরুর মৃত্যু ঘটেছে। ২৮৭টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩১৮ জন নিহত এবং ২৯৬ জন আহত হয়েছেন।

 

রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যম এবং সংস্থার নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।

 

দুর্ঘটনার যানবাহনভিত্তিক নিহতের চিত্র:

দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী দুই হাজার ৪৮৭ জন (৩৮ দশমিক ১২ শতাংশ), বাস যাত্রী ২৭৪ জন (চার দশমিক ১৯ শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৩৮৪ জন (পাঁচ দশমিক ৮৮ শতাংশ), প্রাইভেটকার-

মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জিপ যাত্রী ২২৯ জন (তিন দশমিক ৫১ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পু-লেগুনা) এক হাজার ২০৯ জন (১৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-চান্দের গাড়ি-মাহিন্দ্র-টমটম) ২৯৬ জন (চার দশমিক ৫৩ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৯৩ জন (দুই দশমিক ৯৫ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।

 

দুর্ঘটনা সংঘটিত সড়কের ধরন:

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে দুই হাজার ৩৭৩টি (৩৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, দুই হাজার ৮৮৭টি (৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৯৯৪টি (১৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৫৮৩টি (আট ৪৩ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৭৪টি (এক দশমিক শূন্য সাত শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে।

 

দুর্ঘটনার ধরন:

দুর্ঘটনাসমূহের এক হাজার ২৯১টি (১৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, এক হাজার ১৪৯টি (৪৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, এক হাজার ৪৪৬টি (২০ দশমিক ৯২ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৮১৭টি (১১ দশমিক ৮২ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ২০৮টি (তিন শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।

 

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহন:

দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ড্রামট্রাক-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-তেলবাহী ট্যাংকার-বিদ্যুতের খুঁটিবাহী ট্রাক-সিটি করপোরেশনের ময়লাবাহী ট্রাক ২৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স, পাজেরো জিপ চার দশমিক ৮০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ২৩ দশমিক শূন্য চার শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি- অটোরিকশা-অটোভ্যান-মিশুক-টেম্পু-লেগুনা ইত্যাদি) ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-করিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম-চান্দের গাড়ি) ছয় দশমিক ৩৬ শতাংশ, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান চার দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন তিন দশমিক শূন্য সাত শতাংশ।