ঢাকা, রবিবার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করবে এফবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৬:১১:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চাইলে দেশ থেকে পাচার করা অর্থ পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করবে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। একইসঙ্গে আইনি কার্যক্রমে সব ধরনের সহায়তা করবে তারা।

 

 

সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের মানি লন্ডারিং অনুবিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এফবিআইয়ের দুই সদস্যের একটি টিম এ বিষয়ে দীর্ঘ বৈঠক করে।

 

বৈঠকে এফবিআইয়ের দুই সদস্যের টিমে ছিলেন এফবিআইয়ের অ্যাসিস্ট্যান্ট লিগ্যাল অ্যাটাশে রবার্ট জে ক্যামেরন এবং পুলিশ লিয়াজোঁ স্পেশালিস্ট মুহাম্মদ আমিনুল ইসলাম। আর দুদকের মহাপরিচালক (মানি লন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হকের নেতৃত্বাধীন একটি টিম আলোচনায় অংশগ্রহণ করে।

 

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন দুদকের এমন একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমিশনের টিমের সঙ্গে এফবিআই টিমের দেড় ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়েছে। তারা (এফবিআই টিম) দুদকের অনুসন্ধান, তদন্ত ও বিচার—এই তিন প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছে।

 

তারা দুদকের কার্যক্রম সম্পর্কে ধারণা নিয়েছে। এখন তারা তাদের আইনে কিভাবে দুদককে সহযোগিতা করা যায় তা দেখবে। একই সঙ্গে দুদকের যদি কোনো তথ্যের প্রয়োজন হয় তা-ও সরবরাহ করবে। বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনা থেকে শুরু করে আইনি নানা বিষয়ে দুদককে কিভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা তারা (এফবিআই) দুদককে চিঠি দিয়ে জানাবে।

 

সোমবার বিকেলে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের বলেন, এফবিআইয়ের দুই সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল কমিশনে এসেছে। মূলত এটি একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। প্রতিনিধিদল কমিশনের মানি লন্ডারিং অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে। কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্তের সার্বিক কার্যক্রম তারা জানতে চেয়েছে। কমিশন থেকে সেসব জানানো হয়েছে। যদি দুদকের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হয়, তাহলে এফবিআই সহযোগিতা করবে।

 

এদিকে বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বলেছেন, অর্থ ফেরত আনার বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং ও সময়সাপেক্ষ, কিন্তু অসম্ভব নয়।  

 

সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম হাইকমিশনারের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাইকমিশনার এ কথা বলেন। তিনি এ বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

 

লিলি নিকোলস কানাডার নাগরিকসহ বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে বিদেশিদের আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। আমরা তাদের জন্য পরিপূর্ণ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছি। ’ 

 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমান্বয়ে উন্নতি ঘটছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শিগগিরই আরো সন্তোষজনক পর্যায়ে যাবে।

 

সম্প্রতি রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে কানাডার হাইকমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গা পরিস্থিতি খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসকারী মায়ানমারের নাগরিকসহ সেখানে কর্মরত দেশি-বিদেশি এনজিওর কর্মী ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ’

 

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সীমিত আর্থিক সামর্থ্যের মধ্যে থেকেও বাংলাদেশ অনেক বছর ধরে ১২ লাখ রোহিঙ্গাক আশ্রয় ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এখন সময় এসেছে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর নিজ দেশে প্রত্যাবাসন ও অন্য দেশে পুনর্বাসন করা। এ সময় উপদেষ্টা কানাডায় কিছু রোহিঙ্গার পুনর্বাসনের অনুরোধ করেন।

 

পুলিশ সংস্কারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কানাডার সহায়তা চাইলে লিলি বলেন, পুলিশ প্রশিক্ষণে কানাডার সহযোগিতাবিষয়ক একটি প্রকল্প বাংলাদেশে চালু রয়েছে। এটিকে সম্প্রসারণের মাধ্যমে এ বিষয়ে কানাডা আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

 

হাইকমিশনার বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি হস্তান্তরে কানাডার অর্থায়নে কৃষি প্রযুক্তিকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে উপদেষ্টার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। উপদেষ্টা এ ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

 

বৈঠকে কানাডিয়ান হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) মার্কোস ডেভিস, সিনিয়র ট্রেড কমিশনার অ্যান্ড কাউন্সেলর ডেবরা বয়েসসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।