ঢাকা, সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য লাঙল দিয়ে হাল চাষ

আশরাফুল ইসলাম তুষার,কিশোরগঞ্জ: | প্রকাশের সময় : সোমবার ১০ জানুয়ারী ২০২২ ০৩:৩১:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

প্রযুক্তির ছোঁয়ায়,আধুনিকতার স্পর্শে ও বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবনে এসেছে নানা পরিবর্তন। আর সেই পরিবর্তনের ছোঁয়াও লেগেছে কৃষিতে।

তাই কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দেখা যায় বেশ পরিবর্তন।তাই আর সকালবেলা (বর্ষা মৌসুমে) পাকা কাঁঠাল দিয়ে- পান্তা খেয়ে কাধে নাঙ্গল-জোয়াল আর জোড়া গরুর দড়ি হাতে মাঠে আর যেতে দেখা যায়না কৃষকদের।কৃষি প্রধান বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে লাঙ্গল দিয়ে হালচাষ। চিরায়ত বাংলার রূপের সন্ধান করতে গেলে এই দুই কৃষি উপকরণের কথা যেমন অবশ্যই আসবে, তেমনি আসবে হালের গরুর কথাও। আধুনিকতার সঙ্গে সঙ্গে হাল চাষের পরিবর্তনে এখন ট্রাক্টর অথবা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করা হয়।এক সময় দেশের বিভিন্ন জেলার উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে কৃষক গরু পালন করতো হাল চাষ করার জন্য। আবার কিছু মানুষ গবাদিপশু দিয়ে হাল চাষকে পেশা হিসেবেও নিত।

আবার অনেকে তিল, শরিসা, কলই, আলু চাষের জন্য ব্যবহার করতেন।নিজের সামান্য জমির পাশাপাশি অন্যের জমিতে হাল চাষ করে তাদের সংসারের ব্যয়ভার বহন করত। হালের গরু দিয়ে দরিদ্র মানুষ জমি চাষ করে ফিরে পেত তাদের পরিবারের সচ্ছলতা। আগে দেখা যেত কাকডাকা ভোরে কৃষক গরু, লাঙ্গল, জোয়াল নিয়ে মাঠে বেরিয়ে পড়তো। এখন আর চোখে পড়ে না গরুর লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ।জমি চাষের প্রয়োজন হলেই অল্প সময়ের মধ্যেই পাওয়ার টিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চলাচ্ছে চাষাবাদ। তাই কৃষকরা এখন পেশা বদলি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে গরু দিয়ে হাল চাষ।

কৃষক হবিল মিয়া বলেন (৫০) বলেন, ছোটবেলায় হাল চাষের কাজ করতাম। বাড়িতে হাল চাষের বলদ গরু ২-৩ জোড়া থাকত। চাষের জন্য দরকার হতো ১ জোড়া বলদ, কাঠ লোহার তৈরি লাঙ্গল, জোয়াল, মই, লরি (বাঁশের তৈরি গরু তাড়ানোর লাঠি), গরুর মুখে টোনা ইত্যাদি। আগে গরু দিয়ে হাল চাষ করলে জমিতে ঘাস কম হতো। অনেক সময় গরুর গোবর জমিতে পড়ত, এতে করে জমিতে অনেক জৈব সার হতো ক্ষেতে ফলন ভালো হইতো।অহন নতুন নতুন মেশিন আইসে, মেশিন দিয়ে  মানুষ চাষাবাদ করেছে।

কৃষক  ইছাক মিয়া জানান, গরুর লাঙ্গল দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ শতাংশ জমি চাষ করা সম্ভব। আধুনিক যন্ত্রপাতির থেকে গরুর লাঙ্গলের চাষ গভীর হয়। জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি ও ফসলের চাষাবাদ করতে সার কীটনাশক সাশ্রয় পায়।কষ্ট হলেও গরু দিয়ে হাল চাষ করতে খুব ভাল লাগত। এখন মনে পড়লেই কষ্ট হচ্ছে। ফিরে পাবনা আর সেই পুরনো দিনগুলো। এভাবেই ধিরে ধিরে হারিয়ে যাবে আমাদের গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য।