ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বিএনপিকে সোহরাওয়ার্দীর বাইরে সমাবেশ করতে দেবে না সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৩ ডিসেম্বর ২০২২ ০৯:৫৩:০০ অপরাহ্ন | রাজনীতি

 সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়া ঢাকার ভেতরে অন্য কোথাও বিএনপিকে সমাবেশের জন্য দাঁড়াতে দেবে সরকার ও আওয়ামী লীগ। শুধু নয়া পল্টনেই নয়, ঢাকা মহানগরে যেখানেই বিএনপির নেতাকর্মীরা সমবেত হওয়ার চেষ্টা করবে সেখানেই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিরোধের মুখে পড়বে। সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, নির্ধারিত স্থান উদ্যানের বাইরে ঢাকার ভেতরে অন্য কোথাও বিএনপি যাতে সমাবেশ বা কোনো ধরনের জমায়েত করতে না পারে, সে জন্য সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টরা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে থাকবে। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকবে কঠোর অবস্থানে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের কর্মীরা সংগঠিতভাবে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেবেন।

 

 

নয়া পল্টনেই বিএনপি সমাবেশ করবে—দলটির এই অনড় অবস্থানের কারণে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরাও কঠোর অবস্থানে চলে গেছেন। যে কোনো পরিস্থিতিতে সোহরাওয়ার্দীর বাইরে সমাবেশ প্রতিহত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশ করবে বিএনপি। এ উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অনুমতি চাইলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। কিন্তু নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়ে আসছে বিএনপি এবং এখন পর্যন্ত দলটি এই অবস্থানে অনড় রয়েছে। নয়া পল্টনেই সমাবেশ করার অনড় অবস্থান নিয়ে বিএনপি এক ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বলে আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। সোহরাওয়ার্দীর বাইরে বিএনপি সমাবেশের চেষ্টা করলে পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে ওই সুত্রগুলো আরও জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী জানান, বিএনপির এই সমাবেশ নিয়ে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আর সমাবেশের স্থান নিয়ে বিএনপির অনড় অবস্থানে পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গড়িয়েছে, তাতে দলটি নয়া পল্টনে অবস্থান নিতে পারলে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি হবে না—এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। আর এ ক্ষেত্রে বিএনপিকে ছাড় দেওয়া তাদের কাছে এক ধরনের নতি স্বীকার করা।

এদিকে আওয়ামী লীগের নেতা ও মন্ত্রীদের প্রকাশ্য বক্তব্যেও এই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত দুই দিনের বক্তব্যে নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ প্রতিহত করার কথা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

গত ২ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা মারামারি, পাল্টাপাল্টি করবো না। তবে কেউ আক্রমণ করলে আক্রমণ হবে কিনা তা সময় বলে দেবে। পরশু দিন মতিঝিলে একটা বিআরটিসি বাস পুড়িয়ে দিয়েছে। আগুন সন্ত্রাস শুরু হয়ে গেছে। তারা জানান দিচ্ছে আবার আগুন সন্ত্রাস শুরু করবে। তবে আমাদের কর্মীরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাবে, এটা মনে করবেন না। আমাদের নেতাকর্মীদের বলে দিচ্ছি, প্রতিটি ওয়ার্ডে, মহল্লায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সতর্ক পাহারায় থাকবেন। সারা দেশে গ্রামে, গ্রামে সতর্ক পাহারায় থাকবেন।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে রাজধানীকে কেন্দ্র করে প্রবেশ মুখগুলোতে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান নিতে বলা হয়েছে, যাতে বিএনপির কর্মীরা রাজধানীতে প্রবেশ করতে না পারেন। ৯ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকারম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে। আগে থেকে কর্মীদের প্রস্তুত রাখার জন্যই ইতোমধ্যে এ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের থানা, ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে মাঠে থাকবেন। এছাড়া ঢাকার পার্শ্ববর্তী এলাকা এবং জেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও আগে থেকে মাঠে থাকবেন। এ সব বিষয়ে কেন্দ্র থেকে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে বলে ওই সূত্রগুলো জানায়।

এদিকে পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও সরকার কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলে জানা গেছে। সোহরাওয়ার্দী ছাড়া নয়া পল্টন বা রাজধানীর অন্য কোথাও যাতে কোনো জমায়েত করতে না পারে সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেই অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সরকার সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে।

শনিবার (০৩ ডিসেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল হবিগঞ্জের সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা যদি পুলিশ কমিশনারের নিষেধ না মেনে নয়া পল্টনে তাদের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয় তাহলে পুলিশ কমিশনারই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ঢাকা শহরকে সচল রাখতে ও আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কমিশনার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবেন। আওয়ামী লীগ কখনও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেনি। বিএনপি বন্দুকের নল ঠেকিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। তারা এবারও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে নানা অপকৌশল করে যাচ্ছে। তারা চাল-ডাল মজুদ করে কী করে সে বিষয়টি আওয়ামী লীগ দেখছে।