ঢাকা, শনিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮শে পৌষ ১৪৩১

বিজয়নগরে প্রাচীন পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু লালি গুড়

তৌহিদুর রহমান নিটল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | প্রকাশের সময় : শনিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৫ ১২:৫৭:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে প্রাচীন পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু লালি গুড়। শীতের মৌসুমে চিতই পিঠাসহ নানারকম পিঠা লালি গুড় দিয়ে খাওয়া অত্যন্ত সুস্বাদু। নানা বয়সের নারী-পুরুষের কাছে অত্যন্ত প্রিয় এ খাবার।

কৃষি সমৃদ্ধ উপজেলা বিজয়নগর। এ উপজেলায় নানা ফল, ফুল এবং সবজি চাষে সাফল্য পেয়েছে এ অঞ্চল। বর্তমান মৌসুমে আখের রস দিয়ে তৈরি হচ্ছে দেশীয় খাবার লালি। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লালির কদর সব জায়গায় তাঁর পরিচিতি রয়েছে। দেশের নানা অঞ্চলে পাইকারদের মাধ্যমে বিক্রি হয় এই লালি। 

এই অঞ্চলের শীত মৌসুমে আকর্ষণীয় যে খাবার রয়েছে তা মধ্যে অন্যতম খাবার দারুণ সুস্বাদু আখের রসে তৈরি গুড়। তবে এই গুড় ঘন তরল। স্থানীয়ভাবে একে বলা হয় লালি। এই লালি দিয়ে ঘরে ঘরে তৈরি পিঠা-পুলি শীতের খাদ্যতালিকাকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যায়। 

স্থানীয় কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বিজয়নগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। আর এসব জমিতে ২ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন আখ উৎপাদন হবে। চলতি শীত মৌসুমে বিজয়নগরে প্রায় ৯০ মেট্রিক টন লালি বিক্রি হবে।

আখের রসে তৈরি এই তরল গুড় দারুণ মুখরোচক, মূলত পিঠা-পুলি ও পায়েস তৈরিতেই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এই গুড়। এ ছাড়া চিড়া-মুড়ির সঙ্গে খেতেও অনন্য এই লালি। বিজয়নগর উপজেলায় প্রতি শীত মৌসুমেই লালি তৈরি করেন স্থানীয় কৃষি পরিবারগুলো। বছরের চার মাস লালি তৈরি করে বাড়তি টাকা আয় করেন তাঁরা। 

লালি তৈরিতে সম্পৃক্ত লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আখের মৌসুম ধরা হয়। এই সময়টাতেই শীতের প্রকোপ বেশি হয়। এর ফলে এই চার মাস বিজয়নগর উপজেলায় উৎপাদিত আখ থেকে লালি তৈরি করেন স্থানীয়রা। উপজেলার অর্ধশতাধিক পরিবার আখের রস থেকে লালি তৈরির কাজ করেন। প্রতিদিন অন্তত এক হাজার কেজি লালি তৈরি হয় এ অঞ্চলে। 

লালি তৈরি হয় আখমাড়াইয়ের মাধ্যমে, এখনো প্রাচীন পদ্ধতিতে মহিষ দিয়ে মাড়াই করা আখের রস সংগ্রহ করে চুলায় দীর্ঘসময় জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় সুস্বাদু লালি। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে লালি তৈরির কাজ। প্রতি কেজি লালি পাইকারদের কাছে বিক্রি হয় ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। আর খুচরা বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। 

শুধুমাত্র আখের রস থেকেই এই গুড় তৈরি করা হয়। স্বাদ বাড়ানো বা রং হেরফের করতে বাড়তি কোনো কিছুই এই গুড়ে ব্যবহার করা হয় না। ফলে ক্ষতিকারক উপাদান না থাকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এই লালি একেবারে নির্ভেজাল। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাইকারদের মাধ্যমে বাজারজাত হয়। 

সরেজমিনে উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, কৃষকেরা বাড়ির আঙিনায় মহিষ ও গরু দিয়ে আখমাড়াইয়ের কাজ করছেন। দিনভর আখমাড়াইয়ের মাধ্যমে রস সংগ্রহের পর রাতে সেই রস চুলায় জ্বাল দেওয়া হয়। দুই ঘণ্টারও বেশি সময় জ্বাল দেওয়ার পর তৈরি হয় সুস্বাদু লালি। 

বিষ্ণুপুর গ্রামের লালি তৈরির কারিগর মো. ছিদ্দিক মিয়া জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১৫ হাজার টাকায় এক কানি জমির আখ কিনেছেন তিনি। এই আখ দিয়ে যে পরিমাণ লালি হবে, তা বিক্রি করে সব খরচ বাদ দিয়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হবে তাঁর। 

সাধন মিয়া নামে আরেক কারিগর বলেন, আগে বাজারে নিয়ে লালি বিক্রি করতে হতো। এখন পাইকাররা বাড়িতে এসে লালি কিনে নিয়ে যান। এ বছর লালি বিক্রি করে অনেকটাই লাভবান হব। প্রতি বছর শীতের সময়টাতে লালির ব্যবসা করে ভালো টাকা আয় হয়। এতে করে পরিবারের অভাব-অনটন দূর হয়। 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা আশা করছি এবারের মৌসুমে অন্তত ৭০ লাখ টাকার লালি বিক্রি হবে। আগে প্রচুর পরিমাণে লালি তৈরি হতো।  এখনো কিছু কৃষক ঐতিহ্য হিসেবে আখ চাষ করছেন।

 

বায়ান্ন/এসএ