সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঙ্গলবারের ইসলামী মহাসম্মেলন থেকে তাবলীগ জামাতের একপক্ষের নেতারা বলেছেন, ইজতেমাকে কেন্দ্র করে যদি মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীদের এ দেশে আসতে দেওয়া হয়, তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
মঙ্গলবার সকালে শুরু হওয়া এই মহাসম্মেলনে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, বিশ্ব ইজতেমাকে মাওলানা সাদ ও তার অনুসারীরা বিশৃঙ্খলা করার পরিকল্পনা করেছে। আমরা কোনোভাবেই সেটি হতে দেব না। তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্র যেকোনো মূল্যে আমরা ব্যর্থ করে দেব।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, আপনারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। আপনাদের মনে রাখতে হবে, ছাত্রজনতার আন্দোলনে অনেক ওলামায়ে কেরাম শাহাদাতবরণ করেছেন। আমরা শাপলা চত্বরে জীবন দিয়েছি। আওয়ামী জালিম সরকারের অনেক অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছি।
তিনি বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে আজকের সম্মেলন থেকে ওলামায় কেরামের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা দেওয়া হবে, সরকারকে সেই নির্দেশনা মানতে হবে। এর বাইরে কারও সিদ্ধান্ত তৌহিদি জনতা মেনে নেবে না।
মহাসম্মেলনে মাওলানা আব্দুল হামিদ (পীর মধুপুর) বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে সরকার দুই পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে। আমি বলব- কিসের পরামর্শ, এই সম্মেলন থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সরকারকে এটাই বাস্তবায়ন করতে হবে। ভিন্ন কোনো চিন্তা করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে।
তিনি বলেন, আমরা সরকারকে সহযোগিতা করব। সরকারকেও আলেমদের সহযোগিতা করতে হবে। নয়তো পূর্ববর্তী সরকারের মতোই তাদের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যদি বেয়াদবকে বাংলাদেশে আসতে দেয়, তাহলে সরকারকেও পালিয়ে যেতে হবে।
মহাসম্মেলন থেকে ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের বিচার ও আলেমদের বিরুদ্ধে সব ধরনের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ ৯ দফা দাবি ঘোষণা করা হয়েছে।
সম্মেলনে বাংলাদেশে কওমি মাদরাসা, তাবলিগ জামাত ও ইসলামকে রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশিষ্ট আলেম ও নেতারা।
লাখো মানুষের উপস্থিতির এই সম্মেলন থেকে আলেমরা সরকারের কাছে তাদের নয় দফা দাবি ঘোষণা করেন।
বক্তারা সম্প্রতি টঙ্গীর ইজতেমা ময়দানে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারী সাদ কান্ধলভির সমর্থকদের বিচার এবং স্বঘোষিত আমির সাদের বাংলাদেশে প্রবেশ নিষিদ্ধের দাবি জানান।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- কাকরাইল মসজিদে সাদ সমর্থকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা এবং বাংলাদেশে কাদিয়ানিদের আনুষ্ঠানিকভাবে অমুসলিম ঘোষণা করা।
পরে মোনাজাত পরিচালনা করেন শাহ মোহাম্মদ মহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
সকাল থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনে যোগ দিতে আলেমসহ হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকেন এবং ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ উপস্থিত হয়। সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে সকাল ৯টায় শুরু হয়ে দুপুর ১টা ১৭ মিনিট পর্যন্ত চলে।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন হাটহাজারীর খলিল আহমদ কাসেমী, মধুপুরের আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব, আল্লামা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব, আল্লামা আব্দুল রহমান হাফেজ্জী, আল্লামা নুরুল ইসলাম, আদিব সাহেব হুজুর, মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক, মাওলানা রশিদুর রহমান, আল্লামা শেখ জিয়াউদ্দিন, আল্লামা শেখ সাজিদুর রহমান, ফরিদাবাদের আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী,মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা আবু তাহের নদভী, মাওলানা আরশাদ রহমানী, মাওলানা সালাহউদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা মুশতাক আহমদ, প্রিন্সিপাল মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আনোয়ারুল করিম, ও মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ আলী।
সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার শত শত আলেমও সম্মেলনে যোগ দিলে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, যা সকাল থেকে শুরু হয়।
উল্লেখ্য, টঙ্গীর তুরাগ পাড়ে ২০২৫ সালের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপ ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
সোমবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে তাবলিগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)। বৈঠকে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নিলেও মাওলানা জুবায়েরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হননি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, কোন পক্ষ আগে ও কোন পক্ষ পরে করবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্ব ইজতেমার মাঠ হস্তান্তর ও প্রস্তুতি, নিরাপত্তা, বিদেশি অতিথিদের ভিসা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ, ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ, জরুরি দুর্যোগে ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, আখেরি মোনাজাতের দিন যানজট নিরসনসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
ঢাকা থেকে ২২ কিলোমিটার উত্তরে টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বিশাল ময়দানে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা ১৯৬৭ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
তাবলিগের একাংশের মুরুব্বি ও ভারতের মাওলানা সাদের কিছু বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ২০১৮ সালে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে দুই পক্ষ দুই পর্বে ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন।
একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ভারতের মাওলানা সাদ অনুসারীরা, অপরটির নেতৃত্বে আছেন আলমী শুরাপন্থি বাংলাদেশের মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা।