অল্প খরচে বিদেশে মানুষ পাঠিয়ে করছে সমাজসেবা,আসলে এই মানবিকতার পিছনে রয়েছে এক নৈপত্য কাহিনী।স্বল্প খরচে বিদেশ পাঠানোর নাম করে মানব পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত এমন ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
গতকাল রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেল ও কক্সবাজারের পেকুয়ায় রুদ্ধশ্বাস অভিযান চালিয়ে র্যাব- ৭ এর একটি চৌকস টিম তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-বাঁশখালী ছনুয়া এলাকার মোজাফফর আহম্মদের ছেলে মো. ইসমাইল ও শফিউল আলম, একই এলাকার মৃত চাঁন মিয়ার ছেলে মো. হোসেন, পশ্চিম সেলবন এলাকার মৃত সৈয়দ আহাম্মদের ছেলে মো. ইউনুছ মাঝি এবং পেকুয়ার রাজাখালী এলাকার সেকান্দার আলীর ছেলে রিয়াজ খান রাজু।
র্যাব-৭ সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) মো. নূরুল আবছার বলেন, স্বল্প খরচে মালেশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নাম করে পাসপোর্ট বানিয়ে ট্রলারে করে অজ্ঞাত দ্বীপে নামিয়ে দিয়ে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিতো এই চক্রটি। প্রথমে চুক্তির কিঞ্চিৎ পরিমাণ টাকা হাতে নিয়ে পরে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে বাকি অর্থ দাবি করতো। দিতে না পারলে স্বাক্ষরযুক্ত স্ট্যাম্পের মাধ্যমে তাদের আবাদি জমি জমা বাড়ি-ঘর দখল করে নিতো। এলাকায় তারা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ কিংবা কথা বলার সাহস পেতো না।পূর্বেও চেক্রটির প্রায় জনের নামে একাধিক মানবপাচারসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
দুই সহোদর ইসমাইল ও শফিউলের মানবপাচার ব্যবসার সহযোগী পেকুয়ার রিয়াজ খাঁন রাজু। বিদেশ যাত্রায় আগ্রহী লোকজনের কাগজপত্র সংগ্রহ করে পাসপোর্ট বানিয়ে দিতেন তিনি। পাসপোর্ট বানিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতেন যে—তাদের মাধ্যমে স্বল্প খরচে মালেশিয়া যাওয়া সম্ভব। আর বিদেশ যেতে আগ্রহী নিরীহ লোকজন তাদের এই ফাঁদে পা দিয়ে মোট খরচের অর্ধেক টাকা রাজুর কাছে জমা করতো। বাকি টাকা মালেশিয়া পৌঁছে দেওয়ার শর্তে রাজু তাদের ট্রলারে তুলে দেওয়ার আগমুহুর্তে পাসপোর্ট রেখে দিতো। তাদের এই কাজে সহযোগিতা করতো গ্রেপ্তার ইউনুছ।রাজু এতই ভয়ংকর যে তার ভয়ে মুখ খুলতো না কেউ।রাজু স্থানীয়ভাবে পেকুয়া উপজেলা এলাকায় একজন রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি। তার ভয়ে এলাকার কোন লোক কথা বলার সাহস পায় না। তার সাথে বিবাদে জড়াতে গেলে বাড়িঘর দখল করে বাড়ি ছাড়া করে দেয়। তার ভয়ে কেউ থানায় অভিযোগ পর্যন্ত করার সাহস পায় না।
এবার তাদের মিশনে জয়নাল আবেদীন। জয়নাল আবেদিন নামে এক ভুক্তভোগী রাজুকে বিশ্বাস করে তার কাছে পাসপোর্ট তৈরি করতে যায়। রাজু তাকে পাসপোর্ট তৈরির কারণ জানতে চাইলে ভুক্তভোগী জয়নাল আবেদীন সুযোগ হলে বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানান। তখন রাজু ভিকটিমকে স্বল্প খরচে মালেশিয়া যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। তার সেই ফাঁদে পা দিয়ে জয়নাল আবেদীন প্রাথমিকভাবে তাকে ১৫ হাজার টাকা দেয়। এর কিছুদিনের মধ্যেই রাজু জয়নাল আবেদীনের পাসপোর্ট তৈরি করে দেয়। পাসপোর্ট পেয়ে ভিকটিম আরও ১ লাখ টাকা তুলে দেয় রাজুর হাতে। এসময় রাজু বাকি টাকা মালেশিয়া পৌঁছে পরিশোধের কথা জানায়। টাকা দেওয়ার ১৫ দিন পর পেকুয়ার একটি ঘাট থেকে ট্রলারে উঠিয়ে দেয় রাজু। ওই ট্রলারে মানব পাচার চক্রের আরও কয়েকজন সদস্যসহ ১৫ থেকে ২০ জন ভুক্তভোগী ছিল। ২ থেকে ৩ দিন গভীর সাগরে ঘোরাফের করে হঠাৎ গভীর রাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপে তাদের নামিয়ে দেয়। সকাল হলেই ভুক্তভোগীরা বুঝতে পারে মালেশিয়া নয় তারা সেন্টমার্টিনে আছেন। সেখানে ভুক্তভোগীরা কয়েকদিন মানবেতর জীবন যাপন করে নিজেদের মতো করে বাড়ি ফিরে আসেন। এ ঘটনায় ভিকটিম জয়নাল আবেদীন বাড়ি ফিরে রাজুর কাছে টাকা ফেরত চাইলে তাকে মারধর করে এবং অপহরণ করে মেরে ফেলার হুমকি দেয়।এভাবে তারা একের পর এক মানবপাচারের ফাদে ফেলে মানুষ থেকে হাতিয়ে নেন কষ্টার্জিত টাকা।