মৌলভীবাজার জেলায় কুলাউড়া উপজেলার পাহাড়ী টিলায় ৩টি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান ও বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টার সময় মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তাদের নিয়ে অভিযানের সময় ৩টি পাহাড়ী আস্তানা থেকে ৯৫টি ডেটোনেটর, ৫ কেজি বিস্ফোরক, ১৪টি পিস্তলের গুলি, রামদা ও নগদ ২ লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়। সোমবার রাতে জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ অভিযান পরিচালনা করা হয় দূর্গম পাহাড়ী এলাকায়।
তিনি আরও বলেন, জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলী গ্রামের ওই জঙ্গি আস্তানা এলাকায় আরও জঙ্গি আস্তানা রয়েছে এমন সন্ধেহে অভিযানে নেমে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। আটককৃত সকলেই নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদ কাফেলা’র সদস্য। আপাতত পাহাড়ী এলাকায় অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসাবাদেরও প্রয়োজন। জিজ্ঞাসাবাদে নতুন তথ্য বের হলে আবার ওই এলাকায় অভিযার চালানো হবে।
মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান পিপিএম (বার) ও কাউন্টার টেরিরিজম ইউনিটের সহকারী পুলিশ কমিশনার সফিক, মৌলভীবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) সুদর্শন কুমার রায়, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আব্দুস ছালেক সহ পুলিশের উর্ধ্বোতন কর্মকর্তারা।
মঙ্গলবার সকাল ৭ টার সময় আটককৃত ১৭ জঙ্গির মধ্যে ৩ জনকে নিয়ে অভিযানে ওই এলাকায় যায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। অভিযানে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সার্বিক সহযোগিতা করে।
কর্মধা ইউনিয়ন কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে ১০টি সিএনজি অটোরিক্সা যোগে আটককৃত ১৭ জঙ্গির মধ্যে ৩ জনকে নিয়ে অভিযানে নামে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। তারা প্রথমে কালাপাহাড় সহ কয়েকটি পাহাড়ী এলাকায় এ অভিযান করেন। অভিযান দুপুর ২টার সময় শেষ হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।
সোমবার ১৪ আগষ্ট সকালে স্থানীয় জনতার হাতে আটক ১ পঙ্গু জঙ্গি সহ ১৭ জঙ্গিকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার হয়।
আটক জঙ্গিরা হলেন, জুয়েল মাহমুদ (২৮), পিতা-মৃত আব্দুল কাদের, মাতা-সাহারা বেগম গ্রাম-গাঁওপাড়া, থানা-বাগাতি পাড়া, জেলা-নাটোর। সোহেল তানভীর রানা (৩০), পিতা-মোঃ হেলাল উদ্দিন, মাতা-মোছা রাহেলা খাতুন, গ্রাম -পুরাবাড়ি, থানা ও জেলা-সিরাজগঞ্জ। সাদমান আরেফিন ফাহিম (২১), পিতা-হামিদুল হক, মাতা-হাসিনা বেগম, গ্রাম-দক্ষিন শ্রীকুল, থানা-রামু, জেলা-কক্সবাজার। মোঃ ইমতেজার হাসসাত নাবীব (১৯), পিতা-মোঃ এনামুল হক, মাতা-নাছিমা খানম, গ্রাম-মধ্যম মংনোয়া, থানা-রামু, জেলা-কক্সবাজার। ফাহিম খান (১৭), পিতা-আইয়ুব খান বাবু, মাতা-মৃত সাবিনা ইয়াছমিন, গ্রাম -মোল্লাপাড়া, থানা ও জেলা-যশোর। মোঃ মামুন ইসলাম (১৯), পিতা-আব্দুল্লাহ, মাতা-মৃত রোজিনা, গ্রাম-আতাইকোলা, থানা-আতাইকুলা, জেলা-পাবনা। রাহাত মন্ডল (২৪), পিতা-আব্দুর রহিম মন্ডল, মাতা-আঙ্গুর বিবি, গ্রাম-চাদপাড়া, থানা-গোবিন্দবক্স, জেলা-গাইবান্ধা। সোলাইমান মিয়া (২১), পিতা-মোঃ নূর আলম, মাতা-সুলতানা বেগম, গ্রাম-পূর্ব দত্তেরচর, থানা-বকশিগঞ্জ, জেলা-জামালপুর। আরিফুল ইসলাম (৩৪), পিতা-সেকান্তা শেখ উরফে শান্ত শেখ, মাতা-খালেদা বেগম, গ্রাম-গোলা কান্দাইল, থানা-রূপগঞ্জ, জেলা-নারায়নগঞ্জ। মোঃ আশিকুল ইসলাম (২৯), পিতা-আব্দুল লতিফ, মাতা-রাশিদা বেগম, গ্রাম-হাটশিপুর, থানা-সারিয়াকান্দি, জেলা-বগুড়া। মামুন ইসলাম (২৬), পিতা-ফজলু মল্লিক, মাতা-আলেয়া খাতুন, গ্রাম-আতাইকুলা, থানা ও জেলা-পাবনা। তানভীর রানা (২৪), পিতা-নজরুল ইসলাম, মাতা-নূরুন্নাহার, গ্রাম-ছয়াইল, থানা ও জেলা-ঝিনাইদহ। জুয়েল শেখ (২৫), পিতা-জহুরুল শেখ, মাতা-মেহেরুন্নেছা বেগম, গ্রাম-দক্ষিন নলতা, থানা-তালা, জেলা-সাতক্ষীরা। রফিকুল ইসলাম (৩৮), পিতা-ইসলাম মন্ডল, মাতা-হামিদা খাতুন, গ্রাম-কয়জুড়ি শ্রীপুর, থানা-আতাইকুলা, জেলা-পাবনা। মোঃ আবির হোসেন (২০), পিতা-আমজাদ হোসেন, মাতা-আম্বিয়া খাতুন, গ্রাম-দারামোদহা, থানা-সাথিয়া, জেলা-পাবনা। মেহেদী হাসান মুন্না (২৩), পিতা-মোঃ রেজাউল করিম, মাতা-দিনারা মমতাজ, গ্রাম-পূর্ব চিয়াইপাড়া, থানা ও জেলা-মাদারিপুর। কোয়েল (২৫), পিতা-সাখাওয়াত হোসেন, মাতা-জহুরা বেগম, গ্রাম-মুমিনপুর, থানা-ধনবাড়ী, জেলা-টাঙ্গাইল।
উল্লেখ্য এর আগে শুক্রবার ১১ আগষ্ট মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলী গ্রামের পাহাড়ী টিলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি বিকেল থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, সোয়াট ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্যরা ঘিরে রাখেন। শনিবার সকালে টাট্টিউলী ওই বাড়িতে “অপারেশন হিলসাইড” পরিচালনা করে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ওই অভিযানে কোন হতাহতের ঘটনা ছাড়াই ১০ জঙ্গিদের আটক করা হয়।
এসময় তিন শিশুকে উদ্ধার করা হয়। ওই জঙ্গি আস্তানা থেকে ২.৫ কেজি বিস্ফোরক, ৫০ টি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জিহাদি বই, কমান্ডো বুটসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদি, ছুরি-রামদাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র এবং নগদ ৩ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়।