"মানুষের মৃত্যু হলে তাকে কাধে করে মই দিয়ে সীমানা প্রাচীর পার করে খাটিয়ায় তুলতে হয়" এমন কথা বলছিলেন কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের পাশে গড়ে ওঠা একটি বস্তির বাসিন্দা রেহানা খাতুন।
কুষ্টিয়া শহরের মাঝে কোর্ট স্টেশনের সামনে সরকারী খাস জমিতে বসবাস করে ছিন্নমূল নিম্নআয়ের কয়েকটি পরিবার। জমির তিন দিকে সীমানা প্রাচীর অপরদিকে পুকুর। সামনে রেলওয়ের জায়গা যেখানে গড়ে উঠেছে কুষ্টিয়া শহরের একমাত্র রেলওয়ে স্টেশন। ডান সাইডে জেলা রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়, পিছনে কুষ্টিয়া ইসলামিয়া কলেজ এর একাডেমি ভবন ও কলেজের মালিকানাধীন পুকুর, বামে কলেজ মার্কেট। কোন দিক দিয়ে দুই এক ফিট পায়ে হাঁটার রাস্তা নেই। তাদের একমাত্র ভরসা কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশনের প্রাচীর-এ বাঁশের মই বাধিয়ে প্রাচীরের উপর দিয়ে যাতায়াত করা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৃদ্ধ, বৃদ্ধা, শিশু, নারী, পুরুষ স্টেশনের সাইডে প্রাচীরে মই দিয়ে পারাপার হচ্ছে। যা বয়স্ক ও নারী, শিশুদের জন্য অনেক ঝুকি পূর্ণ। এই বস্তির বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা জানান, তিনি স্টেশনের পাশে হকারী করে জিবীকা নির্বাহ করে। সামান্য একটু আয় দিয়ে বউ বাচ্চা নিয়ে কোন রকম বেঁচে আছেন। শহরে বা আশে পাশে জমি কিনে সেখানে বসবাস করার সম্ভব না। বাধ্য হয়ে এখানে বাস করি। আমারমত এখানে সবাই নিম্ন আয়ের মানুষ গুলো কোনরকম মাথা গুজে আছে এখানে। তবে বসবাসকারীর মধ্যে কেউ মারা গেলে বাড়িতে মরদেহ গোসল দিয়ে কয়েকজন মিলে মইয়ের মাধ্যমে প্রাচীর পার করে খাটিয়ায় তুলে গোরস্থানে নিয়ে যেতে হয়। সরকারের কাছে আমাদের কোন কিছু চাওয়ার নেই শুধু আমাদের একটু হাঁটার মতো রাস্তা দিলেই আমরা খুশি। মর্জিনা খানম নামের এক গৃহিণী জানান, আমাদের দুঃখ কষ্ট কেউ দেখেনা। সন্তান সম্ভাবনা এক নারীকে ডেলিভারির জন্য বা কোন অসুখ-বিসুখে হাসপাতালে সেবা নিতে যেকে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এর আগে এমপি কথা দিয়েছিলেন রাস্তা করে দিবো। এখনো রাস্তা হয়নি। এলাকার কাউন্সিলরকে বহুবার বলেও কোন কাজ হয়নি। বেলী খাতুন জানান, আমারা এখানে প্রায় ৩০ পরিবার বসবাস করি। আমাদের চলাচলের সকল রাস্তা বন্ধ। কেউ একটু রাস্তা দেয়ানা। বাধ্যহয়ে ঝুকি নিয়ে মই দিয়ে পারাপার হই। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার স্থানীয় ২ নং ওযার্ড কাউন্সিলর খন্দকার মাজেদুল হক ধীমান জানান, পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মধ্যেও সরকারী এই খাস জমিতে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করে। তাদের একটি রাস্তার অভাবে মানবেতর চলাফেরা করতে হচ্ছে সেটা অস্বীকার করতে হবে। তবে একদিকে জেলা রেজিষ্ট্রি অফিস, একদিকে কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন অন্য দিকে ইসলাময়া কলেজ। আমরা সবার সাথে আলোচনা করেছি। কেউ একটু রাস্তা দিতে রাজি হচ্ছে না। সবগুলো সরকারী গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় তারা জমি ছেড়ে রাস্তা না দিলে আমরা কিছু করতে পারি না। সমাজকর্মী, এস.,এম.মাহফুজ উর রহমান জানান, এখানে বসবাস করা পরিবারগুলো একটি রাস্তার অভাবে চরম কষ্টে মই দিয়ে পারাপার হচ্ছে। অনেক সময় পারাপার হতে দূর্ঘটনা ঘটছে। মানবিক দৃষ্টিতে তাদের চলাচলের জন্য এই মানুষ গুলোর জন্য রাস্তা প্রয়োজন।