ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

যৌন হেনেস্থার অভিযোগে জাবি শিক্ষকের অব্যহতির দাবিতে অনশন

জাবি প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১০:৪৭:০০ অপরাহ্ন | শিক্ষা
যৌন হেনেস্থা ও একাডেমিক হ্যারাজমেন্টসহ বিভিন্ন অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের(জাবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমির হোসেন ভুঁইয়ার অব্যহতির দাবিতে অনশন ও বিভাগে তালাবদ্ধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। 
 
রবিবার(২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে অধ্যাপক মো.আমির হোসেন ভূঁইয়ার অব্যহতি এবং ওই বিভাগের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কমিটি থেকে তাঁকে অপসারণের দাবি জানিয়ে বিভাগের ফটকে তালাবদ্ধ করে অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। এসময় বিভাগের শ্রেণি ও অফিস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়৷ 
 
শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘ সময় ধরে একাডেমিক ও সামাজিক হ্যারাজমেন্টের সঙ্গে জড়িত অধ্যাপক আমির হোসেন৷ পরীক্ষায় নাম্বারের ক্ষেত্রে বৈষম্য, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকসুলভ আচরণ না করা, নারী শিক্ষার্থীদের যৌন হেনস্থা ও পড়াশোনার নামে শ্রেণিকক্ষে অপ্রাসঙ্গিক আলোচনা করে থাকেন তিনি৷ এছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের বডি শেমিংসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে সাময়িক অব্যহতি ও ওই বিভাগের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কমিটি থেকে অধ্যাপক আমির হোসেন ভূঁইয়ার অপসারণের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা৷
 
নাম প্রকাশ না করা শর্তে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের এক নারী শিক্ষার্থী জানান,'তার দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়ই সন্দেহজনক ছিল। তিনি কখনো মেয়েদের দিকে শিক্ষকসুলভভাবে তাকাতেন না। মেয়েদের মুখের দিকে তাকানোর আগে অন্যদিকে তাকাতেন। ক্লাসে যখন প্রেজেন্টেশন হতো, তিনি শুধুমাত্র মেয়েদের প্রেজেন্টেশন মনোযোগ দিয়ে শুনতেন, কিন্তু ছেলেদের প্রেজেন্টেশন প্রায়ই এড়িয়ে যেতেন। শুধু পড়াশোনা সম্পর্কিত প্রশ্নই নয়, ভাইভার সময় ব্যক্তিগত জীবন এবং অন্যান্য বিষয় নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলতেন, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল অত্যন্ত অস্বস্তিকর।' 
 
তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে একাধিকবার মুঠোফোনে অধ্যাপক আমির হোসেন ভূঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়৷  
 
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন রুনু বলেন,'আমাদের কাছে এ বিষয়ে আগে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আসেনি৷ তবে আমরা মৌখিকভাবে কয়েকবার শুনেছি। তবে যখনি আমরা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেয়েছি আমরা একাডেমিক মিটং ডেকেছি এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে তদন্তের জন্য উপাচার্যের নিকট প্রেরণ করি৷ আমি চাই, অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে এ ধরণের ঘটনার একটি বিচার হওয়া উচিত এবং এতে করে যতোটা সম্ভব দ্রুত বিভাগের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চাই।' 
 
এদিকে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) অধ্যাপক মো. মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য(প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ও প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম৷ এসময় তাঁকে সাময়িক অব্যহতি দিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা৷ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন তারা৷ 
 
তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য(শিক্ষা) অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন,'আমরা সকালে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে এসেই তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি। যেহুতু বিষয়টি সেনসিটিভ সেজন্য আমরা দ্রুত কাজ করতে বদ্ধ পরিকর। আমরা ইতমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটিকে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।'