ঢাকা, শনিবার ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮শে পৌষ ১৪৩১

লক্ষ্মীপুরে বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় র‌্যাব দিয়ে তুলে নির্যাতনের অভিযোগ।

মু.ওয়াহিদুর রহমান মুরাদ ,লক্ষ্মীপুর: | প্রকাশের সময় : সোমবার ১৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৩:৫০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
 
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নে দ্বীন মোহাম্মদ নামে এক ব্যবসায়ীর মাছের ঘের থেকে বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ায় তাকে মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। বালু উত্তোলনে মাছের ঘেরে মাছ মারা যাওয়ায় শুক্রবার তিনি বালু উত্তোলনকারী আলাউদ্দিন ও তার কয়েক সহযোগীর বিরুদ্ধে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন। একই দিন বালু উত্তোলনে বাধা দেয়াসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ এনে দ্বীন মোহাম্মদ ও তার ভাইসহ ৬জনকে আসামী করে মামলা দেন আলাউদ্দিন। পরে ভোররাতে ওই মামলায় ৩ নং অভিযুক্ত দীন মোহাম্মদের ছোট ভাই ওয়ারেসকে র‌্যাব বাড়ী থেকে আটক করে নিমর্ম নির্যাতনের একদিন পর থানায় হস্তান্তর করে বলে দাবি ওই পরিবারটির। 
 
তবে র‌্যাব বলছে, তাকে ওই মামলায় আটক করে রাতেই চন্দ্রগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
 
 এদিকে তুচ্ছ এঘটনার মামলায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ১১ এর এ ধরনের অভিযান ও পরে আসামী নির্যাতনের ঘটনাকে অমানবিক বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। 
 
রোববার দুপুরে ওয়ারেচ জামিনে বের হলেও আতঙ্কে কোন কথা বলতে চায়নি। এদিকে বালু উত্তোলনের কারণে বসতঘর হুমকির মুখে থাকায় প্রতিবন্ধী মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের আহাজারি করতে দেখা যায়।
 
শুক্রবার ভোররাতে সদর উপজেলার কুশাখালী ইউনিয়নের পুকুরদিয়া গ্রামের গোলন্দাজ বাড়িতে এঘটনা ঘটে।
 
ভুক্তভোগী দীন মোহাম্মদ পুকুরদিয়া গ্রামের গোলন্দাজ বাড়ির আবুল বাসারের ছেলে। আটক ও নির্যাতনের শিকার ওয়ারেছ ও তার ছোট ভাই।
অভিযুক্ত আলাউদ্দিন, জসিম, মাইনুদ্দিন, রাজু, রাব্বি একই ইউনিয়নের বাসিন্দা।
 
কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা জানালেন, মঞ্জু এলাকায় মানুষের জমি জোর করে দখল করে রাখে। র‌্যাবের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনের সাথে মঞ্জুর ঘনিষ্টতার সুযোগে মানুষকে হয়রানি করছে বলেও জানালেন অনেকেই। এর আগেও র‌্যাব লক্ষ্মীপুর ক্যাম্পে দ্বীন মোহাম্মদকে ডেকে নিয়ে মঞ্জুর সাথে মিল দিয়ে চলার বিষয়ে পরামর্শ দেন বলে জানান স্থানীয়রা।
 
ভুক্তভোগী দ্বীন মোহাম্মদ জানায়, তিনি স্থানীয় শামছুল হুদার কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন। সম্প্রতি ওই মাছের ঘের থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী মঞ্জুর নির্দেশে বালু উত্তোলন শুরু করে আলা উদ্দিনসহ কয়েকজন। এতে করে মাছের ঘেরে মাছ মারা যাওয়ায় তিনি বাধা দিলে তারা তাকে র‌্যাব-১১ সিইও কর্ণেল তানভীর মাহমুদ পাশা এ ব্যাবসায় অংশীদারিত্ব রয়েছে বলে হুমকি দেয়। এসময় তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো শুরু করে। পরে তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। একই দিন বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ার  অভিযোগ এনে আলা উদ্দিন চন্দ্রগঞ্জ থানায় দীন মোহাম্মদ ও তার ভাইদেরসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ভোররাতে সাদা পোশাকে র‌্যাব সদস্যরা এসে তার ভাই ওয়ারেছকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে একদিন পর থানায় সোপর্দ করে বলে তিনি দাবি করেন।
 
দ্বীন মোহাম্মদের স্ত্রী ও ওই বাড়ির কয়েকজন বাসিন্দা জানালেন, প্রতিদিনের মতো ভোররাতে সাহরি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন দ্বীন মোহাম্মদ ও তার পরিবার। শুক্রবার ভোররাতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী (র‌্যাব) বাড়িতে এসে ঘুম থেকে সবাইকে উঠিয়ে তল্লাশি চালিয়ে ওয়ারেছকে নিয়ে যায়। সকালে চন্দ্রগঞ্জ থানায় যেতে বললেও থানায় ওই দিন ওয়ারেছের কোন খবর পাননি তারা।
 
তবে র‌্যাব-১১ বলছে, ওয়ারেছ নামে একজনকে আটক করে থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।
 
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মজিবুর রহমান বলেন, বালু উত্তোলনে বাধা দেয়ার মামলায় ৩নং আসামী ওয়ারেছকে আটকের পর রাতেই র‌্যাব থানায় হস্তান্তর করেছে।
 
চন্দ্রগঞ্জ থানার ওসি তৌহিদুর রহমান জানালেন, র‌্যাব ওয়ারেছকে আটক করে থানায় দিলে আদালতে ওয়ারেছকে পাঠানো হয়েছে।