ঢাকা, রবিবার ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২০শে মাঘ ১৪৩১

শরীয়তপুর জেলা পরিষদে দুদকের অভিযান, অনিয়মের তদন্ত শুরু

জাবেদ শেখ, শরীয়তপুর | প্রকাশের সময় : সোমবার ২০ জানুয়ারী ২০২৫ ১০:৩৩:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

শরীয়তপুর জেলা পরিষদে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এবং ২০টি প্রকল্পের অনিয়মের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রোববার (১৯ জানুয়ারি) মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার সমন্বিত মাদারীপুর জেলা কার্যালয়ের একটি দল শরীয়তপুর জেলা পরিষদে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান শেষে কিছু প্রকল্পের নথিপত্র ও কিছু প্রকল্পের মালামালের নমুনা নিয়ে গেছে দুদকের ওই দলটি। প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে অসঙ্গতি পেয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।

মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার সমন্বিত মাদারীপুর কার্যালয় (দুদক) সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) শরীয়তপুর জেলা পরিষদের ২০২২-২০২৩ অর্থ বছর ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে বাস্তবায়ন করা বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছে। ওই দুই অর্থ বছরে বাস্তবায়ন করা ২০টি প্রকল্পের বিষয় নিয়ে তদন্ত করছে দুদক। ওই সময় জেলা পরিষদের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান সাবেদুর রহমান খোক সিকদার, সদস্য কামরুজ্জামন উজ্জল, আসমা আক্তার, সাখাওয়াত হোসেন, জেলা পরিষদের তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম হোসেন (বর্তমানে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক হিসেবে নাটোর জেলায় কর্মরত), সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুর হোসেনের বিরুদ্ধে প্রকল্পগুলোতে অনিয়মে সহায়তার অভিযোগ পেয়েছে দুদক।

রোববার (১৯ জানুয়ারি)  বেলা ১১টার দিকে দুদক মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে ৬ সদস্যর একটি দল শরীয়তপুর জেলা পরিষদে অভিযান পরিচালনা করেন।

অভিযান শেষে ওই প্রকল্প গুলোর বিভিন্ন নথিপত্র ও প্রকল্পের আওতায় কেনা মালামালের নমুনা সংগ্রহ করে তার মূল্যযাচাই ও পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায় দুদকের ওই দলটি। সেই সঙ্গে গত দুটি অর্থ বছরে জেলা পরিষদ থেকে সড়ক নির্মাণ, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, ডাক বাংলো নির্মাণ, শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণসহ অন্তত ২০টি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিছু প্রকল্পে অসঙ্গতির প্রমাণ মিলেছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানা সদরে একটি ডাক বাংলো নির্মাণ প্রকল্প দেখিয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ৫০ লাখ টাকা ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ নেওয়া হয়েছে।

অথচ ওই স্থানে কোনো ডাক বাংলো নির্মাণ করা হয়নি। ডাক বাংলো নির্মাণের জন্য কোনো দরপত্রও আহ্বান করা হয়নি। ওই দুটি অর্থ বছরে শীতবস্ত্র হিসেবে ৫৫ লাখ টাকার কম্বল ক্রয় করা হয়। ওই কম্বল কম মূল্যে ক্রয় করে বেশি টাকা ক্রয় দেখানো হয়েছে।

জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নুর হোসেন বলেন, প্রকল্পগুলো ইজিপি টেন্ডারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

আর ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরে ডাক বাংলো নির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয় দুই দফায় দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। ওই সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কিভাবে তদবির করে ওই টাকা এনেছেন তা আমরা বলতে পারব না। ডাক বাংলো নির্মাণের কোনো দরপত্র দেওয়া হয়নি এবং ওই টাকা জেলা পরিষদের অ্যাকাউন্টে রয়েছে।

দুদকের মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে এবং আমাদের ডিডি মহোদয়ের দিক নির্দেশনায়। আমরা জেলা পরিষদ শরীয়তপুরে একটা অভিযান পরিচালনা করছি।

তিনি আরো বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পরিষদের ২০টি প্রকল্পের অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিকভাবে কিছু প্রকল্পে অসঙ্গতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারপরও নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন ও তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষ করার পর আমরা প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাব।

বায়ান্ন/প্রতিনিধি/পিএইচ