ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শেখ হাসিনাকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টের ভূয়সী প্রশংসা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৪ অক্টোবর ২০২২ ০৭:০৯:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

নর্দার্ন ভার্জিনিয়ায় হোটেল রিৎজ-কার্লটনের বলরুমে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট পেটুলা ভোরাকের সেলফিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 

বাংলাদেশে নারীদের বিস্ময়কর অগ্রগতি, শিক্ষা আর দারিদ্র্য নিরসনের পাশাপাশি বিশ্ব মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকা ওয়াশিংটন পোস্ট। সোমবার যুক্তরাষ্ট্র্রের বহুল প্রচারিত এই দৈনিকে কলামিস্ট পেটুলা ভোরাক বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপক প্রশংসা করে একটি নিবন্ধ লিখেছেন।

 

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নর্দার্ন ভার্জিনিয়ায় হোটেল রিৎজ-কার্লটনের বলরুমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে নিবন্ধটি লিখেছেন পেটুলা। এতে প্রধানমন্ত্রীর সাফল্যের গল্প তুলে ধরে ভোরাক লিখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী নারী সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

 

 

পেটুলা লিখেছেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আব্দুল্লাহ নিয়ামি তার ছয় বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে নর্দার্ন ভার্জিনিয়ায় এসেছেন। তার ফার্স্ট গ্রেডের শিশু কন্যাকে সেখানে নিয়ে এসেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এক নজর দেখার জন্য। নিয়ামি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে তাকে (মেয়েকে) দেখাতে চেয়েছিলাম।’

 

গত সপ্তাহে নর্দার্ন ভার্জিনিয়ার রিৎজে অবস্থান করছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লন্ডনে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার পর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার জন্য সেখানে যান তিনি। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে বিশ্বজুড়ে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠায়’ বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

 

প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট পেটুয়া লিখেছেন, ‘এই নারী এক শক্তি।’

 

 

তিনি লিখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী নারী সরকার প্রধান হওয়ার পাশাপাশি, রাশিয়ার চেয়ে বেশি জনসংখ্যার একটি দেশের নেতৃত্বদান এবং অন্তত ২০ বার গুপ্তহত্যার চেষ্টা; বিশেষ করে তার চারপাশের ভিড়ের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হ্যান্ড গ্রেনেডের এক রক্তাক্ত হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া হাসিনা একজন দাদী। সম্প্রতি ছেলে এবং ১৬ বছর বয়সী নাতনির সাথে নিজের ৭৬তম জন্মদিন উদযাপন করেছেন তিনি, যারা রাজধানী ঢাকার বাইরের এক শহরতলীতে থাকেন।

 

পেটুয়া বলেছেন, আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, পৃথিবীতে একজন প্রধানমন্ত্রী কীভাবে অন্য সাধারণ একজন দাদীর মতো হওয়ার সময় পান? জবাবে তিনি বলেন, আমি তাদের জন্য রান্না করি। মুরগী বিরিয়ানি... আমার ছেলের বাড়িতে, আমার নিজের রান্নাঘর আছে; সেটা শুধু আমার জন্যই।

 

ওয়াংশিটন পোস্টের এই কলামিস্ট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ব্যস্ততার ফাঁকে আমরা এসব জেনেছি এক সাক্ষাৎকারে। আমরা রিৎজ-কার্লটনের চমৎকার একটি কক্ষে বসেছিলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর একজন অনুবাদক ও চিফ অব স্টাফ। এছাড়াও তার পিতা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি ১৯৭৫ সালে পরিবারের অন্যান্য ১৭ জন সদস্যের সাথে নিহত হন; তার একটি বিশাল প্রতিকৃতি ছিল।

 

পেটুয়া লিখেছেন, তিনি একটি জটিল দেশের নেতৃত্ব দেন। এবং তিনি একজন জটিল নেতা। জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা মিয়ানমারের সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে বসতি স্থাপনকারী ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর জন্য সহায়তা চেয়েছেন।

 

তিনি বলেন, ‘শিবির জীবন ভালো না। তারা তাদের দেশে ফিরতে চায়।’ পেটুয়ার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার দেশের অভিবাসী পরিস্থিতি আমেরিকার সাথে তুলনা করা যায় না।

 

 

এই অভিবাসীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কেন চিন্তিত হতে হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে ডান থেকে বামে হাত নেড়ে নেড়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকা ... একটি বিশাল দেশ। প্রচুর জমি, প্রচুর জায়গা রয়েছে। কাজের সুযোগ রয়েছে।’

 

১৭ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষকে নিয়ে জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। পেটুয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, আমরা ছোট দেশ। এ সময় তার চিফ অব স্টাফ বলেন, আমরা উইসকনসিনের আয়তনের সমান।’

 

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত নিবন্ধে দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের জিরো-টলারেন্স নীতিরও ব্যাপক প্রশংসা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, একজন নারী হিসেবে তিনি বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও শিক্ষার সংগ্রাম, অধিকাংশ নারী যে ধরনের বাধার সম্মুখীন হন এবং তাদের স্থবিরতা একটি জাতির অগ্রগতিকে কীভাবে ধীর করে দেয় তা আরও গভীরভাবে বোঝেন।

 

শেখ হাসিনা বলেছেন, গত এক দশকে তার সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে দেশে দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষার সুযোগের সম্প্রসারণ এবং উন্নত আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, কুঁড়েঘর আর নেই। গৃহহীনদের ঢেউতোলা টিনের ছাদসহ ইটের তৈরি ঘর উপহার দেওয়ার কথা জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আবাসনকে একটি মানবাধিকার করে তুলেছে বাংলাদেশ।

 

‘আর এই ঘরগুলো পুরুষ এবং নারী উভয়ের নামে করা হবে। যদি তাদের বিচ্ছেদও হয়ে যায়, তাহলে ওই ঘরের মালিক হবে নারী। পুরুষ নয়।’

 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির উচ্চ সফলতার স্বীকৃতিও দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জন্মের সময় দরিদ্রতম দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম থাকলেও এটি ২০১৫ সালে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাস্থ্যসেবা ও আবাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীদের মাঝে বিনিয়োগ দেশকে উন্নত করতে সাহায্য করেছে।

 

প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে নর্দার্ন ভার্জিনিয়ায় হোটেল রিৎজ-কার্লটনের বলরুমে যান মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ চৌধুরী 

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এসব বলার পর পশ্চিমে শান্ত সফর শুরু করেছেন বলে ভেবেছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তার সফরের কথা দ্রুতই ওই এলাকার বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। পেটুয়া লিখেছেন, এবং যখন তিনি আমার সাথে সাক্ষাৎকারটি শেষ করেন, তখন হোটেলের লবিটি তার ভক্তদের দিয়ে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। এই ভক্তদের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ইউসুফ চৌধুরী (৬৬)।

 

তিনি বলেন, ‘আমি সকাল ৬ টায় বোস্টনে একটি বিমানে উঠেছিলাম।’ একটি কার্ড বের করে ইউসুফ চৌধুরী বলেন, তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।

 

হোটেলের কর্মীরাও অভিভূত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর অতীতের ২০ বারের হত্যাচেষ্টার কথা মনে আছে— যে কারণে তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কড়াকড়ি ছিলেন। জনতা উল্লাস করছিল এবং ১৯৬৬ সালের মতো উল্লাস করছিল।