পৌষে হাড় কাঁপানো শীতে জর্জরিত উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সাধারণ মানুষ। তাপমাত্রা কমে বেড়েছে শীতের মাত্রা। হাড় কাঁপা শীতে নাকাল হয়ে পড়েছে উত্তরের এই জনপদ। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে মানুষ।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বুধবার রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৭ ডিসেম্বর রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বছর এই দিনে রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫-২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রেকর্ড হয়েছে।
কদিন ধরে হাড় কাঁপানো শীত পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির খেঁটে খাওয়া মানুষ। ভোর ৬টা থেকে সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কনকনে শীতের কারণে কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে অনেকের। তবে পেটের তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে।
চা-শ্রমিক আনোয়ার হোসেন, শাহজাহান ও জাহেরুল ইসলাম জানান, সকালে প্রচণ্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। কনকনে শীতের করছে, চা বাগানে কাজ করতে গেলে চা পাতা বরফের মতো লাগে। বাগানের পাতা তুলতে গিয়ে হাত-পাতা অবশ হয়ে আসে। তারপরও কাজ করতে হচ্ছে।
মহানন্দা ও ডাহুক নদীর পাথর শ্রমিক এরশাদুল, বাদল, আনোয়ার হোসেন জানান, সকালে নদীর পানি বরফের মতো ঠান্ডা থাকে। একদিকে কনকনে শীত, আরেকদিকে নদীর পানি বরফের মতো ঠান্ডা। কাজ করতে খুব কষ্ট হয়। তবুও জীবিকার টানে কাজ করতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বেলা গড়ালেই হিমেল বাতাসে ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। সন্ধ্যার পর থেকে খুব ঠান্ডা। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘার কাছাকাছি থাকায় শীতের মাত্রাও একটু বেশি হয়। সন্ধ্যার পর থেকে উত্তরের হিমেল হাওয়ায় শীতের পারদ নেমে আসে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত শীত অনুভূত হয়। দিনেও আগের মতো গরম নেই।
এদিকে দিন-রাতে তাপমাত্রা দুই রকম থাকায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাঁশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, তাপমাত্রা অনেকটা কমেছে। গত ৪ দিন পর আজ জেলায় তাপমাত্রা ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। যা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে গত ১৭ ডিসেম্বর ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এর আগে ২১ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৩, ২০ ডিসেম্বর ১১ দশমিক ৯, ১৯ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৪ ও ১৮ ডিসেম্বর ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।