সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহীতা ও দ্রুততার জন্য খুলনা বিভাগের শীর্ষে উঠে এসেছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস। গেল চার মাসে চার হাজারের বেশি মামলা নিষ্পত্তি করে ভূমি সেবার বিভিন্ন সূচকে খুলনা বিভাগে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেন নাগরিক সেবার গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তরটি। এর আগে তিনমাসে জেলার শীর্ষ স্থান অর্জন করেন কালীগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস।
চলতি বছরের ২২ এপ্রিল কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মোঃ শাহিন আলম যোগদানের পর এ অফিসের চিত্র পাল্টে যায়। তিনি ৩৮ তম বিসিএস এর কর্মকর্তা। এসিল্যান্ড হিসেবে কালীগঞ্জ তার প্রথম কর্মস্থল। চার মাসের কিছু বেশি সময় কালীগঞ্জে যোগদান করলেও বেশিরভাগ সময় প্রতিকুল রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিক চ্যালেঞ্জের ভিতর কাজ করে এমন চমক দেখিয়েছেন। জনবল সংকট, দক্ষতার ঘাটতি আর সার্ভারে সমস্যা মধ্যেও নাগরিক সেবা দিয়ে উপজেলাবাসির নজরে এসেছেন তরুণ এ কর্মকর্তা।
নামজারি নিষ্পত্তির সরকার নির্ধারিত সময়সীমা ২৮ দিন এবং মিসকেস এর ক্ষেত্রে ৯০ দিন। ২০১৬ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩০০ এর মত মিসকেস পেন্ডিং ছিল। গত চার মাসে যার অর্ধেক নিষ্পত্তি করেছেন। এসিল্যান্ড এর রুমসহ অফিসের প্রত্যেক রুমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। আগে শুধু বাইরে ক্যামেরা ছিল।
সেবার প্রদানে জবাবদিহীত নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অফিসের কয়েকজনের বিরুদ্ধে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি এবং অন্যত্র বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাবলিক টয়লেট ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, আইডি কার্ড প্রদান, রেকর্ড রুম সংস্কারসহ বিভিন্ন ভিজিল্যান্স কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।
দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে সেবাগ্রহিতার ফোন নাম্বারসহ আবেদন ও শুনানীতে নিজেদের উপস্থিত থাকার জন্য বলা হয়েছে। তবে, এ বিষয়ে জনগণের ইতিবাচক সাড়া কম পাওয়া যাচ্ছে। প্রায় ৪০০ খতিয়ান অনলাইনে প্রস্তুত করা হয়েছে। যদিও অনলাইনে প্রস্তুত খতিয়ানের ৯০ শতাংশ এখনো ডাউনলোড করেননি গ্রহিতারা। এ ক্ষেত্রে গ্রহিতাদের সচেতনতার অভাবে দালালদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
একই সময়ে উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসসমূহ পরিদর্শন করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অফিসে যাতে জনগণকে ৫ মিনিটের বেশি অপেক্ষা না করতে হয় সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন আড়পাড়ার আল্পনা রানি সাহা নামে এক ভূমির মালিক জানান, আমি একটি নামজারির আবেদন করেছিলাম। সরকার নির্ধারিত সময় ২৮ দিন হলে মাত্র ১৪ দিনে আমার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সরকার নির্ধারিত ফি নিয়ে অল্প সময়ে নামজারি আমার কাছে একেবারেই অকল্পনীয়। এর আগেও আমি ও আমার পরিবার একই ধরনের নামজারির আবেদন করে দুই থেকে চার মাস সময় লেগেছিল, সাথে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছিল।
কালীগঞ্জ উপজেলা ৬নং বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা জহির রায়হান জানান, গত দেড় বছর আগে করা আমার একটি মিসকেস আবেদন ছিল। বর্তমান ভূমি অফিসার আসার পর আমার অভিযোগটি জানিয়েছিলাম। এরপর মাত্র ৪০ দিনে তা সম্পন্ন হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছে একই অফিসে একটি মিসকেস শেষ হতে আগে ১ থেকে ৩ বছর পর্যন্ত লেগে যেত। এখন দুই মাসের মধ্যে সরকার নির্দারিত ফিতে সে কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মো. শাহিন আলম যোগদানের পর চিত্র পাল্টে গেছে বলে জানায় স্থানীয়রা।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহিন আলম বলেন, কালীগঞ্জকে ভূমি সেবার একটি রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে যেতে চাই। ভূমি সেবাই স্বচ্ছতা নিশ্চিতকরণ ও হয়রানি দূরীকরণ আমার প্রধান লক্ষ্য। জনগণের হয়রানি দূরীকরণ, অফিসের সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দালালদের দ্বারস্থ না হয়ে নিজেদের ফোন নাম্বার দিয়ে আবেদন করা, শুনানীতে উপস্থিত হওয়া ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ বিষয়ে সচেতন করতে কাজ করছি। তবে দুঃখের বিষয় জনগণের সচেতনতার অভাবে দাদালরা সুযোগ পাচ্ছে। গত চার মাসে প্রায় ৪০০ খতিয়ান ওয়েবসাইটে প্রস্তুত করা হলেও তা ডাউনলোডে সেবাগ্রহিতাদের তেমন কোন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। এজন্য সেবাগ্রহিতাসহ সাধারন মানুষের সহযোগীতা প্রয়োজন বলে যোগ করেন।