ঢাকা, রবিবার ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৮শে পৌষ ১৪৩১

হরিনাকুন্ডুতে ভাত খেতে চাওয়ায় অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে মারধর করলো সন্তান

বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ২ নভেম্বর ২০২৩ ১০:০৬:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

বিছানায় শুয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন আখিরন নেছা। তাঁর হাত, পা, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত। মানুষ গেলেই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন ওই অসহায় শতবর্ষী বৃদ্ধা। তাঁর চাহনিতে শুধুই অসহায়ত্বের ছাপ। চোখেমুখে আতঙ্ক আর ভয়ের আশঙ্কাও রয়েছে। কী হয়েছে জানতে চাইলে তাঁর দু‘চোঁখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। পাশে বসে সন্তানের আদরে কী হয়েছে মা বলতেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বুধবার দুপরে ভাত খেতে চাওয়ায় ছেলে মন্টু মন্ডল মারধর করেন তাকে। আখিরন নেছা ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার হরিশপুর গ্রামের মৃত. মঙ্গল মন্ডলের স্ত্রী।

স্থানীয়রা জানান, বিধবা আখিরন নেছার তিন ছেলে। ছোট ছেলে সেন্টু মন্ডল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন এক বছর আগে। বড় ছেলে ঠান্ডু মন্ডল অবসরপ্রাস্ত স্কুল শিক্ষক। আর মেজো ছেলে মানোয়ার হোসেন মন্টু মন্ডল পেশায় কৃষক। ছেলেদের সংসারে পালাক্রমে ১৫ দিন করে বসবাস করেন আখিরন নেছা। বছর খানেক আগে বারান্দা থেকে পড়ে গিয়ে ডান পা ভেঙে যায়। আজও জোড়া লাগেনি ভাঙা পায়ের হাড়। হাটুর নিচের হাড় ভেঙে বিচ্ছন্ন হয়ে ঝুলে আছে বছর ধরেই। এছাড়া তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে নানান রোগ। চলতে ফিরতেও পারেন না শতবর্ষষী অসহায় আখিরন নেছা। স্বামী মারা গেছেন প্রায় ২৩ বছর আগেই। সেই থেকেই অসহায় জীবনজাবন করছেন তিনি।

প্রতিবেশিদের দাবি, বয়সের ভারে নুহ্য আখিরন নেছা প্রায়ই সন্তানদের অবহেলার শিকার হন। তাঁকে মাঝে মাঝে মারধর করা হয়। এছাড়া তাঁর নিজ নামে রয়েছে ৮ বিঘা জমি। এই জমি লিখে দিতে চাপ দেন মেজো ছেলে মানোয়ার হোসেন মন্টু মন্ডল। এ নিয়ে প্রায়ই মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করেন তিনি। বুধবার দুপুরে ছেলে ও তার পরিবারের সদস্যরা খাওয়া দাওয়া শেষ করলেও মায়ের খাওয়ার খোঁজ নেননি তারা। ক্ষুদার্থ মা আখিরন নেছা খাবার খেতে চাইলে ক্ষীপ্ত হয়ে তাঁকে গালাগালি করেন সন্তান মন্টু মন্ডল। মা-সন্তানের বিতন্ডার একপর্যায়ে মন্টু মন্ডল ও তার স্ত্রী তারা খাতুন আখের খন্ড ও লাঠি দিয়ে তাঁকে মারধর করেন। সন্তান ও তার স্ত্রীর এমন অমানবিক নির্যাতনে মুখ, হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থান রক্তাক্ত হয়। রক্তাক্ত মাকে উঠানে ফেলে রাখে তারা। ভাঙা পা ও অসুস্থ শরীর নিয়ে চলতে ফিরতে না পারায় ছেচড়িয়ে কোন রকমে রাস্তায় বের হন পাশেই ছোট ছেলের বাড়িতে যাওয়ার জন্য। তখন প্রতিবেশি ইউপি সদস্য বসির উদ্দিন তাকে উদ্ধার করে পৌছে দেন ছোট ছেলের বাসাই।

ইউপি সদস্য বসির উদ্দিন জানান, সন্তানের আঘাতে রক্তাক্ত মাকে দেখতেও আসেনি তাঁর সন্তানরা। তার চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেনি। পরে তিনি ইউপি চেয়ারম্যানকে খবর দিলে পল্লী চিকিৎসক ডেকে এনে চিকিৎসা করান চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে ওই মায়ের দুই সন্তানের সাথে কথা বলতে গেলে স্থানীয়দের সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলে জানান এই ইউপি সদস্য।

ইউপি চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসরাম বাবু মিয়া বলেন, খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। এবং চিকিৎসক ডেকে ওই মায়ের চিকিৎসা করায়। অত্যন্ত অমানবিক ঘটনা। এটি মেনে নেওয়া যাই না। ভাত খেতে চাওয়ায় শতবর্ষী মাকে এভাবে মারধর করা খুবই মর্মান্তিক এবং বেনাদায়ক।

এদিকে এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নির্যাতনের শিকার আখিরন নেছার বক্তব্যের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে তিনি বলেন, প্রায়ই আমার সাথে এমন আচরণ করে মেজো ছেলে মানোয়ার হোসেন মন্টু মন্ডল। ঠিকমতো খেতেও দেয়না। আমি অসুস্থ, আমার চিকিৎসাও করায় না। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে মানোয়ার হোসেন দাবি করেন, তিনি তার মাকে মারধর করেননি। উঠানে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন।

হরিণাকুন্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আজিফ বলেন, ঘটনাটি জানার পর আমি তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।