আলোচিত হলি আর্টিজান মামলার শুনানি শুরু করেছেন হাইকোর্টের নির্ধারিত বেঞ্চ। সব কিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই (জুলাই) শেষ হচ্ছে নৃশংস এই হামলার ঘটনায় করা মামলায় হাইকোর্টের শুনানি। আর শুনানিতে সব জঙ্গির একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা রাষ্ট্রপক্ষের।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার সূত্রপাত। মুহূর্তেই যার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে। সেদিন জঙ্গিদের হামলায় বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে আক্রমণকারী জঙ্গিরাও সবাই নিহত হয়েছিল। পরে গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ।
মামলার বিচারে ২০১৮ সালের ২৬ নভেম্বর ৮ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। বিচার শেষে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর মামলার রায়ে ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও একজনকে খালাস দেন আদালত। ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালত এ রায় দেন।
রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামিরা হলো—হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ। প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়। আর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এ মামলার অপর আসামি মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজানকে খালাস দেওয়া হয়।
এরপর নিয়ম অনুসারে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্তদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) ও খালাস চেয়ে আসামিদের আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। বিচারিক আদালতের এসব নথির মধ্যে মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা, চার্জশিট, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও রায়সহ মোট ২ হাজার ৩০৭ পৃষ্ঠার নথিপত্র হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় জমা করা হয়। পরে সেসব নথিপত্র একত্রিত করে আপিল শুনানির জন্য উত্থাপনের জন্য পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানায়, নথিপত্রগুলো বিজি প্রেসে প্রস্তুত হলে তা ফেরত পাঠানো হয় হাইকোর্টে। এ পর্যায়ে মামলাটির শুনানির জন্য বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন প্রধান বিচারপতি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে মামলাটির শুনানির জন্য কার্য তালিকায় ওঠে। সর্বশেষ গত ৩, ১৫, ১৭ ও ১৮ মে মামলাটির শুনানি হয়।
তবে চলতি মাসেই মামলাটির শুনানি শেষ করা হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সরকার সমগ্র বিশ্বের কাছে জিরো টলারেন্স দেখিয়েছে। আমরাও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি, দ্রুত মামলাটি শেষ করার। আশা করছি চলতি মাসেই মামলাটির শুনানি শেষ হবে। একজন বিচারপতি হজে গিয়েছেন, তিনি ফেরার পর দুই থেকে তিন কার্যদিবসে এই মামলার শুনানি শেষ হয়ে যাবে।’