মৌলভীবাজারে হালকা বৃষ্টি হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ নিয়ে লুকোচুরি। শহর ও সংলগ্ন এলাকায় বিউবোর গ্রাহক প্রায় ৩০ হাজার। বিদ্যুতের চাহিদা থাকে প্রায় ১৪ মেগাওয়াট। এখনো কালবৈশাখীর মৌসুম শুরু হয়নি। এর আগেই সামান্য ঝড়ঝঞ্ঝায় দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ থাকছে না মৌলভীবাজার শহরে। শহরের লোকজন বলেন, ঝড়-বৃষ্টি হলে মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল এবং মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ বিদ্যুৎ লাইনে গাছপালা উপড়ে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গত রবিবার বিকেলের ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা শহরে বিদ্যুৎ ছিল না। এর আগে ২৬ মার্চ রাতে ঝড়ে বিদ্যুৎ লাইনে গাছ পড়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন ছিল।
স্থানীয় ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার শহর ও সংলগ্ন এলাকায় বিউবোর গ্রাহক প্রায় ৩০ হাজার। বিদ্যুতের চাহিদা থাকে প্রায় ১৪ মেগাওয়াট। শহরে বিদ্যুৎ আসে শ্রীমঙ্গল ও ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে। মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল লাইন ২৮ কিলোমিটার এবং মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইন ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ। দুটি লাইনই এসেছে হাওর-বাঁওড়, পাহাড়-টিলা, চা-বাগানসহ গ্রামের ভেতর দিয়ে। দুটি লাইনের পাশ ঘেঁষে রয়েছে ছোট-বড় গাছপালা। এ ছাড়া মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইনের কাছে আছে প্রায় ২০টি বাঁশঝাড়। মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল লাইনের কাছে আছে প্রায় নয়টি বাঁশঝাড়। ঝোড়ো হাওয়া বইলেই এসব বাঁশ, গাছপালা কখনো কাত হয়ে কখনো উপড়ে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর এসে পড়ে। কখনো গাছের ভাঙা ডাল বিদ্যুৎ লাইনে ঝুলে থাকে। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এত দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ লাইনে কোথায় সমস্যা তা খুঁজে পেতে এবং তা অপসারণ করতে অনেকটা সময় লেগে যায়।
মৌলভীবাজার বিউবো সূত্র জানায়, গত রবিবারের ঝড়ে শ্রীমঙ্গল সড়কে দুটি বিদ্যুতের খুঁটি দুমড়েমুচড়ে যায়। মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইনের হাসানপুরে দুটি গাছ সম্পূর্ণ উপড়ে লাইনের ওপর পড়ে। এতে মৌলভীবাজার শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহের দুটি উৎসই বন্ধ হয়ে যায়। বাড়তি জনবল লাগিয়ে ওপড়ানো ও ভেঙে পড়া গাছ অপসারণ করে রাত সাড়ে আটটার সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। এর আগে ২৬ মার্চ রাত ১০টার সময় ঝড়ে মৌলভীবাজার-ফেঞ্চুগঞ্জ লাইনের হাসানপুর এলাকাতেই ১৩টি গাছ বিদ্যুৎ লাইনের ওপর ভেঙে পড়ে। দুটি লাইনের ভেঙে পড়া গাছ সরিয়ে রাত চারটার সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে।
ইকরামুল মুসলিমীন ফাউন্ডেশন শ্রীমঙ্গল এর সভাপতি মাওলানা এম এ রহিম নোমানী বলেন, ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিদ্যুৎ থাকে না। কোন সময় বিদ্যুৎ যাবে, কোনো সময় আসবে, ঠিক নাই। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল আছে। মানুষের অনেক ভোগান্তি। মানুষ খুব অসহায় অবস্থার মধ্যে আছে। জরুরি ভিত্তিতে এর সমাধান দরকার।
শ্রীমঙ্গল শহরের এলাকার বাসিন্দা মোঃ হেলাল ও মোঃ তারেক মিয়া বলেন, ঝড়-তুফানের ভাব হলেই বিদ্যুৎ চলে যায়। দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয় পানির।
মৌলভীবাজার জেলা শহরের তিনজন কাপড়ের ব্যবসায়ী বলেন, এখন রমজান মাস। ঈদের আগে সময়টা তাঁদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ঈদের আগে বেচাকেনা না করতে পারলে কখন করবেন? এ সময়টা যদি বিদ্যুৎ না থাকে, তাহলে ক্রেতা কীভাবে দোকানে আসবে।
বিউবো সূত্র আরও জানায়, মৌলভীবাজারে একটি ‘গ্রিড সাবস্টেশন’ থাকলে এত দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন থাকত না। শহর বা শহরতলির কোথায় সমস্যা হয়েছে, তা দ্রুতই খুঁজে বের করা সম্ভব হতো। সদর উপজেলার রায়শ্রীতে গ্রিড সাবস্টেশনের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় আড়াই বছর। এখনো এই স্থানটিতে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।
বিউবো মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী হাবিবুল বাহার বলেন, গ্রিড সাবস্টেশন হলে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। গ্রিড সাবস্টেশন যত দ্রুত করা যায়, ততই মঙ্গল। তাঁদের যতটুকু জনবল থাকে, তা দিয়েই সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে।