ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেছেন, বিএনপির হরতাল কর্মসূচির পর ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিন ব্যাপী সারাদেশ বিএনপি-জামায়াতের ডাকা অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নাশকতার শঙ্কা রয়েছে। সব কিছু বিবেচনায় রেখে সেভাবেই জনমানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে।
সোমবার (৩০ অক্টোবর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
অবরোধকে কেন্দ্র করে কোনো নাশকতামূলক, ভাঙচুরের পরিকল্পনার তথ্য আপনারা পেয়েছেন কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। তবে নাশকতা যে করবে সমসাময়িক সময়ে কিন্তু ইঙ্গিত দিচ্ছে। কাজেই সে শঙ্কাতো আমাদের রয়েছেই। আমরা সেভাবেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজিয়েছি।
নগরবাসীকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নাশকতাকারীদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহায়তা করার আহ্বান জানান তিনি।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আমরা গতকাল সন্ধ্যায় জানতে পেরেছি আগামী তিন দিনের জন্য রেল, সড়ক ও নৌপথে অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে। সেটি সারা দেশে হলেও ঢাকা মহানগরের মানুষের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কাজ করবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করি, যে নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেব, সেটির সঙ্গে নগরবাসী ও সকল শ্রেণির মানুষ আমাদের সহযোগিতা করবে।
ধ্বংসাত্মক কোনো কাজ রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হতে পারে না উল্লেখ করে ড. খ মহিদ উদ্দিন বলেন, যারা অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে, এতে মানুষ তাদের সঙ্গে সায় দেয়, সেটি এক কথা। যদি সায় দিতে না চায় তবে তাদের অধিকার রক্ষায় প্রটেকশন দিতে হবে। যদি কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। তবে পুলিশ তাদের যে আইনি দায়িত্ব আছে তা প্রয়োগ করবে। নগরবাসীকে নিরাপদ রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা রাখবে ডিএমপি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো রাজধানীতে আমাদের পুলিশ, মোবাইল টহল, স্ট্রাইকিং ফোর্স দায়িত্ব পালন করেছে।
যে বিচ্ছিন্ন দু-একটি ঘটনার কথা বলেছেন, সেক্ষেত্রে আমরা আইনানুগ যে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার সেটি আমরা নেব। বেশ কিছু জায়গায় ধরনের দুষ্কৃতকারী ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মামলা ও আসামি ও গ্রেফতারের বিষয়ে তিনি বলেন, ২৮ অক্টোবর ব্যাপক ঘটনা ঘটেছে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল নয়া পল্টনে। তারা (বিএনপি) প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে কাকরাইল প্রান্তে যারা ছিল তারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি করে আক্রমণাত্মক জায়গায় চলে যায়। স্বাভাবিক কারণে এটির যে ম্যানেজমেন্ট, সাংবাদিক, আমাদের কাছে, মানুষের কাছে যে তথ্য আছে, মিডিয়া আছে, ভিডিও আছে, ছবি আছে। সবগুলো দেখে স্থান চিহ্ন করে অপরাধের যে মাত্রা ও ক্ষয়ক্ষতি সব হিসাব করে প্রকৃত মামলাগুলো করে আসামিদের গ্রেফতার করবো। নিশ্চয় তারা আইনের আওতায় আসবে। তবে এটি কোনো তাড়াহুড়ার বিষয় নয়। কারণ তাড়াহুড়ো করলে সেক্ষেত্রে ভুলত্রুটি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। আমরা চেষ্টা করছি প্রফেশনালিজম মেইনটেইন করে মামলা করার। আসামি গ্রেফতার করা বা চিহ্নিত করা, তাদের আইনের কাছে সোপর্দ করা এটি আমরা প্রফেশনালি করার চেষ্টা করছি।
মামলার সংখ্যা বেড়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, আপনারা ওই দিন দেখেছেন প্রধান বিচারপতির বাসভবন, জাজেজ কমপ্লেক্স এমনকি পুলিশ হাসপাতালসহ অনেকগুলো ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া অনেক সাধারণ মানুষ মামলা করেছেন। মতিঝিল থানায় আমার জানামতে নয়টি মামলা হয়েছে, যার মধ্যে সাধারণ মানুষ পাঁচটি মামলা করেছেন। পুলিশ যে জায়গায় আহত হয়েছেন, সেখানে তারা মামলা করছেন। কাজেই এখনই সঠিক মামলার সংখ্যা বলা কঠিন। কারণ আরো তো মানুষ আসছেন, যে তাদেরও তো ক্ষতি হয়েছে। আরো দু-একদিন পরে হয়তো পূর্ণাঙ্গ সংখ্যা বা চিত্রটি আপনাদের জানাতে পারবো।
সমাবেশে জামায়াত ছিল, তারা হরতালে ও অবরোধে সম্মতি দিয়েছে সে বিষয়ে পুলিশের পদক্ষেপ কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা কোনো ধরনের থ্রেট বা সন্ত্রাসী কাজ করলে সেটি ঠেকাতে আমাদের প্রস্তুতি থাকবে।
সমাবেশে পুলিশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল, পরিকল্পনায় কোনো ভুল ছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহাসমাবেশতো এখানে নতুন কিছু না। আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল। তবে আমরা ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছি। কেউ কেউ হয়তো আরো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিবেশ আশা করেছিল। পুলিশকে উসকানিতে ফেলে যদি বড় ধরনের কোনো ক্যাজুয়ালটি হয়। এটা অন্যদিকে ধাবিত করতে সুবিধা হবে।
বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় রাজনীতিবিদদের বাসায় অভিযান করছে পুলিশ কারণ কী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার কাছে ব্যক্তি কোনো বড় বিষয় নয়। আমার কাছে বড় বিষয় হলো অপরাধ এবং অপরাধী। এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই। যদি তদন্তে কেউ আসে সেটি বিভিন্নভাবে আর অপরাধ সংগঠিত হলে পুলিশের কাজ হলো তদন্ত করা। তদন্তে যদি মনে হয় আইনের আওতায় সংশ্লিষ্ট কি না সেটা তারা দেখে। এটি তাদের অবস্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উপদেষ্টার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে পুলিশ, র্যাব পরিচয়ে প্রতারণা করতে দেখেছি, কিন্তু কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের প্রধানের পরিচয় দিয়ে প্রতারণা বিষয় নতুন পরিচয় হলাম। তার বিরুদ্ধে ৪১৯ ধারায় মামলা হয়েছে। আইনগত ভাবে যা যা করা প্রয়োজন, সব কিছু করা হবে।
তিনি বলেন, পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মামলা হয়েছে, তদন্তের মাধ্যমে বের হয়ে আসবে সব। সিসিটিভি ফুটেজ আমরা যাচাইবাছাই করে দেখছি। তদন্তে ছোট বড় সব বিষয় দেখতে হয়। আমাদের যদি ত্রুটি হয়, সেটিও কাম্য নয়।