ঢাকা, বুধবার ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

‌‘জাবির ধর্ষণকাণ্ডের নেপথ্যে মাদক’

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ ০৫:১২:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

ব্যবসায়িক লেনদেন নয়, মাদক ব্যবসার অবাধ সুযোগ দিতেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের ঘটনা ক্যাম্পাসের ভেতরে হরহামেশাই ঘটছে।

 

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

 

বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে অভিযুক্ত পলাতক মামুনুর রশিদকে রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা এবং ধর্ষণে সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত মো. মুরাদকে নওগাঁ থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

 

অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, ঘটানর মূলহোতা আসামি মামুন শুরুতে গার্মেন্টস পেশায় নিয়োজিত থাকলেও তার মূল ব্যবসা ছিল মাদক ব্যবসা। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে তার ব্যবসার মূল ক্ষেত্র বানায়। মামুন প্রতিমাসে কক্সবাজার থেকে ৭ থেকে ৮ হাজার ইয়াবা এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করতো।

 

তিনি জানান, এ ঘটনার গ্রেপ্তারকৃতরা দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা করে আসছে। ভিকটিমের স্বামীর সঙ্গে মামুনের ৩ বছরের অধিক সময় ধরে মাদক ব্যবসার সম্পর্ক রয়েছে। বেশ কয়েকমাস ধরে তারা একসঙ্গেই এক বাসায় থাকতেন। ভিকটিমের স্বামী মামুনকে মাদক ব্যবসায় সাহায্য করতেন।

 

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক জানান, এরই ধারাবাহিকতায় এই মাসের ২ তারিখেও ২ হাজার ৭০০ পিস ইয়াবা নিয়ে মামুন ও ভিকটিমের স্বামী ক্যাম্পাসে আসে। কিন্তু বাসায় এতো মাদক রাখা নিরাপদ না ভেবে মামুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩১৭ নাম্বার হলে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর মামুন ভিকটিমের স্বামীকে মামুনের জামা কাপড় নিয়ে হলে আসতে বলেন। পরবর্তীতে ভিকটিম মামুনের জামা কাপড় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে আসেন। এরপরেই মামুন ও মোস্তাফিজ ভিকটিককে নিয়ে কৌশলে ও বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নির্জন এলাকার ভিতরে নিয়ে যায় এবং সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে।

 

মঈন জানান, এরপর রুমে গিয়ে ভিকটিমের স্বামীকেও ভয়ভীতি দেখায়। এই ঘটনার সূত্র ধরে তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। এরপরই তারা থানায় গিয়ে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে র‍্যাব মামুন ও তার সহযোগী মুরাদকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

 

তিনি জানান, মাদক মামলায় মামুন ৪ বারের অধিক কারাভোগ করেছে। তার নামে ৮টির বেশি মাদক মামলা রয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরের বটতলাকে কেন্দ্র করে তিনি ও তার লোকজন মাদকের সবচেয়ে বড় ঘাঁটি করেছেন। এই ৩১৭ নাম্বার রুমকে তারা গেস্ট রুম হিসেবে ব্যবহার করে এসব অপকর্ম করে আসছে। তবে নারী নির্যাতনের মামলা এটিই প্রথম।

 

খন্দকার আল মঈন জানান, প্রথমবার ধরা পড়লেও এই ধরনের অপকর্ম আগেও করেছে বলে স্বীকার করেছে মামুন। সে নিজেও আগে এমন অনেক নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি অনেক সিনিয়র শিক্ষার্থীদের জন্য মাদক ব্যবসার আড়ালে নারী ধর্ষণের ঘটনায় তার সম্পর্ক রয়েছে। ভিকটিমদের ভয়ভীতি দেখানোর কারণে ও সমাজের কাছে লজ্জায় তা অনেকেই প্রকাশ করেনি।

 

তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন ঘটনা খুবই অ্যালার্মিং। শুধু জাহাঙ্গীরনগর নয় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আসলে কেমন তা নিয়েও এখন ভাববার বিষয়। আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক সমাজ ও গণমাধ্যমদের এই বিষয়ে কঠোর ভূমিকা নেওয়া উচিত