চীনের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে তিন বছরে ৬৯ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন ৭০ কোটির বেশি মানুষ। ভাইরাসটির টিকা আবিষ্কার এবং প্রয়োগ শুরুর পর এটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে শুরু করে। বর্তমানে বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্ত অনেকটাই কমে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের এখন আর আগের মতো মারণক্ষমতা নেই। এটি এখন মৌসুমি রোগের পর্যায়ে এখন নেমে এসেছে। তাই এখন আর এই রোগ থেকে সুরক্ষার জন্য টিকা জরুরি না।
রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ভোক্তা অধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রধান ডা. আনা পোপোভা এক সাক্ষাৎকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মহামারির শুরুর দিকে করোনাভাইরাসের যে প্রাণঘাতী ক্ষমতা ছিল, এখন আর তা নেই। গত ৩-৪ বছরে মানুষ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেহে অজস্র কোটি বার সংক্রমিত হতে হতে ভাইরাসটির সেই ক্ষমতা প্রায় হারিয়ে গেছে। এক সময়ের প্রাণঘাতী করোনা এখন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা শীতকালীন সর্দিজ্বর পর্যায়ের রোগে পরিণত হওয়ার পথে। গত বছর আমরা দেখেছি যে শীতের সময় এই রোগটির প্রাদুর্ভাব ঘটে, আবার শীত কমে গেলে সেই প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কেটেও যায়। তাছাড়া আগে করোনায় আক্রান্ত হলেই মানুষ ভয় পেতেন এবং হাসপাতালে ছুটে আসতেন। কিন্তু এখন সেই হারও অনেক কমে গেছে। এ ছাড়া বাজারে এখন করোনার মুখে খাওয়ার ওষুধও মিলছে। তাই এখন করোনায় আক্রান্ত হলে লোকজন বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডা. আনা পোপোভা বলেন, এসব কারণে আমরা মনে করি, করোনা এখন একটি মৌসুমি রোগ। এর ফলে এটি থেকে সুরক্ষা পেতে এখন আর টিকার প্রয়োজন নেই। তবে যারা বয়স্ক মানুষজন কিংবা যাদের উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ প্রভৃতি শারীরিক জটিলতা রয়েছে— তাদের জন্য করোনা এখনও শক্তিশালী। কিন্তু সেক্ষেত্রে রোগটির প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সতর্কতা, স্বাস্থ্যবিধি এবং মুখে খাওয়ার ওষুধই সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর মাত্র তিন মাসের মধ্যে এটি বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। রোগটির ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মাসের পর মাস লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন, সামাজিক দূরত্ববিধির মতো কঠোর সব পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। এ ছাড়া বিজ্ঞানীরা এই রোগের টিকা আবিষ্কারে উঠেপড়ে লাগে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের আগস্টে বিশ্বের প্রথম করোনা টিকা স্পুটনিক ৫ উদ্ভাবন করে রাশিয়ার গামালিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট। পরে একই বছর নভেম্বরে বাজারে আসে মার্কিন ওষুধ ও টিকা প্রস্তুতকারী কোম্পানি ফাইজার ও জার্মান ওষুধ কোম্পানি বায়োটেকের উদ্ধাবিত টিকা ফাইজার এন বায়োটেক। তারপর একে একে বাজারে আসে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্না, জনসন অ্যান্ড জনসনসহ আরও বেশ কিছু করোনা টিকা।