চলমান সংকট কাটিয়ে উঠতে সরকার নানান উদ্যোগ নিচ্ছে। এসব পদক্ষেপের সুফলও মিলছে খানিক। এরই অংশ হিসেবে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বুধবার থেকে সব সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস খোলা থাকবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এতদিন সরকারি কর্মীরা অফিস করতেন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা।
এখন থেকে ব্যাংকের কাজ চলবে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত। এর আগে ব্যাংকের দাপ্তরিক কাজের সময় ছিল সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকবে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এ ব্যবস্থা সাময়িক বলে সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।
একই ধারায় সব সময় পৃথিবী চলে না। মহামারির জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু আমাদের মোকাবিলা করতে হলো। মানুষের জীবন-মানের পরিবর্তন এলো। সামনে হয়তো আরও অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে। ভালো সময় যাচ্ছে না, তা অন্তত বলতেই পারি
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া নেওয়া হয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের।
ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা। সাধারণত সপ্তাহে কর্মঘণ্টা হয় ৩০ থেকে ৩৫ ঘণ্টা। এতে কিছুটা টান পড়লো। জ্বালানি-বিদ্যুতের চলমান সমস্যা অস্বীকার করে তো আপনি এখন কোনো পরিকল্পনা করতে পারবেন না। এই সমস্যা দূরীকরণে বা সামলে নিতে নানান পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা। শহরের ট্রাফিক জ্যাম জ্বালানির ওপর প্রভাব ফেলবে। কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত খারাপ মনে করছি না।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আসলে একই ধারায় সব সময় পৃথিবী চলে না। মহামারির জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। কিন্তু আমাদের মোকাবিলা করতে হলো। মানুষের জীবন-মানের পরিবর্তন এলো। সামনে হয়তো আরও অনেক কিছুই অপেক্ষা করছে। ভালো সময় যাচ্ছে না, তা অন্তত বলতেই পারি।’
তবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমাদের আরও দায়িত্বশীল ও সতর্ক থাকতে হবে। বিশেষ করে আমাদের উৎপাদনের দিকে আরও নজর দিতে। খাদ্য নিরাপত্তায় জোর দিতে হবে। কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনলে অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বেই। কিন্তু তা পুষিয়ে নিতে আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিশ্ববাজারে আমাদের উপস্থিতি আরও বাড়াতে হবে। ধরতে হবে নতুন বাজার।’
সরকারের পাশাপাশি নিজেদেরও সচেতন হবে। সাশ্রয়ী হতে হবে। হয়তো আগের মতো করে আর অনেক কিছুই চলবে না। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াই এখন উত্তম সিদ্ধান্ত হবে। কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা সাময়িক সমাধান দেবে
‘একইভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগে। এখন দুদিন বন্ধ থাকছে। এর প্রভাব তো আছেই। কিন্তু সংকট সমাধানে এসব সাময়িক ব্যবস্থা মেনে নিতেই হয়। শিক্ষার এই ক্ষতি অন্যভাবে পূরণ করার জন্য আমাদের সচেষ্ট হতে হবে। তবে সংকট কেটে যাবে যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’ যোগ করেন ড. ফরাসউদ্দিন।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে একটি জরুরি সময় পার করছে বিশ্ব। করোনা মহামারি অস্বাভাবিক করে দিয়েছে জীবনযাত্রা। এমন ভয়াবহ সংকট পৃথিবীতে আর আসেনি। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধ প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলেছে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিতে।
এই পরিস্থিতিতে জ্বালানির বাজার অস্থির। আমাদের জন্য জ্বালানির সংকট বড় সমস্যা। সরকার এই সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে। সাময়িক সমাধানের দিকেও যেতে হচ্ছে। সরকারের কিছু কিছু উদ্যোগ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে এরই মধ্যে।’
তিনি বলেন, ‘সরকার কর্মঘণ্টা একঘণ্টা কমিয়ে এনেছে। আবার সকালের দিকে অফিস করার নির্দেশনা দিয়েছে। এতে বিদ্যুৎ-জ্বালানির কিছুটা সাশ্রয় হবে তো বটেই। আমাদের মনে রাখতে হবে একটি সংকটময় সময় পার করছি। সরকারের পাশাপাশি নিজেদেরও সচেতন হবে। সাশ্রয়ী হতে হবে। হয়তো আগের মতো করে আর অনেক কিছুই চলবে না। পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াই এখন উত্তম সিদ্ধান্ত হবে। কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা সাময়িক সমাধান দেবে।’
‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বড় ক্ষতি হয়েছে করোনার সময়। এই ধকল কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন করায় খুব ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। তবে এক্ষেত্রে নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার। ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিকল্প ভাবনাও করতে হবে।’