ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

অনিয়মে নিয়মে পরিনত রায়পুর ফিস হ্যাচারী!

মোঃওয়াহিদুর রহমান মুরাদ, প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : সোমবার ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ ১২:০৯:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর
 
 
 
   অবসরের ৭ বছর পরও সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেছেন লক্ষ্মীপুরের রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মচারী। একজনের নামের বরাদ্ধ করা বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাসসহ সব সুবিধা ভোগ করছেন তিনি। 
 
শুধু বাসাই নয়, কর্মচারী মফিজ মজুমদার মাছের ব্যবসাসহ সব কিছুতে অনিয়ম করে যাচ্ছেন তিনি। কোয়ার্টার সরকারি খাতায় শূন্য দেখানো হলেও ভাড়া না দিয়ে কোয়ার্টারে থাকছেন এ কর্মচারী। 
 
 
মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের কোয়ার্টার ঘুরে দেখা গেছে, কেন্দ্রে ১০টি ভবন ও ৪২টি আবাসন কক্ষ রয়েছে। মাত্র ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী বসবাস করেন। অন্যগুলো পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। 
 
গার্ড মফিজ মজুমদার ২০১৫ সালে অবসর নেন। নিয়ম রয়েছে অবসরে যাওয়ার পর ছয় মাস কোয়ার্টারে থাকতে পারবেন। কিন্তু তিনি সাত বছর নিয়মবহির্ভূতভাবে অপর গার্ড সুমন হোসেনকে ধোঁকা দিয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস ও মাছের খাদ্য এবং ভারতীয় ওষুধের ব্যবসা করে আসছেন। এ ছাড়া তিনি নিজে, স্ত্রী ও ছেলের নামে অবৈধ রসিদ করে হ্যাচারির রেণু পোনা ও ওষুধের রমরমা ব্যবসা করছেন। 
 
অন্যের নামে কোয়ার্টারে থাকা অবসরপ্রাপ্ত গার্ড মফিজ মজুমদার এ বিষয়ে সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার বাড়ি রায়পুর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। স্যারকে (ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা) বলে বিশেষ সুবিধায় কোয়ার্টারে সাত বছর ধরে আছি। তবে কোনো ভাড়া কাটা হয় না। তিনি বললেই আমি চলে যাব। বাসায় কোনো ব্যবসা করি না। রায়পুর শহরে মাছের খাদ্যের দোকান দিয়ে ব্যবসা করছি। প্রয়োজনের তাগিদেই তিনজনের নামে প্যাড করা হয়েছে।
 
কোয়ার্টার বরাদ্দ নেওয়া গার্ড সুমন হোসেন বলেন, হ্যাচারির পেছনেই আমার বাড়ি। আমি নিজ বাড়ি থেকেই অফিস করি। কিন্তু আমার নামে বরাদ্দ নেওয়া কোয়ার্টারে কীভাবে পরিবার নিয়ে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত গার্ড মফিজ মজুমদার তা বলতে পারছি না। তিনি এ জন্য প্রতি মাসে বেতনের কর্তনকৃত ৫ হাজার টাকা আমাকে দেন। বাসার যাবতীয় দায়িত্ব তার। আমি বাসা ছেড়ে দিতে আবেদনও করেছি। কিন্তু বড় স্যার কোনো কথাই শুনেন না।
 
রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান বলেন, অবসরপ্রাপ্ত গার্ড মফিজ মজুমদার অনেক আগেই কোয়াটারের বাসা ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু সে বাসা ছাড়ছে না। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।
 
অন্যদিকে,মৎস্য! প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সেই গুদাম রক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। মৎস্য অধিদপ্তর থেকে চাঁদপুর জেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ মেহেদি হাসানকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সরজমিনে এসে তদন্তের এ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

গত ২৫ আগষ্ট “রায়পুর মৎস্য প্রজনন কেন্দ্রের গুদামে ব্যক্তিগত ব্যবসা” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যার ফলে নড়াচাড়া দিয়ে উঠে মৎস্য বিভাগ। পরে ৩ সদস্যের গঠিত কমিটি সেই কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্তে মাঠে নেমে প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্থানীয় লোকজন ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আলোচনা করে ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন বলে জানা যায়।
দুপুরে উপজেলার মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. লুৎফুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর মৎস্য প্রজনন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের গুদাম রক্ষক মো. মোকতার হোসেন গুদামে বিরুদ্ধে অধিদপ্তর থেকে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের এসে তদন্ত শুরু করেছেন। এতে চাঁরপুর জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ মেহেদি হাসান, লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও চাদপুর সদর মৎস্য কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছেন।
চাঁরপুর জেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মোহাম্মদ মেহেদি হাসান বলেন, কোন কর্মচারী প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের স্থাপনা ব্যবহার করে ব্যবসা, বাহিরে গিয়ে ফিস হ্যাচারী সাথে জড়িয়ে পোনা বিক্রি করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে সরকারি সম্পদ লুণ্ঠনের অভিযোগে গুদাম রক্ষক মো. মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক ভাবে কিছু সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে। সবগুলো ঘটনা যাচাই বাচাই করে লিখিত ভাবে তদন্ত প্রতিবেদন অধিদপ্তরে জমা দেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, রায়পুর মৎস্য প্রজনন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সরকারি গুদাম ব্যবহার করে গুদাম রক্ষক মো. মোকতার হোসেন গুদামে মাছের ওষুধ, খাদ্য রেখে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করে আসছেন। তিনি সরকারি এ প্রতিষ্টানের পাশে নিজেই বাবুল ফিস হ্যাচারি নামের একটি হ্যাচারিও স্থাপন করেন। সরকারি হ্যাচারিতে মাছের পোনা কিনতে আসলে তিনি অনেক ক্রেতাদের নিজের প্রতিষ্টানে নিয়ে পোনা বিক্রি করেন। এর আগেও মোকতার হোসেনের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত তাঁকে তিনবার অন্যত্র বদলি করা হয়। পরে আবার সেই বদলির আদেশ বালিত করেন কর্তৃপক্ষ।

 
মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমটির সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন বলেন, ফিস হ্যাচারিতে জনবল সংকট নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি, এরই ভিতর অনিয়মের এমন চিত্র ভয়াবহ পরিস্থিতি করে তুলেছে। তিনি আরো বলেন নিয়ম রয়েছে সরকারি কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ার ছয় মাস পরে বাড়ি চলে যান। কিন্তু মফিজ মজুমদারের বেলায় কেনো এমন অনিয়ম তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। গত সাত বছর কীভাবে অন্যের নামের বরাদ্দকৃত বাসায় বসবাস এবং অবৈধ ব্যবসাও করছেন তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।