ঢাকা, শুক্রবার ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ইউরোপে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা ও জিএসপি সুবিধা চায় বাংলাদেশ

আহমেদ শাহেদ, ঢাকা | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর ২০২৪ ০৪:৪৫:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) অঞ্চলে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বৈধতা এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে জিএসপি সুবিধার নীতি সংশোধনের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ইইউ-এর যৌথ কমিশন সভায় এ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভায় এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের জন্য ইউরোপীয় বাজারে জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। একই সঙ্গে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে বহুপাক্ষিক উদ্যোগের ওপর আলোকপাত করা হয়।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত এনইসি সভাকক্ষে সোমবার দিনব্যাপী এ বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং ইইউ’র এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় বিভাগের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক পাওলা পাম্পালোনি নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে জানানো হয়, ইইউ তার ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রামের অধীনে বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ শ্রমিক নিতে আগ্রহী এবং প্রায় দশটি খাতে কর্মী নিয়োগের পরিকল্পনা করছে। এর জন্য সরকার একটি রোডম্যাপ তৈরি করছে, যা উভয় পক্ষের সম্মতির ভিত্তিতে প্রকাশ করা হবে।

বর্তমানে জার্মানি, ইতালি, গ্রিস ও রোমানিয়া বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে আগ্রহী। চাহিদার তালিকায় রয়েছে আইসিটি, কেয়ারগিভিং, নির্মাণশিল্প, পর্যটন ও আতিথেয়তা, কৃষি, জাহাজ নির্মাণ এবং তৈরি পোশাক শিল্প।

২০২২ সালে ইইউ’র ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম চালু হয়, যেখানে বাংলাদেশসহ সাতটি দেশকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে বৈধপথে আরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ বাড়ছে। বৈঠকে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বৈধতার জন্য সুপারিশও জানানো হয়েছে।

জিএসপি সুবিধার ক্ষেত্রে ইইউ’র নতুন খসড়া স্কিমের সুরক্ষা ধারাগুলো সংশোধন করার জন্য বাংলাদেশ তার দাবি উত্থাপন করেছে। বাংলাদেশ চায় তৈরি পোশাকসহ সব পণ্যে জিএসপি প্লাস সুবিধা পেতে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করলেও ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই সুবিধা বজায় থাকবে।

জিএসপি সুবিধা না থাকলে বাংলাদেশকে ১২ শতাংশ শুল্ক দিয়ে ইউরোপে পণ্য রপ্তানি করতে হবে, যা পোশাক খাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বৈঠকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধার সময়সীমা বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। ইইউ জানায়, কর্মপরিবেশ ও শ্রম অধিকার নিশ্চিত করেই এই সুবিধার সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে।

ইইউ অতিরিক্ত তিন বছরের ট্রানজিশন পিরিয়ড দিয়ে ২০২৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সুবিধা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এছাড়াও রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট এবং গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রভাবও আলোচনায় উঠে আসে। বাংলাদেশের দাবি, এসব সংকটের প্রভাবে দেশে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে।

বৈঠকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধ, এবং সামাজিক উন্নয়নে আরও পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপরও আলোচনা হয়েছে। ইইউ বাংলাদেশের আর্থিক খাতে সুশাসন এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেয়।

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করা হয়। ইইউ বাংলাদেশের উদার মানবিক ভূমিকার প্রশংসা করে।

দু'পক্ষই বাণিজ্য ও বিনিয়োগ প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করতে সম্মত হয় এবং ভবিষ্যতের বাণিজ্যিক সম্পর্ক মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের ওপর শর্তাধীন হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

সভায় আরও জানানো হয়, ইইউ ও বাংলাদেশ শ্রম অধিকার ও মানবাধিকারের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরিতে একমত হয়েছে।

বায়ান্ন/এএস/একে