ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ঈদে লোকসান পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় খামারিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : বুধবার ২৯ জুন ২০২২ ১১:২৩:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রায় সাড়ে ১২ হাজার খামারে চলছে কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের কাজ ও বিক্রির সম্ভবনা ধরা হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন খামারে চলছে কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট করণের কাজ। করোনার প্রভাবে গত দুই বছর আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা। আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে অন্তত ৭০০ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার খামারগুলোতে যে পরিমাণ কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত আছে, তা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৫৯ হাজার কম। যদিও শেষ সময়ে এ সংকট থাকবে না বলে মনে করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় খামারি আছেন ১২ হাজার ৪০০ জন। আর খামারগুলোতে দেশি, শাহিওয়াল ও ফ্রিজিয়ানসহ বিভিন্ন জাতের গরু লালন-পালন করা হচ্ছে। গত দুই বছর করোনা মহামারির কারণে প্রত্যেক খামারি কয়েক লাখ টাকা করে লোকসান গুনেছেন। এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সেই লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার চিন্তা করেছিলেন খামারিরা। তবে গোখাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এতে করে গবাদি পশু পালনে খরচ বেড়েছে।

কয়েকজন খামারির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস তিনেক আগেও প্রতি বস্তা (৪০ কেজি) ভুষির মূল্য ছিল ১৩০০-১৪০০ টাকা। এখন সেই ভুষি কিনতে হচ্ছে ১৭৫০-১৮০০ টাকায়। আর খৈলের প্রতি বস্তার (৪০ কেজি) বাজারদর আগে ছিল ১৪০০-১৫০০ টাকা। এখন খৈলের বস্তার দাম ২০০০ টাকা।

এ ছাড়া ধানের কুড়ার দাম দ্বিগুণ হওয়ায় এখন খামারিদের কিনতে হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়। সব মিলিয়ে খরচ বাড়লেও গবাদি পশু পালন করে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না খামারিরা। আর তাই পশু উৎপাদনও খুব একটা বাড়েনি। এতে করে এবার পশুর হাটগুলোতে চাহিদার তুলনায় কিছুটা সংকট দেখা দিতে পারে। আর এ সংকটের কারণে হাটে ছোট গরুর দাম স্বাভাবিকের চেয়ে ৫-১০ হাজার, মাঝারি গরু ১০-১২ হাজার এবং বড় গরুর দাম ১০-১৫ হাজার টাকা বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, এ বছর জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা আছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫২০টি। এর মধ্যে জেলার খামারগুলোতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে ১ লাখ ১১ হাজার ৬১৭টি গরু, মহিষ ও ছাগল। এর ফলে এবার ৫৮ হাজার ৯০৩টি কোরবানি যোগ্য পশুর ঘাটতি রয়েছে। বিগত বছরের চাহিদা বিবেচনায় এ বছরের চাহিদা নির্ধারণ করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার স্বপ্ন ডেইরি অ্যান্ড এগ্রো ফার্মের পরিচালক ওয়ালিউল্লাহ সরকার জানান, তাদের খামারে এবার কোরবানি উপযুক্ত ৩০টি গরু আছে। এর সবগুলোই দেশি ও শাহিওয়াল জাতের। এবার হাটে গত বছরের তুলনায় গরুর দাম কিছুটা বাড়বে। কারণ, গোখাদ্যের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া করোনার কারণে প্রত্যেক খামারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সাইফুদ্দিন খান শুভ্র বলেন, খামারিরা এখনও করোনাকালীন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে গোখাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি আমাদের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন যদি চোরাই পথে ভারতীয় গরু আসে, তাহলে খামারিরা পথে বসে যাবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এ বি এম সাইফুজ্জামান বলেন, আমাদের হিসেবে এখন পর্যন্ত পশুর যে ঘাটতি আছে, সেটি হয়তো ঈদ আসার আগেই পূরণ হয়ে যাবে। কারণ, পশুর হাটগুলোতে দেশের অন্য জেলাগুলো থেকেও পশু আসবে। এবার অন্তত ৭০০ কোটি টাকার পশু কেনাবেচা হবে বলে আমরা আশা করছি।