দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ব্যালেট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় নৌকা প্রতীকের প্রধান এজেন্টসহ দুইজনের নাম উল্লেখ পূর্বক ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে।
নির্বাচনের দিন ব্যালেট বক্স ছিনতাইয়ের ঘটনায় হলদিয়াপালং ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত থাকায় ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
উখিয়া থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ জানান, শনিবার বিকালে ইউপি নির্বাচনে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের নলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন, উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের মধ্যম হলদিয়াপালংয়ের আলী আহাম্মেদের ছেলে শফিউল আলম ওরফে কম্পিউটার শফি (৩০) এবং একই ইউনিয়নের মধ্যম হলদিয়াপালং কুলারপাড়ার বাদশা মিয়ার ছেলে মো. কাজল (২৫) সহ অজ্ঞাতনামা ১৫০ জন।
এদের শফিউল আলম ওরফে কম্পিউটার শফি বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) অনুষ্টিত ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতিকের প্রার্থী শাহ আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট।
বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৫ নম্বর কেন্দ্র নলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ব্যালেট বক্স ছিনতাইয়ের গুজব ছড়িয়ে একদল লোক ভোটকেন্দ্রে অনাধিকার প্রবেশ করে। এক পর্যায়ে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের হামলা চালিয়ে কাস্টিং ভোটের একটি বক্স ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরদিন শুক্রবার বিকালে ছিনিয়ে নেওয়া ওই ব্যালেট বক্সটি হলদিয়াপালং ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকার জনৈক মৃত নজির আহম্মদের ছেলে মো. ফরিদুল আলমের বাড়ীর উঠান থেকে পুলিশের সহায়তায় পরিত্যাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৫ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার নুরুল ইসলাম বলেন, উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৫ নম্বর কেন্দ্র নলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণের জন্য বুধবার রাতে ব্যালেট পেপার ও বক্স সহ অন্যান্য সামগ্রী উপজেলা রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে বুঝে নেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮ টা থেকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দুপুর আড়াইটায় কে বা কারা গুজব রটায় ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে ব্যালেটে সিলমারা হচ্ছে।
গুজব ছড়ানোর এক পর্যায়ে নৌকা প্রতিকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট শফিউল আলম ওরফে কম্পিউটার শফি ও মো, কাজলের নেতৃত্বে অন্তত দেড়শত লোকজন লাঠিসোটা ও লোহার রড হাতে ভোটকেন্দ্রে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। এসময় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বাধা দিলে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে ৭ জন আহত হন। পরে হামলাকারিরা কাস্টিং ভোটের একটি বক্স ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মামলার বাদী বলেন, ভোটগ্রহণ চলাকালে ব্যালেট বক্স ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়টি উপজেলা রিটার্নিং অফিসার সহ সংশ্লিষ্টদের তাৎক্ষণিক অবহিত করি। এসময় উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে তাৎক্ষণিকভাবে ভোটগ্রহণ স্থগিত ঘোষণা করা হয়। পরে আহতদের উদ্ধার করে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা করানো হয়েছে।
প্রিসাইডিং অফিসার নুরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার পর থেকে ভোটকেন্দ্রটিতে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাসহ উখিয়া থানা পুলিশ ছিনতাই হওয়া কাস্টিং ভোটের ব্যালেট বক্সটি উদ্ধার অভিযান শুরু করে। পরদিন শুক্রবার বিকালে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের নলবুনিয়া এলাকার জনৈক মৃত নজির আহম্মদের ছেলে মো. ফরিদুল আলমের বাড়ীর উঠান থেকে পরিত্যাক্ত অবস্থায় ওই ব্যালেট বক্সটি উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় শনিবার বিকালে দুইজনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে উখিয়া থানায় এজাহার দায়ের করেন বলে জানান মামলার বাদী নুরুল ইসলাম।
উখিয়া থানার ওসি আহমেদ সঞ্জুর মোর্শেদ বলেন, ইউপি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে ব্যালেট বক্স ছিনাতাইয়ের অভিযোগে হলদিয়াপালং ইউনিয়নের ৫ নম্বর কেন্দ্র নলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। এজাহারে দুইজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ মামলাটি নথিভূক্ত করেছে।
মামলা দায়েরের পর থেকে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান ওসি।