ঢাকা, শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

এক গ্রাম ধানও সংগ্রহ হয়নি শৈলকুপা খাদ্যগুদামে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৩ জানুয়ারী ২০২৩ ১১:২১:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি উপজেলা খাদ্য গুদাম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ধান চাল সংগ্রহ প্রকল্পের নির্ধারিত সময়ের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও কৃষকদের কাছ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। একদিকে সরকার নির্ধারিত ধানের দাম কম অন্যদিকে নানা বিধি-নিষেধ থাকায় চাষিরা ধান দিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

কৃষকদের অভিযোগ, গুদামে ধান দিতে গেলে নানাবিধ প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। সরকারি মূল্যের সাথে বাজারদরের সামঞ্জস্য না থাকায় এ সংগ্রহ অভিযান মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারঘোষিত সারা দেশের ন্যায় এ উপজেলায় চলতি বছরে সরকার নির্ধারিত ২৮ টাকা কেজি দরে এক হাজার ৬৯৩ টন আমন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। কৃষকদের কাছ থেকে আমন সংগ্রহ ১৭ নভেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকলেও এ কার্যক্রমের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারেনি। উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার কৃষকেরা সরকার নির্ধারিত এ মূল্যে ধান দিতে অপারগতা প্রকাশ করছেন।

একাধিক কৃষকেরা বলছেন, সরকারি মূল্য এক হাজার ১২০ টাকা করে প্রতি মণ ধান কিনছে খাদ্য গুদাম। অথচ বাড়ি থেকে ব্যাপারিরা ধান কিনছেন প্রতি মণ এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা দরে। অনেক সময় ধানের আর্দ্রতা পরিমাপের জটিলতায় অনেক দূর থেকে বয়ে নিয়ে গিয়েও পুনরায় ধান নিয়ে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে কৃষকদের। যা এক প্রকারের হয়রানি ছাড়া আর কিছুই না। এছাড়া নামমাত্র ধান চাল সংগ্রহে উপজেলা কমিটি থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে তাদের কোনো প্রচার-প্রচারণা নেই। আবার অনেকেই জানেন না ধান দেয়ার নির্ধারিত সময়।

উপজেলার নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নের আশুরহাট গ্রামের ধানচাষি সুব্রত কুমার মল্লিক বলেন, এবার আমন ধান সংগ্রহে সরকার যে দাম নির্ধারণ করেছে এই দরে আমাদের ধান খাদ্য গুদামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাপারিরা বাড়ি থেকে এক হাজার ১০০ থেকে হাজার এক হাজর ২৫০ টাকা দরে ধান কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এই আমন মৌসুমে বাড়ি থেকে ধান বিক্রি করা লাভ। এ ছাড়াও গুদামে ধান নিয়ে গেলে নানা সমস্যায় পড়তে হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

পৌর এলাকার মাঠপাড়া গ্রামের চাষি আব্দুল করিম বলেন, একে তো সরকার নির্ধারিত ধানের দাম কম আবার খাদ্য গুদামে ধান নিয়ে গেলে ধান ভেজা, চিটাসহ নানা প্রশ্ন করে হয়রানি করা হয়। আবার অনেক সময় ধান নিয়ে গিয়ে ফেরত আনতে হয়। যার জন্য খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ দেখান না কৃষকেরা। এছাড়া অনেক কৃষক ধান সংগ্রহের সময়ও জানেন না।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ও ধান চাল সংগ্রহ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর হোসেন বলেন, ধানের বাজারমূল্য বেশি হওয়ায় এখন পর্যন্ত আমন মৌসুমে ধান সংগ্রহ করতে পারিনি। তবে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে ধান ক্রয়ের চেষ্টা চলছে।

শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ধান চাল সংগ্রহ কমিটির সভাপতি রাজিয়া আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘উপজেলা খাদ্য গুদামের ধান ক্রয়সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমার জানা নেই। কয়েক দিন আগে এই ক্রয় কমিটি করা হয়েছে’।