ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ স্থানীয় আদিবাসীদের সংবাদ সম্মেলন

অলিউর রহমান মেরাজ নবাবগঞ্জ দিনাজপুর প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : সোমবার ১ অগাস্ট ২০২২ ০৬:৩৬:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

দিনাজপুর-৬ আসেনের এমপি শিবলী সাদিক ও তার চাচাসহ তাদের অনুগতর লোকদের বিরুদ্ধে জমি দখল নিয়ে আদিবাসীদের করা সংবাদ সম্মেলনটি পূর্ব পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আদিবাসী নেতৃবৃন্দ। দিনাজপুর প্রেসক্লাবে সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে আদিবাসী নেতৃবৃন্দ এ অভিযোগ করেন। এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে কয়েকশ আদিবাসী দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনও করেছে।

 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থানীয় আদিবাসী নেতা শ্যামল মার্ডি। এসময় বিরামপুর উপজেলার খানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন পাহান, নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সায়েম সবুজ, এমপি শিবলী সাদিকের ব্যক্তিগত সহকারী শ্রীমন এস সরেন, আদিবাসী সালেমান মার্ডি উপস্থিত ছিলেন।

 

সংবাদ সম্মেলনের পর দিনাজপুর প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। মানববন্ধনে ৫ শতাধিক স্থানীয় ও আদিবাসীরা অংশ নেন।

 

 

লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ঘোষণা দেওয়ায় পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ছয়জন আদিবাসীকে দিয়ে এমপি শিবলী সাদিককে জড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করায়। এমপি শিবলী সাদিকের পরিবার সম্প্রতি প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ করে মসজিদ নির্মাণ করছেন, নিজস্ব জায়গায় একক প্রচেষ্টায় আফতাবগঞ্জ হাট, দুটি কলেজ, হাইস্কুল, গালর্সস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদরাসা, হাসপাতাল, পুলিশ ফাঁড়ি, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন ও ফরেস্ট অফিস স্থাপন করতে পারেন। আজ তাদেরকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন করার নীল নকশায় মেতে উঠেছে দিনাজপুর জেলার রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি অংশ।

 

সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয় দিনাজপুর-৬ আসন নবাবগঞ্জ, বিরামপুর, হাকিমপুর এবং ঘোড়াঘাট এই চারটি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই চারটি উপজেলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠি অধ্যুসিত। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দিনাজপুর-৬ আসনের আদিবাসী জনগোষ্ঠির ভাগ্য উন্নয়নে সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার ছেলে বর্তমান এমপি শিবলী সাদিক ছাড়া কেউ এগিয়ে আসেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহযোগিতায় এ আসনের আদিবাসী জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তাঘাট বিদ্যুৎ, স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ জীবনমান উন্নয়নে এমপি শিবলী সাদিক নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতায় বিরামপুর উপজেলার ৩ নং খাঁনপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপি শিবলী সাদিকের সাংগঠনিক দক্ষতায় নৌকা প্রতিকে আদিবাসী জনগোষ্ঠির প্রতিনিধি চিত্তরঞ্জন পাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যা এ অঞ্চলে আদিবাসী জনগোষ্ঠির মধ্যে প্রথম। বর্তমানে এমপি শিবলী সাদিকের ব্যক্তিগত অর্থায়নে দিনাজপুর-৬ আসনের শত শত আদিবাসী শিক্ষার্থী লেখা পড়া করছে। এমপি শিবলী সাদিক এবং তাঁর পরিবার আওয়ামী লীগ এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠির আপনজন হওয়ায় তাদেরই একজন প্রতিনিধি বর্তমানে এমপি শিবলী সাদিকের ব্যক্তিগত সহকারী। এর ফলে প্রতিবারই আদিবাসী জনগোষ্ঠির ভোটেই এ পরিবারের সদস্যরা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বার বার নির্বাচিত হয়ে এসেছেন।

 

আপনারা অবগত আছেন যে, এক সময় দিনাজপুর-৬ আসন ছিল জামায়াতের ঘাঁটি। এমপি শিবলী সাদিক পরপর দুইবার আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর দিনাজপুর-৬ আসনকে আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে রূপান্তরিত করেছেন। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বিরামপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। হাকিমপুরে পরপর দুইবার আওয়ামী লীগের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। চারটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও দিনাজপুর-৬ আসনের চারটি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সাধিত হয়েছে। বয়স ও সময়ের তুলনায় অনেক দ্রুত এমপি শিবলী সাদিকের সাংগঠনিক দক্ষতা এবং জনপ্রিয়তা অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই এমপি শিবলী সাদিককে দল এবং জনগণের কাছে হেয় করতে এবং বিএনপি জামায়াতকে দিনাজপুর-৬ আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি মহল ষড়যন্ত্রে মেতেছে। সেই কুচক্রি মহলটি নিজেরাই হিন্দু, আদিবাসীদের জমি দখল, কয়লা পাচার নিয়োগ বানিজ্যসহ কোটি কোটি টাকার বানিজ্যে জড়িত। সেই সংবাদ সম্মেলনে এমপি শিবলী সাদিকের বিরুদ্ধে কোনো দালিলিক অভিযোগ না থাকলেও দুঃখজনক হলেও সত্যি কিছু মিডিয়া এমপি শিবলী সাদিককে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে।

 

গত শনিবারে ছয়জন আদিবাসী তাদের জমি দখলের অভিযোগ এনে যে সংবাদ সম্মেলন করেছে সেখানে জমির দাগ, খতিয়ান, মৌজা কিছুই উল্লেখ নেই। কারও জমি নিজ দখলে থাকলে তার কাছে সেই জমির দলিল, পর্চা, খাজনা খারিজ থাকবে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে সে সবের কোনো দালিলিক তথ্য উপস্থাপন করা হয়নি। মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনে স্বপ্নপূরীর নামে ৭৭ দশমিক ৬১ একর জমি জবর দখলের অভিযোগ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এখন পর্যন্ত স্বপ্নপূরীর মোট জমির পরিমাণ ৫৬ একর।

 

ওই মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনে স্বপ্নপূরীর সত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেনকে একজন কুখ্যাত ভূমি দস্যু, মাস্টার মাইন্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে দেলোয়ার হোসেন নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়ন পরিষদের ৩৪ বছরের একাধারে চেয়ারম্যান হিসেবে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। অত্র জেলায় দেলোয়ার হোসেন একজন সমাজসেবক, পরোপকারী সম্মানি ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ওই মিথ্যা সংবাদ সম্মেলনে দেলোয়ার হোসেনের অধিনস্ত গুন্ডা বাহিনী যাদের আখ্যায়িত করা হয়েছে তারা সবাই সমাজের প্রতিষ্ঠিত ও সম্মানিত ব্যক্তি।

 

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে দেলোয়ার হোসেনের অত্যাচারে শত শত অদিবাসী জনগোষ্ঠি এলাকাছাড়া ও ভারতে চলে যাওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। আদৌ আফতাবগঞ্জ এলাকা থেকে একজন আদিবাসী এলাকাছাড়া বা ভারতে যায়নি।