ঢাকা, রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১

কক্সবাজারে পর্যটকের ভিড়, অতিরিক্ত ভাড়ায় মিলছে না হোটেল রুম

স.ম ইকবাল বাহার চৌধুরী, কক্সবাজার | প্রকাশের সময় : রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৫৪:০০ পূর্বাহ্ন | দেশের খবর

পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজারে এখন পর্যটকে ঠাসা। কোথাও তিল পরিমানের ঠাই নেই। হোটেল মোটেল আর রাস্তাঘাটসহ সৈবালেও শুয়ে থাকতে দেখা গেছে ব্যাগ মাথায় দিয়ে। মুলত বছরের শেষদিকে এসে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাড়তে শুরু করেছে পর্যটকের ভিড়। দীর্ঘদিন পর পর্যটন নগরী স্বরূপে ফেরায় ফুরফুরে মেজাজে এ খাতের ব্যবসায়ীরা।

মূলত বছর শেষে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বার্ষিক সম্মেলন আয়োজনে বেছে নেয় কক্সবাজারকে। তার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় অভিভাবকরা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে কক্সবাজারে আসছেন। 

শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে সুগন্ধা পয়েন্ট, ইনানী ও অন্য পয়েন্টে দিনভর ঘুরে দেখা যায়, শীত উপেক্ষা করে সমুদ্রপাড়ে ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকরা। অনেকে সাগরের নোনা জলে গা ভিজাচ্ছেন, কেউ জেট স্কি নিয়ে মিতালি জমাচ্ছেন ঢেউয়ের সাথ। কেউবা বাইকের চক্কর দিচ্ছেন সৈকত পাড়ে। 

ফলে পর্যটকের ভিড় বাড়ছে সৈকত এলাকা। একযোগে বিপুল পর্যটকের আনাগোনায় হোটেল-মোটেলসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক আবাসিক প্রতিষ্ঠানে রুম খালি নেই। 

আর কক্সবাজার শহরের সড়কগুলোতে ট্রাফিক সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এমন অবস্থা থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, হোটেল-মোটেল জোনে তারকা মানের হোটেলসহ নানা ক্যাটাগরির পাঁচ শতাধিক হোটেল রয়েছে। এসব আবাসনে দৈনিক এক লাখ ৩০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। 

গতকাল বৃহস্পতিবার হতে গড়ে সোয়া লাখ পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করছেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকের এমন উপস্থিতি আশা করা যায়। বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা, সড়কের যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খাচ্ছে টুরিস্ট ও ট্রাফিক পুলিশ।

উপস্থিত পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। আর গোসলে যেনো বিপদে না পড়ে সেই তৎপরতায় কাজ করছেন লাইফগার্ড কর্মীরা।

ঢাকা শ্যামলী থেকে আসা মাইন উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত দুই দিন আগে কক্সবাজার এসেছি। সেদিন সকাল হতে সৈকতে ভ্রমণ পিপাসুদের ভীড় লেগে আছে। যারা অগ্রিম হোটেল বুকিং না দিয়ে এসেছে তারা পরিবার নিয়ে বিপদে পড়েছে। নিয়মের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে চেয়েও অনেকেই রুম ভাড়া পাচ্ছেন না।

কুমিল্লা আসা সেলিম নেওয়াজ বলেন, ছুটির দিনে পর্যটকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় হোটেলের রুম ভাড়ায় তেমন ছাড় মেলেনি। রেস্তোরাঁসহ সবখানেই ভিড় এবং অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে।

হোটেল ওশান প্যারাডাইসের ফ্রন্ট ডেস্কের ম্যানেজার আবদুল হান্নান বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরু থেকে শহরের হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও কটেজে রুমের চাহিদা বেড়েছে। গত আট মাস অনেকটা শূন্য ছিল পর্যটন নগরী। এখন ভীড় বাড়ছে, রুম ভাড়ায় সাধ্যমতো ছাড় দিচ্ছি। 

তবে, অনেক পর্যটক আমাদের আগাম বুকিং দিয়েই এসেছেন। তাই কেউ এসে হঠাৎ রুম চাইলে দুঃখপ্রকাশ ছাড়া কিছুই করা থাকছে না। 

তারকা হোটেল কক্স-টু ডের সহকারি মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব বলেন, হোটেল কক্ষ খালি যাচ্ছে না। এ অবস্থা আরও সপ্তাহ-দশ দিন থাকতে পারে।

একই অবস্থা লাবনী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, কলাতলী ছাড়াও মেরিন ড্রাইভের কিনারে গড়ে তোলা হোটেল-কটেজেও রুম ভাড়ায় কোন ছাড় দেয়া কিংবা ওয়াকিং পর্যটকরা রুম পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মেরিন ড্রাইভ  হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান।

এদিকে টুরিস্ট পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত  পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, লাখো পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে টুরিস্ট পুলিশের ৮৫ জন সদস্যকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবার সতর্কতার কারণে এখনও পর্যন্ত কোনো হয়রানি কিংবা দুর্ঘটনার খবর আসেনি।

কক্সবাজার পুলিশের মুখপাত্র ও ট্রাফিক পুলিশের  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকবাহী কয়েক হাজার যানবাহনের কারণে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।শহরের কলাতলী ডলফিন মোড়, বাইপাস সড়ক, প্রধান সড়কের বাজারঘাটায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য কাজ করছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত রুম ভাড়া কিংবা খাবারের মূল্য আদায়ের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয় তদারকি করতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।