ঢাকা, শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ই আশ্বিন ১৪৩১

করোনায় ব্যবসায় লোকসান, বাগানে বাজিমাত

রবিউল এহ্সান রিপন, ঠাকুরগাঁও: | প্রকাশের সময় : শনিবার ২১ জানুয়ারী ২০২৩ ১১:২৯:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
 
মাধ্যমিকে পড়াশোনা করা অবস্থায় বেশ ভালো ছাত্র ছিলেন পারভেজ৷ স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে চাকুরী করার। তবে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই পড়াশোনার ইতি টানতে হয় তাকে৷ পরিবারের হাল ধরতে শুরু করতে হয় ইলেক্ট্রনিক ব্যবসা৷ 
 
শুরু থেকে ব্যবসা ভালোই চলছিল পারভেজের৷ সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ আসছিল সন্তোষ জনক৷ কিছুদিন পরেই দেশে হানা দেয় মহামারী করোনা ভাইরাস৷ বন্ধ হয়ে যায় একমাত্র আয়ের উৎস, ব্যবসায় শুরু হতে থাকে লোকসান৷ পরিবারে চাহিদা মেটাতে অনবরত হিমশিম খেতে হত তাকে। 
 
কিছুদিন পরে চিন্তা ভাবনা বদলান পারভেজ৷ প্রত্যন্ত গ্রামে শুরু করেন পেয়ারা বাগান৷ বছর যেতে না যেতেই ফলনে ভরে যায় বাগান৷ আর আশানুরূপ দাম পেয়ে বদলে যায় ভাগ্য৷ 
 
ঠাকুরগাঁও পৌরশহরের ১২ নং ওয়ার্ডের ছিট চিলারং গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে পারভেজ খান৷ জেলার সদর উপজেলার বুড়িবাধ এলাকায় সাড়ে চার একর জমি দশ বছর লিজ নিয়ে শুরু করেছেন বাগান৷ পেয়ারা, কূল, পেঁপে, আপেল, মাল্টা, ডালিম ও সবেদাসহ অনেক ফলের বাগানে চমক সৃষ্টি করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় বাগান থেকে আয় হয়েছে কয়েক লক্ষাধিক টাকা৷ সৃষ্টি হয়েছে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। বাগান করার উদ্যোগ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক বেকার যুবক।  
 
বাগান দেখতে আসা কলেজ শিক্ষার্থী আফরোজ আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে জানতে পারলাম এখানে একটি বড় বাগান হয়েছে৷ শোনার পর থেকে দেখার খুব আগ্রহ জন্মেছিল৷ তাই আজ সরাসরি আরেক বন্ধু সহ বাগানে আসছি৷ সত্যি কথা বলতে দেখে মনটা জুড়িয়ে গেল৷ পেয়ারা আর বরই দেখে তো লোভ সামলাতে পারলামনা৷ আর প্রচুর পরিমাণ ফল হয়েছে গাছগুলোতে৷ বেশ ভালো লাগলো। 
 
পারভেজের বন্ধু ইউসুফ আলী বলেন, আমি তার বাগানের শুরু থেকে তার সাথে আছি।কয়েকটা গাছ দিয়ে সে তার বাগান শুরু করে৷ আমি বেশ কটু করেই তাকে নানা কথা বলতাম৷ কি দরকার বাগান করার৷ এগুলো করে কোন লাভ হবেনা। অযথা সময় নষ্ট করে ক্ষতি ডেকে আনিসনা৷ ধীরে ধীরে এ ধারণা সে পাল্টে দেয় আমার৷ এখন সে বাগান করেই লাখ লাখ টাকা আয় করছে। তার বাগানের ফলন দেখে আমি নিজেই এখন বাগান করতে আগ্রহী হয়ে উঠছি৷ তার কাছে আমি নানা পরামর্শ নিচ্ছি। চারার বিষয়েও বলে রেখেছি৷ 
 
বাগানে কাজ করা শ্রমিক গুরুদাস বলেন, মুই শুরু থেকে বাগানডাত কাজ করেছু৷ গাছ দেখাশোনা করা, স্প্রে করা, ফল গাছ থেকে পারা সব কাজ করু। এইঠে থেকে যে টাকাটা পাও সেইটা দিয়া মুই সংসারের খরচ চালাও। খেত বাড়িত দিন হাজিরা চাহিতে এইঠে কষ্ট কম৷ মাঝেমধ্যে ফের পেয়ারা, বরই সহ ফলমূল খাওয়া যাচে। ফের বাড়িতো নিয়া যাচু সবার তাহানে৷ 
 
বাগানে পেয়ারা কিনতে আসা রিফাত আহমেদ বলেন, আমি পল্লীবিদ্যুত এলাকা থেকে বাগানে পেয়ারা নিতে এসেছি৷ নিজে গাছ থেকে পেরে নিতে পারব সেজন্য এখানে আসা৷ এখানে এসে খুব ভালো লাগলো৷ দেখে শুনে ফরমালিন মুক্ত পেয়ারা কিনতে পারলাম৷ সেই সাথে বরই আর পেয়ারা তরতাজা খেতে পারলাম৷ মনটাও সবুজ বাগানে তৃপ্তি পেল৷ 
 
তরুণ উদ্যোক্তা ও বাগানের মালিক পারভেজ খান বলেন, আমি মূলত ইলেকট্রনিকের ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম৷ করোনার সময় যা একেবারে স্থবির হয়ে যায়। পরক্ষণে ভাবতে শুরু করলাম সবকিছু সমস্যা হলেও কৃষিখাত স্থবির হবেনা৷ তখন থেকে বিভিন্ন জায়গার বাগান গুলো দেখার জন্য যেতাম৷ প্রথমে যদিও বিভিন্ন ফসল আবাদ করি৷ পরে পেয়ারা, বরই সহ আরো যে ফল গুলো রয়েছে সেগুলোর চারা রোপন করি৷ আমার আশা ছিল কিভাবে ব্যবসার মত বার মাসে ফল পাওয়া যায় আর আয় করা যায়৷ সে কারনে মূলত ফলের বাগানে আসা৷ তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো ফলন আমি পেয়েছি৷ সেই সাথে বরই ও সাথী ফসলের আয় দিয়ে বাগানের সকল খরচ বহন করতে পেরেছি। সাথে লক্ষাধিক টাকা আয়ও হয়েছে। পেয়ারায় ফলন বেশ ভালো এসেছে৷ যদি খুব কম দামও হয় তবুও ১৫-১৬ লাখ টাকা আয় করতে পারব ইনশাআল্লাহ। বাগান দেখাশোনা করা সহ আমার এখানে ৭ জন শ্রমিক অনবরত কাজ করে থাকেন৷ কখনো আবার সংখ্যাটা বাড়ে৷ আমার ব্যক্তিগত স্বপ্ন হলো বাগানটাকে আরো বড় করা। সেই সাথে আরো অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে৷ আর কেউ যদি নতুন করে বাগান প্রজেক্ট শুরু করতে চায় সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আমি তার পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে দুইবার এখানে এসেছিলেন তারা শুধু দেখে গেছেন৷ যদি তারা আমাকে আরো পারিপার্শ্বিক ভাবে সহযোগিতা করে তবে আমার বাগানকে আরো বেশী সমৃদ্ধ করতে পারব। 
 
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ডাঃ আব্দুল আজিজ বলেন, তার বাগানে অনেক ফলন এসেছে। তিনি কয়েক দফায় সেটি বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছেন। আমরা কয়েকবার গিয়েছি তার বাগানে৷ আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা পাশে থাকব৷ সেই সাথে আরো নতুন কেউ আগ্রহী হলে আমরা সেসকল উদ্যোগের পাশেও থাকব।