ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখির বাসা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : বুধবার ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৭:২০:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
নদীমাতৃক বাংলাদেশে পুকুর ভরা মাছ গোলা ভরা ধান গোয়াল ভরা গরু কৃষকের চিরচেনা ব্যস্ততা যেমন একসময় চোখে পড়তো তেমনি চোখে পড়তো হাজারো পাক পাখালি চোখে পড়তো বাবুই পাখি আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যে তৈরি বাবুই পাখির বাসা। অপরূপ সৌন্দর বাবুই পাখিকে নিয়ে কবি রচনা করেছেন অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত কবিতা। বাবুই পাখিকে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহা সুখে অট্টালিকার পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝরে 
...। রজনীকান্ত শেনের 'স্বাধীনতার সুখ' কবিতাটি মনে পড়লেই সকলের চোখের সামনে ভেসে ওঠে বাবুই পাখির নয়নাভিরাম শৈল্পিক বাসা। মানুষ বিভিন্ন কথার মাঝে এই কবিতার বিভিন্ন উক্তি দিয়ে আজও বিভিন্ন উদাহরণ টানেন। একসময় গ্রামগঞ্জের এমনকি শহরের বিভিন্ন উঁচু তালগাছে বাবুই পাখির বাসা দেখা গেলেও এখন বিলীন হতে বসেছে বাবুই পাখি ও বাবুই পাখির বাসা। অথচ গত ১৫ থেকে ২০ বছর আগেও বাবুই পাখি তার শৈল্পিক  ঠোঁট দিয়ে তৈরি করতো তার বাসা। রাস্তার ধারে তালগাছ, খেজুর গাছ সহ অনেক বড় বড় গাছে বাবুই পাখির নিপুন কারু খচিত বাসা দেখা যেত। সেই সাথে বাবুই পাখির আনাগোনাও কমে যাচ্ছে নীল আকাশের নীচে। বাবুই পাখিকে অনেকেই শিল্পী পাখি বা কারিগর পাখি বলে ডেকে থাকেন। বাবুই পাখির চিরচেনা সেই কিচিরমিচির শব্দ আজ আর শোনা যায় না। বিভিন্ন কারনে দেশ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে বাবুই পাখি ও তার শৈল্পিক সৃষ্টি বাসার ঐতিহ্য। কুষ্টিয়ার স্থানীয় পাখিপ্রেমী  ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো উদ্বেগ জানাচ্ছে। 
 
2-692
 
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার হরিনারায়ণপুর, গজনবীপুর, শিবপুর, কুলশিবাসা ইত্যাদি গ্রামে এক সময় তালগাছে প্রচুর বাবুইপাখি দেখাযেতো। এখন তালগাছ ও পাখি দুই'ই হারিয়ে গেছে। গজনবীপুর মাঠের মধ্যে রাস্তার ধারে খেজুর গাছে বাবুই পাখির নয়নাভিরাম বাসা দেখে চোখ আটকিয়ে গেলো। সেখানে গাছের ডালে ডালে বাবুই পাখির বাসা। পাখিগুলো কেউ বাসা বুনোন করছে,কেউ উড়ছে, কেউ ডালে বসে আছে দেখছে অসাধারণ লাগছে। দর্শনার্থী অনেকেই সেল্ফি তুলতে ব্যস্ত।
 
হরিনারায়ণপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামে আগে প্রচুর তালগাছ, খেজুরগাছ, বাবলা গাছ ছিলো। গাছে প্রচুর বাবুই পাখি, চড়াই পাখি সহ বহুপ্রজাতির পাখির আনাগোনা ও কিচিরমিচির শব্দ শোনা যেতো। সময়ের সাথে গাছ হারিয়ে যাচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে পাখি। কৃষক সোবহান মিয়া জানান, এক সময় আমাদের মাঠে প্রচুর বাবুই পাখি দেখা যেতো। আমরা কোন পাখি হত্যা করিনা, পাখিদের উৎপাত করিনা তবুও শুধু তালগাছ, খেজুরগাছ বিলীন হয়ে পাওয়ার ফলে পাখি ও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। 
 
এ বিষয়ে পরিবেশবিদ এস এম মাহফুজ উর রহমান বলেন, বাবুই পাখি দেশের জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে । নানা কারণে দেশ থেকে গাছ নিধন হওয়ার কারণে হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখি। গ্রামের রাস্তার ধারে বেশি বেশি তালগাছ খেজুর গাছ রোপন করে বাবুই পাখিকে আমরা সংরক্ষণ করতে পারে। এছাড়াও বিলুপ্তির পথে বাবুই পাখির সংরক্ষণ ও বৃদ্ধি করতে সাধারণ মানুষের মধ্যে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে।