ঢাকা, রবিবার ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯শে পৌষ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় মডেল মসজিদের বিদ্যুৎ বিল বাকি দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : | প্রকাশের সময় : শুক্রবার ১০ নভেম্বর ২০২৩ ০৩:৪৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর

নয় হাজার চারশত পঁয়ত্রিশ কোটি টাকায় সারাদেশে ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করে বর্তমান সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় কুষ্টিয়া ৬ টি উপজেলায় নির্মাণ করা হয় ৬ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। ভিতর বাহির চকচকে ঝকঝকে। খতিব ও মুয়াজ্জিন সরকারী কোষাগার থেকে সন্মানি পাবেন। ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে ধর্মীয় পুস্তক ও ইসলামী সাংস্কৃতিক বিষয়ে দেখভার করবেন এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু মসজিদের বিদ্যুৎ বিল সহ অনান্য কিছু ব্যয় কিভাবে আসবে সেই বিষয়ে কেউ কিছু জানেন না। সদর উপজেলার মডেল মসজিদ টি কুষ্টিয়া শহরের কুঠিপাড়াতে অবস্থিত।  এই মসজিদ সহ জেলার কয়েকটি মডেল মসজিদের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া। যা নিয়ে বিপাকে ওজোপাডিকা ও কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ। ওজোপাডিকার হিসেবে সদর মডেল মসজিদে প্রতিমাসে গগে ৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করেছে যার বিপরীতে বিল হয় ৪০-৪২ হাজার টাকা। সেই হিসেবে মোট বকেয়া ৭ লক্ষ ৯৩ হাজার ৭৮ টাকা। উদ্বোধনের পর থেকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেনি। এ দিকে জেলার ভেড়ামারা উপজেলার মডেল মসজিদের অবস্থাও একই। ভেড়ামারা মডেল মসজিদে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা পাবে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি।

 

বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের বিশাল অংকের টাকায় দায়িত্ব নিচ্ছে না কেউ।মসজিদ পরিচালনা কমিটি ও ইসলামিক ফাউণ্ডেশন দ্বায় এরিয়ে যাচ্ছে। কুষ্টিয়া সদর

 

নির্মাণ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরে ২০২১ সালের আগস্ট মাসের বিল পরিশোধের পর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যবহৃত বিদ্যুতের বকেয়া বিল আদায়ে জেলার উন্নয়ন সমন্বয় ও আইন শৃঙ্খলা কমিটিতে একাধিকবার উত্থাপিত হলেও সমস্যা সমাধানে কোন উদ্যোগ নেয়নি মডেল মসজিদ কমিটি। বিল পরিশোধর তাগাদা দিয়ে মসজিদ কমিটিকে একাধিকবার চিঠি দিয়েও কোন লাভ হয়নি বলে অভিযোগ ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলীর। এবিষয়ে মডেল মসজিদ কমিটির পদাধিকার বলে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘সারাদেশেই মডেল মসজিদগুলিতে যেভাবে বকেয়া বিল পরিশোধে বরাদ্দ আসবে আমরাও সেভাবেই পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 

ওজোপাডিকো কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলে রাব্বি জানান, ‘কুষ্টিয়া সদর উপজেলা মডেল মসজিদের বকেয়া বিল পরিশোধের তাগাদা দিয়ে মসজিদ কমিটিকে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এ বিল পরিশোধের দায় নিচ্ছে না কেউ। নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। মসজিদ ধর্মীয় স্থাপনা হওয়ায় এর সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘটনাটি একটা স্পর্শকাতর ইস্যু হয়ে উঠতে পারে সেজন্য সংযোগও আমরা বিচ্ছিন্ন করতে পারছিনা। অন্যদিকে বকেয়া বিদ্যুৎ বিল আদায়ে সরকারিভাবে আমাদের উপর চাপ রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ উভয় সংকটে পড়েছে’।

 

একই ভাবে কুষ্টিয়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এসএম নাসির উদ্দীন জানান, ‌‘এবছরের শুরুতেই মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলার মডেল মসজিদে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয় পল্লী বিদ্যুৎ। মিরপুর মডেল মসজিদ প্রথমদিকে তিন মাসের বিল পরিশোধ করলেও এ বছর জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৪ মাসের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল হয়েছে ১ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। তবে দৌলতপুর মডেল মসজিদের শুরু থেকে এখন কোন বিল পরিশোধ না করায় সেখানে বিল বকেয়া হয়েছে ৩ লক্ষ ১০ হাজার ৭শ ১১টাকা। প্রতি মাসে গড়ে প্রতিটি মসজিদে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে প্রায় ৪ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ। সে হিসেবে প্রতি মাসে বিল আসছে প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো। বকেয়া এই বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের জন্য বারবার তাগাদা ও মৌখিক ভাবে যোগাযোগ করলেও কোন সুফল পাওয়া যায়নি।

 

এ প্রসঙ্গে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কুষ্টিয়ার উপ পরিচালক মো. হেলাল উজজামান দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশের সব মডেল মসজিদ কাম-ইসলামিক কালচারাল সেন্টারগুলোর পরিচালনার দায়িত্ব ইসলামিক ফাউন্ডেশনের। কুষ্টিয়া সদরসহ অপর ৫টি উপজেলায় স্থাপিত মডেল মসজিদগুলিও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায়। সবগুলি মডেল মসজিদের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া পড়ে গেছে। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগ বারংবার বিল পরিশোধের তাগাদা দিয়ে চিঠি দিচ্ছে। আমরাও  বিল পরিশোধের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ে লিখছি। মন্ত্রণালয় এখাতে টাকা বরাদ্দ দিলেই আমরা বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারবো। তবে ইতোমধ্যে এসংক্রান্ত একটা পরিপত্র জারি হয়েছে, এসব মডেল মসজিদগুলির প্রতিটিতে ১শ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহৃত বিদ্যুৎ বিল সরকার পরিশোধ করবে। কিন্তু বাস্তবে এসব মডেল মসজিদগুলিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে অনেক বেশি। কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মডেল মসজিদে প্রতিটায় ৮ টন ক্ষমতা সম্পন্ন ৮টি এসি লাগানো আছে। এক্ষেত্রে মসজিদ সংশ্লিষ্টদের আরও বেশি সজাগ হওয়া জরুরী নচেৎ এভাবে চলতে থাকলে হয়ত বিদ্যুৎ বিভাগও এক সময় বাধ্য হবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে’।

 

কুষ্টিয়া সদর মডেল মসজিদের সভাপতি সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন বলেন, ‘এসব মসজিদগুলির মেইন্টেনেন্সের দায়িত্বে মূলত ইসলামিক ফাউন্ডেশন। ওনারাই ভালো বলতে পারবেন কিভাবে আর্থিক সংস্থান হচ্ছে। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল সম্পর্কে শুনেছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সেটা জেনে বলতে পারবো’।