ঢাকা, শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১

কোনো দেশেই ডেঙ্গু কার্যকরি টিকা তৈরি হয়নি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : | প্রকাশের সময় : শনিবার ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:১৩:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ডেঙ্গুর টিকা নিয়ে গবেষণা চলছে বিশ্বব্যাপী। ইতোমধ্যে দুটি টিকাও আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু সেই টিকাগুলো ব্যবহার হয় না, টিকাগুলোতেও আবার কিছু সমস্যা আছে। চার ধরণের ডেঙ্গু আছে, ভাইরাস আছে। টিকা নিলে দেখা যায় কিছু ভাইরাস দমন হচ্ছে, কিন্তু সব ভাইরাস দমন হয় না। আর যারা একবার ডেঙ্গুর টিকা নিয়েছে তাদেরকে অন্য ভাইরাসে আক্রমণ করলে তাদের অবস্থা বেশি গুরুতর হয়ে যায়। যে কারণে বিশ্বব্যাপী ডেঙ্গুর টিকা ব্যবহার হচ্ছে না। শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানিকগঞ্জের সদর উপজেলার গড়পাড়া এলাকায় মন্ত্রীর নিজ বাড়িতে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। 

 

তিনি বলেন, দেশের আইসিডিডিআরবি একটি পরীক্ষামূলকভাবে একটি টিকা তৈরি করেছে। সেটা এখনও পরীক্ষায় রয়েছে, তারা বলছে, তাদের এই টিকাটি বেশ কার্যকর। আমাদের আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে, প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে অনুমোদন নিবো এবং আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবো। যখন পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে যাবে তখন, আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিয়ে আমাদের দেশেও ব্যবহার করতে পারবো। কিন্তু এই মুহূর্তে বিশ্বের কোনো দেশেই ডেঙ্গু কার্যকরি টিকা তৈরি হয় নাই।

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকায় ডেঙ্গুর অবস্থা স্থিতি আছে, আর ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি আছে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে এখন প্রায় নয় হাজার রোগী চিকিৎসাধীন আছে। ডেঙ্গু চিকিৎসায় এখন স্যালাইনের কোনো ঘাটতি নেই। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে সাত লাখ ব্যাগ স্যালাইন আমদানির অনুমোদন দিয়েছিলাম। ইতোমধ্যে তিন লাখ ব্যাগ স্যালাইন চলে এসেছে। বাকি চার লাখ ব্যাগ স্যালাইনের চালানও দ্রুত চলে আসবে। প্রতিদিন ৫০ হাজার ব্যাগ স্যালাইন রিসিভ করছি এবং হাসপাতাল গুলোতে দিয়ে দিচ্ছি। এ ছাড়া বেসরকারি ওষুধ উৎপাদন কোম্পানিগুলো স্যালাইনের উৎপাদন এখন অনেকগুণ বাড়িয়েছে। আমি যতটুকু তথ্য পেয়েছি, তারা মাসে ৫৩ লাখ ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদন করতে পারে।

 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে মাসে ডেঙ্গুর জন্য প্রয়োজন হলো ২০ লাখ ব্যাগ স্যালাইন। ডেঙ্গু আক্রান্তের হার যদি বর্তমানের চেয়ে বেড়ে যায় সেই ক্ষেত্রে স্যালাইনের প্রয়োজন হবে ৩০ লাখ ব্যাগ। সে কারণে আমি মনে করি, এখন আর সেইভাবে হাহাকার ঘাটতি নাই। আমরা চাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে যাক। 

 

দেশবাসীর উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু রোগী তো আছে, তবে জনসাধারণকে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রতিদিনই ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। অনেক সময় দেরি করে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ক্ষেত্রে রোগীকে তখন চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলাও কঠিন হয়ে যায় এবং অনেক সময় রোগী মারাও যান। সেই জন্য তাড়াতাড়ি ডেঙ্গু পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। তবে আমরা আশা করছি ধীরে ধীরে আমাদের দেশে ডেঙ্গু কমে যাবে। 

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, জাতিসংঘের এবারের সাধারণ অধিবেশনে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। তবে এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ের অনেক দিক নিয়ে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে সভা হয়েছে। সারাবিশ্বে করোনা মহামারি হয়েছে, আগামীতে কোনো ধরণের মহামারি আসলে তা কি উপায়ে প্রতিরোধ করা যায় সে বিষয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। স্বাস্থ্যের অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে যক্ষ্মার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের সকল দেশ যাতে শতভাগ যক্ষ্মা নির্মূল করতে পারে। সেই তুলনায় আমাদের দেশে আগের চেয়ে এখন প্রায় ৫০ ভাগ যক্ষ্মা রোগী কমে গেছে। যক্ষ্মার ব্যাপারে আমাদের লক্ষ্য আছে, আমরাও ২০৩০ সালের মধ্যেই যক্ষ্মা শতভাগ নির্মূল করবো। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

 

আগামী নির্বাচনের বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ তিনবার ভোট দিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। সামনেও আশা করি জনগণ তাকে নির্বাচিত করবে। আমরা গত ১০ বছরে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। দেশের বড় বড় সব প্রকল্পই বাস্তবায়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার পূরণ করেছে। সরকার করোনাকালীন সময়ে দেশের মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়েছি, বিভিন্ন দুর্যোগের সময় জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে এই সরকার। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে, খাদ্যের অভাব হয় নাই, পেট্রোলের অভাব হয় নাই।

 

মন্ত্রী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা মানিকগঞ্জ-৩ আসন থেকে আমি তিনবার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। ১০ বছর আগে কি ছিল তা আপনারা জানেন। আমার সময়ে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, মেডিকেল কলেজ, নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন উন্নয়ন হয়েছে। জনগণ সবসময় উন্নয়নের পাশাপাশি শান্তিও চায়। আমার সংসদীয় আসনে রাজনৈতিক কোনো অস্থিরতা নেই। আপনারাই ভালো জানেন আমি কতটুকু ভালো কাজ করছি। জনগণ ভালবেসে আমাকে ভোট দিয়েছে, আশা করছি সামনের নির্বাচনেও আমাকে ভোট দিবে।

 

দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানিকগঞ্জ-৩ আসনে পুনরায় আমাকে নৌকার মনোনয়ন দিলে আমি খুবই খুশি হবো। আমি মনে করি, দেশবাসী আমাকে আপন করে নিবে, আমাকে মূল্যায়ন করে এবং ভালোবাসে। ইনশাআল্লাহ বিপুল ভোটে আমরা নির্বাচিত হবো।