ঢাকা, রবিবার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ই পৌষ ১৪৩১

ক্ষোভের আগুণে জ¦লছে সিলেট বিভাগ

সিলেট ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার ৬ অগাস্ট ২০২৪ ০৭:৪১:০০ অপরাহ্ন | সিলেট প্রতিদিন

ক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সিলেট বিভাগের সর্বত্র। সরকারি স্থাপনাসহ আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, নেতাকর্মীদের বাসা বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে, হচ্ছে। কোথায়ও আগুন দেয়া হয়েছে, হচ্ছে বাসা বাড়িতে। একাধিক পুলিশ স্টেশনে হামলা ভাঙচুর হয়েছে। এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সিলেট বিভাগজুরে ছাত্র জনতা উল্লাস প্রকাশ করছেন রাস্তায় নেমে। তবে বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা পরিস্থিতি শান্ত রাখার জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে বিবৃতি দিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।  

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের খবরে সুনামগঞ্জের রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার জনতা। শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা থেকে মিছিল বের হয়ে শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে এসে জড়ো হন। মিছিলি সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এসময় তাদের বিজয়উল্লাস করতে দেখা যায়। শহরের বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ করেন সাধারণ জনতা।

বিক্ষুব্ধ জনতা সদর থানা ও জেলা প্রশাসকের বাসায় হামলার চেষ্টা করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা তাদের নিবৃত্ত করেন। থানায় অনেক পুলিশ সদস্য অবরুদ্ধ ছিলেন। পরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নূরুল হুদা মুকুটের হাজিপাড়ার বাসা অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যলয় ও চেম্বার অব কমার্স ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়৷ ভাংচুর চালানো হয় সুনামগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয়ে। পৌরবিপণি সংলগ্ন জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম আহমদের অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ভাংচুর করা হয় সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাব, হক অফসেট, হক হোটেলসহ কয়েকটি স্থাপনা  জানালার কাঁচ। তবে কোনো ধরনের আহত বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।

মৌলভীবাজার জেলায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর প্রচারিত হওয়ার পরপরই মিছিল নিয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানা, শ্রীমঙ্গল থানায় পৃথক ভাবে হামলা, অগ্নিসংযোগ ভাঙচুর করা হয়েছে। এরমধ্যে শ্রীমঙ্গল শহরের মিশন রোডস্থ সাবেক কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি ও জেলার একাধিক আওয়ামীগ নেতার বাড়ি, দোকানপাটে।

শ্রীমঙ্গল থানার ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং পুলিশের হামলা চালানো হয়। পুলিশ আত্মারক্ষার্থে টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে এতে শতাধিক আন্দোলনকারী যুবকরা আহত হন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, শ্রীমঙ্গল শহরের মৌলভীবাজার সড়কে অবস্থিত থানায় আগুন ও ভাঙচুর করা হয়। একইভাবে মৌলভীবাজার মডেল থানায়।

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে উচ্ছ্বসিত জনতা রাস্তায় নেমে মিষ্টি বিতরণ করে মিছিল করেছে। এ সময় তারা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ¯েøাগান দিতে দেখা গেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা কুলাউড়া থানা, ইউএনওর কার্যালয়, পৌরসভা কার্যালয়, কুলাউড়া আধুনিক ডাকবাংলো, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা ভবন ভাঙচুর এবং থানা ও ডাকবাংলোয় অগ্নিসংযোগ করে।

বিক্ষুব্ধ জনতা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সিপার উদ্দিন আহমদের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তার মালিকানাধীন পেট্রোল পাম্প ও শহরে থাকা তার বিভিন্ন দোকানপাট ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয় বলে জানান মেয়র। বিক্ষুব্ধ জনতার উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ি থেকে অন্যত্র গিয়ে আত্মরক্ষা করেন মেয়র সিপার। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, এখন পর্যন্ত হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলা যাচ্ছেনা। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেনাবাহিনী কাজ করছে।

সিলেটের পুলিশ সুপার কার্যালয় ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত এসপি অফিস ভবনের প্রতিটি কক্ষ থেকে আগুনের ধোঁয়া উঠছিল। কার্যালয়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দেখা যায়নি। সব ফাইল কাগজপত্র পুড়ে ছাই। আঙ্গিনায় থাকা কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। অফিসটির সামনে রাস্তায় ছিল শ শ উৎসুক জনতার ভীড়। সড়কে দাঁড়িয়েছিল দুটি সেনাবাহিনীর গাড়ি।

সিলেটের বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা, সরকারি ও প্রশাসনিক বিভিন্ন অফিস, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের নেতা- কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও সরকার সমর্থকদের বাসা বাড়িতে হামলা হয়।
 
সরকারি স্থাপনার মধ্যে সিলেট সার্কিট হাউস, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভাঙচুর করা হয়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ সরকারি দপ্তরের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়।

টিলাগড়স্থ সেখানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরীর বাসভবন ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. এ কে আব্দুল মোমেনের হাফিজ কমপ্লেক্সেও হামলা ও অগ্নি সংযোগ করা হয়। নগরীর পূর্ব শাপলাবাগ এলাকায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, গোপালটিলা এলাকায় অবস্থিত সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য (এমপি) রণজিত চন্দ্র সরকার এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিনের বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।

সিলেট নগরীর আম্বরখানা এলাকায় মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, নগরীর শেখঘাটে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের বাসায়ও হামলা ভাঙচুর চালানো হয়। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, ছাত্রলীগ নেতা কামরুল ইসলামের মেজরটিলাস্থ বাসায়ও হামলা-ভাঙচুর হয়েছে। হামলা হয়েছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজের বাসায়ও।

এছাড়া নগরে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ীর ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কার্যনির্বাহী সদস্য ও সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিমের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মাহাতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে।
 
সিলেট নগরীর চৌহাট্টায় জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদের মালিকানাধীন ইউনিক ফার্মেসীতেও লুটপাট হয়েছে। সিটি কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর, কাউন্সিলর রুহেল, অনেকের বাসায় হামলা চালানো হয়। নগরীর শাহী ঈদগাহস্থ আওয়ামী লীগ নেতা ও সিলেট জেলার অতিরিক্তি পিপি এডভোকেট শামসুল ইসলামের বাসায় দুই দফা হামলা চালায় বিক্ষুব্ধ যুবকরা।