ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৭ই ফাল্গুন ১৪৩১

গডফাদার নয়, সংসদে চাই যোগ্য ও স্বচ্ছ রাজনীতিবিদ: কাদের গণি চৌধুরী

রিয়াদ হাসান | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ০৬:০৬:০০ অপরাহ্ন | জাতীয়

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গডফাদার, ইয়াবা ব্যবসায়ী বা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নয়, বরং যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও জনবান্ধব প্রার্থীদের প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী।

রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ‘স্কুল অব লিডারশিপ’ (এসওএলই-ইউএসও) আয়োজিত ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেমন প্রার্থী চাই’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সংলাপে কাদের গণি চৌধুরী বলেন, “আমি চাই একজন সুস্থ চিন্তার প্রার্থী, যিনি মেধাবী, দেশপ্রেমিক এবং জনগণের কল্যাণে নিবেদিত থাকবেন। আমি চাই না সংসদে এমন ব্যক্তিদের দেখতে, যাদের নামের আগে ‘গডফাদার’ বা ‘ইয়াবা’ যুক্ত থাকে। যারা গুম, খুন, ধর্ষণ বা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত, তারা সংসদে থাকার যোগ্য নন। সংসদ হতে হবে প্রকৃত রাজনীতিবিদদের জন্য, কিন্তু আমরা সেখান থেকে অনেক দূরে।”

কাদের গণি চৌধুরী আরও বলেন, “গত সংসদে ৬৭ শতাংশ সংসদ সদস্য ব্যবসায়ী ছিলেন। তাদের সংখ্যা ছিল ১৫১ জন। ফলে সংসদ আর সংসদ থাকেনি, বরং ব্যবসায়ীদের সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের (ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি) অফিসে পরিণত হয়েছিল। আমরা এমন সংসদ চাই না।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব আইন প্রণয়ন করা, কিন্তু তারা সংসদে উপস্থিতই থাকেন না। টিআইবির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদে মোট কর্মঘণ্টার মাত্র ১৬.৭ শতাংশ ব্যয় হয়েছে আইন প্রণয়নে, যেখানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এই হার ৪৯.৩ শতাংশ এবং ভারতের লোকসভায় ৪৫ শতাংশ।

বিএফইউজে মহাসচিব আরও বলেন, “সংসদ সদস্যরা এখন নির্বাচনী এলাকার রাজা হয়ে গেছেন। তারা শুধু রাজনীতি নয়, টেন্ডারসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। প্রায় ৪০টি সরকারি প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের ঠিক করে দেন এমপিরা। স্থানীয় সরকার কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজের শিক্ষক থেকে পিয়ন নিয়োগ পর্যন্ত এমপিদের হাত ধরে হয়। আমরা পত্রিকায় পাতায় পড়েছি, এমপিরা পিয়ন নিয়োগের জন্য টাকা নেন। এই কলঙ্ক ঘোচাতে হবে।”

টিআইবির তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “সংসদ পরিচালনায় প্রতি মিনিটে ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ, ৮৩ শতাংশ সময় ব্যয় হয় আইন প্রণয়ন বহির্ভূত কাজে। ভারতের লোকসভায় একটি বিল পাস হতে গড়ে ১৪১ মিনিট লাগে, আর বাংলাদেশে মাত্র ৩১ মিনিট! সংসদকে কার্যকর না করে, এটিকে আলংকারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাখা হলে দেশ ও গণতন্ত্রের ক্ষতি হবে।”

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন স্কুল অব লিডারশিপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) রুহুল আমিন চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ডক্টর জামিল আহমেদ।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসনের অধ্যাপক এ কে মতিনুর রহমান।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. সেলিমা রহমান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজসহ বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, গবেষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী এবং সাংবাদিকরা।

বায়ান্ন/আরিএস