ঢাকা, শনিবার ১৮ মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

গুরুদয়াল সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ নেই ২৭ বছর,শিক্ষাঙ্গনে নেতিবাচক প্রভাব

আশরাফুল ইসলাম তুষার,কিশোরগঞ্জ: | প্রকাশের সময় : শনিবার ১১ মার্চ ২০২৩ ০৪:৩৩:০০ অপরাহ্ন | দেশের খবর
 
 
 
 
 
এক সময়কার ছাত্র রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু জাতীয় রাজনীতিতে অনেক জাতীয় নেতা উপহার দিয়েছে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ।বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের অনেক নেতা কিংবা প্রয়াত অনেক জাতীয় নেতা গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে তাদের সোনালি রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেছিলেন।
 
বর্তমান মহামান্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড.আব্দুল মান্নান,প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেনসহ অনেক জাতীয় নেতা ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দ্বায়িত্ব
পালনকারী ব্যাক্তিরা গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলেন।
সেই গুরুদয়াল সরকারি কলেজে দীর্ঘ ২৭ বছর ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই ৷ ঐতিহ্যবাহী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ না থাকার ফলে শিক্ষাঙ্গনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যেখানে ক্যাম্পাসের সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, নাট্যকলাসহ সব সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ছাত্র সংসদ করে থাকে, সেখানে দীর্ঘদিন ধরে ছাত্র সংসদ না থাকার ফলে এসব থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তারা মনে করেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে ও তাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করার জন্য ছাত্র সংসদ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন।
দীর্ঘ এই সময় ধরে কলেজের ছাত্র সংসদ এর কোন কার্যক্রম না থাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি যেন অবিলম্বে ছাত্রসংসদ সচল করা হয়।
সূত্রে জানা গেছে,গুরুদয়াল সরকারি কলেজে সর্বশেষ ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৯৫ সালে।নির্বাচনে ছাত্রদলের সাইফুল ইসলাম সুমন ভিপি ও ছাত্রলীগের এনায়েত করিম অমি জিএস নির্বাচিত হন।
বর্তমানে এ কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি ছাড়াও ১৪ টি বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চালু রয়েছে। এ অবস্থায় কলেজে ক্লাস প্রতিনিধি মনোনয়নই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। তাই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবী ওঠে।তবে ৯৫ সালের পর আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন,গুরুদয়াল সরকারি কলেজ দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক ইতিহাস ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও বিগত ২৭ বছর যাবত এই কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া খুবই দুঃখজনক ব্যাপার এবং হতাশাজনক।আমরা মনে করি এর দ্বারা দেশটাকে নেতৃত্ব শূন্য করে রাখতে এক শ্রেনীর স্বার্থান্বেষী মহল পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। 
জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সায়েদ সুমন বলেন,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময় গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচন চায়।
সর্বশেষ নির্বাচিত ভিপিসহ আমরা ছাত্রদলের প্যানেল থেকে ৬ জন ভিপি পেয়েছি।যারা দেশের সৃজনশীল রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তাই দ্রুত গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লুৎফুর রহমান নয়ন বলেন,প্রায় তিন যুগ ধরে গুরুদয়াল সরকারি কলেজে ছাত্র সংসদ না থাকার কারনে প্রকৃত নেতৃত্ব তৈরি হচ্ছে না,প্রকৃত আদর্শিক নেতৃত্ব তৈরি করতে হলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। এখন নেতৃত্ব চলে যাচ্ছে অছাত্রদের হাতে।বিশেষ করে ছাত্র সংসদ না থাকায় স্থানীয়ভাবে ছাত্রনেতৃত্বের বিকাশও ঘটছে না। জাতীয় ও স্থানীয় রাজনীতিতে যোগ্য, সৎ, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান রাজনৈতিক কর্মী গড়তে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই।
৯০ দশকের ছাত্রনেতা ও তৎকালীন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৯১ সালে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের এজিএস ও পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত জিএস,জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাছির উদ্দিন রিপন বলেন,গুরুদয়াল সরকারি কলেজ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা ঐতিহ্যবাহী কলেজ।এখানে ছাত্র রাজনীতি শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে।ছাত্রদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করে ছাত্র সংসদ। তবে দীর্ঘদিন ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া হতাশাজনক।বিগত দিনে যা-ই হয়েছে অদূর ভবিষ্যতে দ্রুত ছাত্র সংসদ চালু করা উচিত।’
গুরুদয়াল সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের সর্বশেষ জিএস, জেলা আ.লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত করিম অমি বলেন,ছাত্র রাজনীতির নেতিবাচক ধারায় পরিচালিত হওয়ার অন্যতম কারণ ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়া।ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র রাজনীতি চলে এসেছে বিভিন্ন চেম্বারে। 
যার ফলে সাধারণ ও মেধাবী ছাত্ররা রাজনীতি বিমুখ।সুস্থ ধারায় ছাত্র রাজনীতি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হলে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এর কোন বিকল্প নেই।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ জামালুর রহমান বলেন,ডাকসু সহ সারাদেশে কোথাও ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই।তাছাড়া ছাত্র সংগঠন গুলি ছাত্রসংসদ নির্বাচনের দাবী নিয়েও আমাদের কাছে আসে নি।তবে ছাত্রসংসদ এর জন্য গত ১২ বছর যাবত কোন ফি আদায় হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।