চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বংপুরে দুইজন কৃষক স্বপ্ন দেখছেন পলিনেট হাউজ চাষাবাদ নিয়ে। তারা পলিনেট হাউজের উৎপাদিত ফসল ও বীজ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবসা করবেন বলে জানিয়েছেন । তাদের ওই দুটি হাউজে টমোটো, ফুলের গাছসহ বিভিন্ন ধরণের বীজ রোপণ করা হয়েছে। এদিকে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন সম্ভাবনা এই প্রযুক্তি। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে নিরাপদ সবজি ও বীজ উৎপাদন হচ্ছে এই পলিনেট হাউজের মাধ্যমে। এদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর ইউনিয়নের বংপুর এলাকার সাদিকুল ও শামিম রেজা দু'জই পেয়েছেন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প থেকে পলিনেট হাউজ । শুরু করেছেন চাষাবাদ। উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে,জলবায়ু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি বিজ্ঞানের এই উদ্ভাবন টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনার নতুন রূপান্তর। পলিনেট হাউজ তৈরিতে ব্যবহার করা হয় বিশেষ ধরণের পলিথিন। যা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষতিকর রশ্মি প্রভাব পড়েনা। পোকামাকড় আক্রমণ তেমন করতে পারেনা। গ্রিন হাউজের আদলে এটি তৈরি করা হয়েছে। দেশি কৃষি ব্যবস্থার নতুন সংযোগ। শীতকালের সবজি ফসল যেমন গ্রীষ্মকালে উৎপাদন করা যাবে তেমনি গ্রীষ্মকালের ফসল শীতকালে উৎপাদন করা যাবে। পলিনেট হাউজে রোগবালাই আক্রমণ খুবই কম । জমির মান থাকে নিয়ন্ত্রনে।সাদিকুল ইসলাম নামে উদ্যোক্তা জানান, তিনি একজন ফুলচাষী। তার ফুলবাগানে কৃষি কর্মকর্তা পরিদর্শনে যান। পরে তাকে অফিসে ডাকা হয়। তার আগ্রহের কথা শুনেন। ওই সময তিনি পলিনেট হাউজ নেবার আগ্রহ প্রকাশ করেন। পরে এই প্রকল্পটি তিনি পান। পলিনেট হাউজটি তৈরি করে গেছেন রাজশাহী থেকে আসা ঠিকাদার। হাউজটি তৈরিতে যা যা প্রয়োজন তারা এসে করে গেছেন। ২৫ বছর ধরে চলবে এই প্রকল্পটি। তার পলিনেট বাগানে চন্দ্রমল্লিকা ফুলের গাছ ও টমোটোর গাছ লাগানো হয়েছে। খরচ বাদে টমোটো থেকে বিঘাতে এক লাখ টাকা লাভবান হবে বলে তিনি ধারণা করছেন। উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় পরামর্শ দিয়ে থাকে। তারা সার্বিক সহযোগীতা করে আসছে। তিনি অন্য কৃষকদের এভাবে চাষাবাদে এগিয়ে আসতে বলেন। খরচ কম উৎপাদন হবে ভাল। কৃষক লাভবান হবেন। আরেক উদ্যোক্তা শামীম রেজা বলেন, পাশে ফুলচাষী সাদিকুল ইসলমের পলিনেট হাউজের প্রকল্পটি দেখে অনুপাদিত হই। পরে উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করে আবেদন করি। বিভিন্নভাবে যাচাইবাছাই করে তাকে দেওয়া হয়েছে। বংপুর বেলখরিয়া মৌজার ২৫ শতক জমিতে এই প্রকল্পটি করা হয়েছে। জুন মাস থেকে শুরু হয়েছি কাজটি। চারা তৈরি ও টমোটো নিজ খরচে করছেন। তিনি বাণিজ্যিকভাবে চারা বিক্রি করবেন। টমোটো বীষমুক্ত ভাবে নিরাপদ হিসেবে উৎপাদিত হবে। সহজপদ্ধতি চাষাবাদ করা হচ্ছে। নিরাপদ সবজি উৎপাদন করে তা বিক্রির করার সময় উচ্চ দরে দাম পাওয়া যাবে। এই পদ্ধতি চাষাবাদ করে ভাল স্বপ্ন ও সম্ভাবনা দেখছেন। এখান থেকে মাসিক ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব বলে তিনি ধারণা করছেন। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনি সমস্যা পড়েননি। পড়লে কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগীতা নিবেন। বংপুর এলাকার সড়কের পাশে হওয়ায পলিনেট হাউজ দেখতে অনেকের কৌতুহল জাগে। অনেকে দাড়িয়ে দেখে,কেউ ছবি তোলে। কেউ আবার বীজ কিনতে দেখা গেছে।সংশ্লিষ্ট ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোমিনুল ইসলাম বলেন পলিনেট হাউস রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ শাকসবজি উৎপাদন ও উন্নতমানের চারা তৈরি করা হয়। অতিবৃষ্টি, খরা,শীতে যেসব ফসল মাঠে চাষ করতে পারে না, ওইসব ফসল এখানে করা সম্ভব। টমোটো তাদের ভাল হয়েছে। পলিনেট হাউজে বিভিন্ন ধরনের বীজ তৈরি করে বিক্রি শুরু করেছেন। ওই এলাকার ইউপি সদস্য খলিলুর রহমান বলেন এরকম একটি প্রকল্প আমার এলাকায় হওয়ায় এলাকার কৃষকরা উপকৃত হবে এবং আমরা অল্প দামে টমেটো খেতে পাবো তারাও টমেটো সহ অন্যান্য সবজি ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতে পারবে এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেন, গোমস্তাপুরের কৃষিতে পলিনেট হাউজ আধুনিক প্রযুক্তির নতুন সংযোজন। প্রত্যাশা করছি,এটির মাধ্যমে কৃষি আরও এগিয়ে যাবে এবং নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা অনুপ্রাণিত হবে।