ঢাকা, শুক্রবার ৩ মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামে বেপোরোয়া আন্তঃজেলা ডাকাত দল ও চাঁদাবাজরা

কাজী হুমায়ুন কবির : | প্রকাশের সময় : রবিবার ১৭ মার্চ ২০২৪ ১০:৪০:০০ অপরাহ্ন | চট্টগ্রাম প্রতিদিন
  • প্রশাসন ম্যানেজ হওয়া তাদের ভরসা
  • রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগীতা তাদের ভরসা

চট্টগ্রামের উপজেলা ও মহানগরে সক্রিয় হয়ে উঠছে আন্ত:জেলা ডাকাত দল। সেইসাথে নগরীতে হকার, ভাসমান চোরাই তেলের দোকান, অটো রিকসা, গ্রাম সিএনজি, ব্যাটারী চালিত রিকসা, ম্যাক্সিমা, টুকটুকি, ট্যাম্পু ষ্ট্যা›ড,  অবৈধ গড়ে উঠা ট্রাক ও টেম্পু ষ্ট্যান্ড দিয়ে প্রতিদিনই শক্তিশালী হচ্ছে একটি চাঁদাবাজ চক্র। নগরের এমন কোন সড়ক নেই যেখানে বলা যাবে চাঁদাবাজী হচ্ছেনা। কোন না কোন সংগঠনের ব্যানারে, বা ব্যাক্তি বা রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা দেখিয়ে চাঁদাবাজী করছে একটি চাঁদাবাজচক্র। নগর জুড়ে চাঁদাবাজদের দৈৗড়াত্ন এবং আস্ফালন দেখলে মনে হয় তারা যেন দেশের অঘোষিত ভয়ংকর রাজা। প্রশ্ন করলেই উল্টো নিজেকে অপরাধী মনে হয়। তাদের বক্তব্য নিতে গেলে তারা বলে, প্রশাসন আমাদের ম্যানেজে আছে, তারা ছাড়া রাজনৈতিক অমুক ভাই আমাদের নেতা তাই আপনারা নিউজ করে কি করবেন। নিউজ দিয়ে কিছুই করতে পারবেন না। ব্যাটারী চালিত রিকসা ও গ্রাম সিএনজি ড্রাইভাররা চাঁদাবাজদের থেকে টোকেন না নিলেতো তাদের গাড়ি চালানোর রাস্তাই পাবেনা। চলবেনা কোন গ্রাম সিএনজি , চলবেনা ব্যাটারী চালিত রিকসা। কর্পোরেশনের অলিগলি ও সড়ক রাস্তা তাদের সম্পত্তি। টোকেন না দেখালে এই সব রুটে চলবেনা কোন গাড়ি। প্রতিটি রুটে রয়েছে তাদের লাইন ম্যান। চাঁদাবাজীর পাশাপাশি ইদানিং বাড়ছে আন্ত জেলা ডাকাত দল। যারা ক্ষুদ্র ও মাঝারী ব্যবসায়ীদের থেকে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে। সেই সাথে মহাসড়কেও ঘটছে ডাকাতির  ঘটনা । ডাকাতদের চাহিদা মোতাবেক চাঁদার টাকা না দিলে তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেয়, অথবা জীবন নাশের হুমকি দেয়। জানা যায়, চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড, মিরস্বরাই, সিটিগেইট নগরেরর আরেফিন নগর, টেক্সটাইল, বায়েজিদ বোস্তামী টেকনিক্যাল এলাকায় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের কয়েকটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে। 

সুত্রে জানা যায, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে পৌরসদরের শেখপাড়া এলাকায় সীতাকুন্ড প্রেস ক্লাবের সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক শেখ সালাউদ্দিনের বাড়িতে ডাকাত দল হানা দেয়। তিনি বলেন, ১০-১২ জন মুখোশ পড়া অস্ত্রধারী ডাকাত পরিবারের সবাইকে দড়ি দিয়ে বেঁধে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। এ সময় বাধা দেওয়ায় আমার মেয়ের জামাই ও তার ভাইকে ছুরিকাঘাত করে ডাকাতরা। .আমাদের নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকা ও ৭ ভরি স্বর্ণ লুট হয়েছে। গত ৩০শে ডিসেম্বর ২০২৩ইং শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার মধ্যম শাকপুরা এলাকায় শাহ আমানত ভবনে  পুলিশ পরিচয়ে ঘরে ঢুকে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে গেছে ডাকাত দল। স্থানীয় ইউপি সদস্য পরিমল দাশ জানান, পুলিশ পরিচয় দিয়ে শাহ আমানত ভবনের সাতটি ঘরে ডাকাতদল সাত পরিবারের সদস্যদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১৬টি মোবাইল, ৬ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ ২০ হাজার টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ভবনের মালিক মো. সাবের। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে বোয়ালখালী থানা পুলিশ। তাছাড়া গত শুক্রবার মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে উপজেলার বড়দারোগাহাট এলাকা থেকে ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।

কয়েকজন ভক্তভোগীর ভাস্যমতে, নগরীর কয়েকটি এলাকা ছিন্নমুলের গেইটে মুখের চা দোকানদার আলম  ও জামালের কাছে ১০হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে, পরে আলোচনা মধ্যমে সুরাহা হয় বলে জানান জামাল। সেই সাথে মাঝের ঘোনা এলাকার খালেকের কাছে ৬০হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে, সে দিতে অস্বিকৃতি করলে তার বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। এ বিষয়ে আব্দুল খালেককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখন সমাধান হয়ে গেছে। লিংক রোডের আরেফিনের আগে ওয়াসার বিপরীতে আল বারাকা হাইচ ভবনের নিচে খাদ্যগুদামের শ্রমিক সাপ্লাইয়ার কফিল উদ্দিনের কাছে চাদা দাবী করে গ্রুপটি । সে দিতে না পারায় তাকে মারদৌড় করে সেখান থেকে বের করে দেয় । কফিলকে এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে সে মারধোরের কথা স্বিকার করে বলে এখন  ঠিকাদারী কাজটি আমার পরিবর্তে নগর ও ছাত্রনেতা মহিউদ্দিনের দখলে। সে আরো বলেন, প্রাণনাশের হুমকি থাকায় আমি এখন শহর ছেড়ে গ্রামে চলে এসেছি। ড্রিমল্যান্ডের তালহা কয়েক মাস  আগে ভবন নির্মানের জন্য ইট বালূ সিমেন্ট নিতে গেলে তার কাছ থেকে গ্রুপটি ৫০হাজার টাকা দাবী করে। এ বিষয়ে তালহা বলেন, আমি এখন ঢাকা থাকি। আর এই বিষয়গুলো অনেক আগেই সমাধান হয়ে গেছে। এসব নিয়ে আমি এখন আর কথা বলতে চাইনা। এই ভাবে চলছে নিরব চাঁদাবাজী। জানতে চাইলে ভোক্তভোগী কফিল বলেন, আমি নির্যাতিত হয়েছি, আমার ব্যবসা ছেড়েছি। কারন এসবের পিছনে রয়েছে মনা গ্রুপ। মনা আমাকে মারধর করেছে। উল্টো আমার নামে মিথ্যা মামলা করেছে। এখন সব হারিয়ে আমি গ্রামে চলে এসেছি।  সে আরো বলে, মনার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা রয়েছে। অথচ তারাই এখন দাপটে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, শুধু ওসমান গনি মনা নয়, বায়েজিদের ফায়ার সার্ভিসের সামনে আরেক মনার ছেলে  মোহাম্মদ নুরুল আলম প্রকাশ নুরুা, ড্রিমল্যান্ড এলাকার সিরাজ, দোনির পাহাড় সাদ্দাম, ইস্রাহিম হাসান সামাদ হোসেন, পাবলিক স্কুলে এলাকার শাহিন,  সাইদুল ইসলাম, বাংলাবাজার ব্যাংক পাহাড় এলাকার জাহাঙ্গীর, আলমগীর, বাবু, আবুল হোসেন, শাহাদাত, রুবেল, মাইকেল হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা কলোনী পিস্তল বাশখালীর চোর বেলাল  তারা রাজনৈতিক পরিচয়ে টেকনিক্যাল, মুক্তিযোদ্ধা কলোনী, আরেফিন নগর, মাঝের ঘোনা, বায়েজীদ ও অক্সিজেন এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারসহ চাঁদাবাজীর নিজস্ব একটা অবস্থান তৈরী করেছে। এসব এলাকায় সুযোগ বুঝে তারা বিভিন্ন সজ্জন ব্যাক্তিদের থেকে চাঁদা চেয়ে হয়রানী করেন। কেউ দেন আবার কেউ দেন দরবার করে সমাধান করেন।  এ বিষয়ে ওসমান গণি মনাকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, আমি রাজনৈতিক ভাবে অনেক মামলা খেয়েছি। আসলে আমি নির্দোস । কিন্তু আমাকে জড়িয়ে অনেক কথা বলা হচ্ছে।          

সরে জমিনে আরো দেখা যায়, হকারদের যত্রতত্র দোকান বসিয়ে দেয়ার ঘটনাতো নগরীর সকল নাগরিকের চোখের উপরে। সড়কের ফুটপাত বা রাস্তা দখল করে তাদের দিয়ে এক শ্রেনীর চাঁদাবাজরা যেখানে সেখানে দোকান বসিয়ে দেন। মানুষের চলাচলে ভোগান্তি হলে বা যানজট বাড়লে বা সড়ক দখল হয়ে গেলে তাদের নেই কোন মাথা ব্যাথা । দিন শেষে তাদের থেকে চাঁদা পেলে আর কোন সমস্যা নাই। এই চাঁদার টাকা দিয়ে দলবাজী, সংসার চালানো সহজ । এরা চাঁদার টাকা নিয়ে অনেক দাপটের সাথে চলেন। জানা যায়, এই শ্রেনীরা কোন কাজ করেন না। তারা শুধু চাঁদা আদায় করেই সমাজের দন্ডমুন্ডের মাথা হয়ে যান।

নগরীর ২নং গেইট মেয়র গল্লির সামনে সড়ক দখল করেই বাজার, রেললাইনে কয়েকবার দুর্ঘটনা হলেও ব্যস্ততম রেললাইনের পাশে, গেইটঘর দখল, রেলের বেরিয়ার ফেলার উভয়পাশ দখল করে, কর্নফূলী মার্কেটের সামনের ফুটপাত দখল করে চলছে অবৈধ দোকানিদের দোকান। জানা যায় এসব হকারদের থেকে  প্রতিদিন লাইনের ১৫০ টাকা থেকে ২১০ টাকা তুলেন শরীফ মোল্লা। সেই সবাইকে ম্যানেজ করেন। এদের বসাকে পূজী করে চলছে চাঁদাবাজাী। মাঝে মাঝে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ এসে ইদুর দৌড় খেলে। সম্পূর্ন উচ্ছেদ হয়না তারা। পাশে শিক্ষামন্ত্রীর বাড়ী। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় আসলে ভ্যানগাড়ির হকারদের আধাঘন্টার জন্য পুলিশের ইদুর দৌড়ে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন, আবার পুনরায় দাপটের সাথে বসে যায়। এতে ফুটপাত ও সড়ক দখল করায় জনভোগান্তি ও যানজট সৃষ্টি হলেও নেই তাদের কোন তোয়াক্কা। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা মোল্লাকে টাকা দেই , সে এই টাকা দিয়ে কাদের ম্যানেজ করেন আমরা জানিনা। আমরাতো পেটের দায়ে দোকান বসাই। কিন্তু এই টাকা না দিলে আমাদের এখানে বসতে দিবেননা। এই ভাবে চলছে নগড়জুড়ে। বহদ্দারহাট, চকবাজার, জিইসিমোড়, বায়েজিদ, অক্সিজেন হয়নি এখনো হকার মুক্ত। সেইসাথে বাংলাবাজার এলাকায় বাংলাবাজারের মুলসড়কটি ভাসমান হকারদের দখলে, প্রতিদিনই একটি চক্র এখনো চাঁদাবাজী করে। যা প্রসাশনের কাছে ওপেন সিক্রেট। নগরে ব্যাটারীচালিত রিকসার চালকদেরকে চাঁদাবাজদের টোকেনে রুট পারমিট দিয়ে চলানো এখন সম্পুর্ন ্ওপেন সিক্রেট। ব্যাটারী চালিত রিকসা ড্রাইভাররা নগরের সড়কে না আসলেও অলিগলিতে তাদের দাপট অনেক। বায়েজিদে শামসু, টেকনিক্যালে জামাল, অক্সিজেন ও আতুরারডিপোতে এনাম, টাইগার পাশে সুমন, বাকলিয়ার দিকে মোফাজ্জল প্রতিদিন টোকেনের টাকা নেন।  প্রসাশনসহ কে না জানে এসব। গরিবদের চালানোকে পূজী করে চাঁদাবাজ চক্র গড়ে উঠলেও এসব চাঁদাবাজদের ব্যাপারে প্রশাসন কোন কঠোর পদক্ষেপ বা কার্যকরী পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা আরো বেপোরোয়া হয়ে উঠছে। যার ফলে নগরে কিশোরগ্যাংসহ একটি চাঁদাবাজ চক্র গড়ে উঠছে। এদের থেকে পরিত্রান না পেলে নগরে দিনের দিন আরো বিশৃংখলা বেড়ে যাবে বলে মনে করেন সজ্জন ব্যাক্তিরা।