ছবি ছাড়া শুধু ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ভোটারসহ জাতীয় পরিচয় পত্র করার জোরালো দাবি জানিয়েছেন মহিলা আনজুমান।
গত ১৬ বছর ধরে পর্দাশীল নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। এজন্য আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নাগরিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে মহিলা আনজুমান।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর নির্বাচন ভবনের সামনে পর্দানশীন নারীদের এনআইডি বঞ্চিত করে মানবাধিকার হরণের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করে মহিলা আনজুমান। সেই সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) একটি স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে দেওয়া স্মারকলিপিতে তিনটি দাবি জানিয়েছে মহিলা আনজুমান। এ সবাই দাবির মধ্যে রয়েছে, বিগত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের মানবাধিকার হরণ করা ইসি কর্মকর্তাদের বিচার করা হোক; পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসীর অধিকার অক্ষুন্ন রেখেই এনআইডি প্রদান করা হোক; পর্দানশীন নারীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়ায় মহিলা অফিস সহকারী বাধ্যতামূলক করা হোক।
মুসলমানদের মানবাধিকার থাকতে নেই মহিলা আনজুমানের আহ্বায়ক শারমিন ইয়াসমিন বলেন,
গত ১৬ বছর যাবত ইসির কতিপয় স্বৈরাচারী কর্মকর্তা শুধুমাত্র মুখস্থবির অজুহাতে পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব আটকে রেখেছে, যা এক প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ। এতে পর্দানশীন নারীরা মৌলিক ও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে নিদারুণ কষ্ট করছেন। যে বা যারা গত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের মানবাধিকার হরণ করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই। মহিলা আনজুমানের সদস্যরা তাদের ধর্মীয় অধিকার এবং প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুন্ন রেখে এনআইডি'র দাবি জানান এবং আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দাবি না মানলে দেশব্যাপি ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাঠে নামবে বলেও হুঁশিয়ারী দেন।
একজন নারী ছবি তুললে ২টি গুনাহ হয় এমন হাদিস তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি ছবি তোলার গুনাহ, অন্যটি বেপর্দা হওয়ার গুনাহ। আমরা পর্দানশীন নারীরা সেই গুনাহ থেকে বাঁচতে চাই। ইসি কর্মকর্তারা আমাদের নাগরিকত্ব আটকে রেখে সে গুনাহ করতে বাধ্য করতে পারে না। আমি আমার চেহারা কাউকে দেখাবো না, এটা আমার গোপনীয়তা বা প্রাইভেসীর অধিকার। অর্থাৎ পর্দানশীন নারীদের আজকের এই দাবি শুধু ধর্মীয় অধিকারের মধ্যে পরে না, প্রাইভেসীর অধিকারের মধ্যেও পরে। ফলে দুই দিক থেকেই পর্দানশীন নারীদের দাবি মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
এনআইডি ছাড়া পর্দানশীন নারীরা মৌলিক ও নাগরিক অধিকার হারিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, অনেক পর্দানশীন নারী অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। কিন্তু এনআইডি ছাড়া ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলে তিনি চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারতেন। অনেক পর্দানশীন নারীর দুর্ঘটনায় বাড়িঘর আগুনে পুড়ে গেছে। এনআইডির ছাড়া ত্রাণ নিতে পারছেন না। অনেক বিধবা বা তালাকপ্রাপ্তা পর্দানশীন নারী এনআইডির অভাবে বাসাভাড়া করতে পারছেন না। বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। পর্দার সাথে কোন চাকুরি করে জীবন নির্বাহ করতে পারছেন না। গত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীন নারীদের সাবেক ইসি কর্মকর্তারা যে কষ্ট দিয়েছে, তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিলো বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা শারমিন ইয়াসমিন বলেন, গত ১৬ বছর শুধুমাত্র পরিপূর্ণ পর্দা করার কারণে নারীদের সাথে যে বৈষম্য হয়েছে, আমরা এ বৈষম্যের পরিসমাপ্তি চাই। অবিলম্বে পর্দানশীন নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসীর অধিকার অক্ষুন্ন রেখে এনআইডি দেওয়া হোক। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এবং ২০২৩-এ পরিচয় সনাক্তে চেহারার ছবির কথা উল্লেখ নেই। এমনকি বায়োমেট্রিক যাচাইয়ে ফেসিয়াল রিকগনিশনকেও বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কিন্তু তারপরও স্বৈরাচারি মনোভাব থেকেই পর্দানশীন নারীদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করে রেখেছিলো সাবেক ইসি কর্মকর্তারা।