সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণার দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহাখালী-গুলশান সংযোগ সড়ক অবরোধ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এতে বন্ধ হয়ে গেছে ওই রোডের দুই পাশের যান চলাচল, সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী বাঁশ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, কলেজের প্রধান ফটকের সামনে টানা ছয় দিন ধরে অনশনরত ছয় শিক্ষার্থীর সামনে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে তারা বিভিন্ন স্লোগান তুললেও ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে। অবরোধ চলাকালে শুধুমাত্র অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহী গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। তবে অন্য কোনো যানবাহন চলতে দেওয়া হবে না। তারা আরও জানান, "প্রাথমিকভাবে গুলশান লিংক রোড অবরোধ করা হয়েছে, পরবর্তীতে প্রয়োজনে আরও সড়ক অবরোধ করা হবে।"
এর আগে রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টায় আন্দোলনকারীরা আজকের অবরোধের ঘোষণা দেন। তারা জানান, মহাখালী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, রেলগেট, আমতলী মোড় ও গুলশান লিংক রোডে সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টানা অবরোধ চলবে।
"রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে"- তিতুমীর ঐক্যের উপদেষ্টা
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের সংগঠন "তিতুমীর ঐক্য"র উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান মুক্তার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "রাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে দ্বিচারিতা করছে। আমরা গতকালই আজকের অবরোধের ঘোষণা দিয়েছিলাম। তবে বিশ্ব এজতেমার কারণে তা শিথিল করেছিলাম। কিন্তু দাবি উপেক্ষিত হওয়ায় আগামীকাল সকাল ১১টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ফের অবরোধ ঘোষণা করছি।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা একটি শিক্ষার্থীবান্ধব রাষ্ট্রের প্রত্যাশা করেছিলাম, যেখানে শিক্ষার্থীদের কথা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। আমাদের আন্দোলনের কারণে অনেকেই বিরক্ত হয়েছেন, আমরা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করছি। কিন্তু আমরা বাধ্য হয়েই রাস্তায় নেমেছি।"
শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিন দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে:
১. সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করে একাডেমিক ক্যালেন্ডার প্রকাশ করতে হবে।
২. শিক্ষা উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাহার করে তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং যোগ্যতা বিবেচনায় নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।
তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আইন উপদেষ্টার চাপ প্রয়োগের ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। মিছিল, সড়ক ও রেল অবরোধ, স্মারকলিপি প্রদান, ক্লাস বর্জনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তারা দাবি জানিয়ে আসছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি বিশেষ কমিটি গঠন করলেও এ পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
ফলে গত ২৯ জানুয়ারি থেকে শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনসহ আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণের ঘোষণা দেন। এখন পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর সিদ্ধান্ত না আসায় শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
বায়ান্ন/এএস/পিএইচ